ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লিবিয়ায় নিহত রূপগঞ্জের শিহাব ও মামুনের বাড়িতে শোকের মাতম

পরিবারের দাবী নিহত দুইজনের মরদেহ যেন তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়

পরিবারের দাবী নিহত দুইজনের মরদেহ যেন তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়

গত ১০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ায় দারনা শহরে সাইক্লোন ড্যানিয়েল আঘাতে ৬ বাংলাদেশী নিহত হবার খবর দিয়েছে ত্রিপলী দুতাবাস। এদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের শিহাব ও মামুন রয়েছে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তারা। এদিকে নিহতের খবর তাদের পরিবারের লোকজন জানতে পেরে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাদেরকে হারিয়ে শোকে স্তব্দ পরিবার সহ আশেপাশের লোকজন।

নিহতের পরিবারের দাবী অন্তত নিহত দুইজনের লাশ যেন সরকারের সহযোগীতায় তারা তাদের কাছে ফেরত পান। সরেজমিনে ঘুরে জানাযায়, ২ বছর ধরে জীবিকার তাগিদে লিবিয়া বসবাস করছেন রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার কেরাবো গ্রামের মৃত কবির হোসেনের ছেলে সাহাবুদ্দিন।

তবে সবাই তাকে ডাকেন শিহাব নামে। গত ১০ সেপ্টেম্বর রাত ৯ টারদিকে শিহাবের সাথে সর্বশেষ কথা হয় তার স্ত্রী মাকসুদা আক্তারের সাথে। তখন সেখানে ঝড় শুরু হয়েছে সেজন্য দোয়াও চেয়েছেন সে। এরপর থেকে আর যোগাযোগ হয়নি তার সাথে। পরে মঙ্গলবার লিবিয়া প্রবাসী শাহাবুদ্দিন শিহাবের পরিবার তার নিখোঁজের সংবাদ প্রথম জানতে পারে গণমাধ্যমের মাধ্যমে। তারপর থেকেই হাজারে বার চেষ্টে চালায় যোগাযোগের। কিন্তু শেষ যোগাযোগ হয়ে উঠেনি আর। এরপর থেকে পরিবারটি শোকের অথৈ সাগরে ভাসছে। স্ত্রী মাকসুদার আর্ত চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার। চোখের কোণে বিন্দুকণার মতো জমানো পানি দেখে হয়তো কেউ বুঝতেই পারবে না কয় ফোটা রক্তে এক ফোটা চোখের পানি হয়।

নিহত শিহাবের পরিবার জানান, সংসারে আরেকটু স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ধার দেনা করে লিবিয়া পারি জমান শিহাব। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর দারনায় একটি ব্যাংকে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। আর সে কাজের সমাপ্তি ঘটে ১০ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ ঝড়ে।

শিহাবের বিধবা মাজেদা বেগমের শেষ আকুতি যেনো প্রিয় সন্তানের মৃতদেহটি খুঁজে সরকারি উদ্যোগে তাদের মাঝে ফিরিয়ে আনা হয়। আর এলাকাবাসীর দাবি শিহাবের একমাত্র এতিম ছেলে জোনায়েত ও বিধবা স্ত্রী মাকসুদা যেনো সরকারি আর্থিক অনুদান থেকে বঞ্চিত না হয়। অপরদিকে নিহত শিহাবের বাড়ির থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে

একই থানাধীন ভোলাবো ইউনিয়নের পুবেরগাওঁ গ্রামের মামুনদের বাড়ি। কয়েকবছর আগে পিতা তমিজউদ্দিন মারা যাবার পর বিধবা মায়ের দেখভালের দায় ভরে সন্তানদের কাধে। সে ও দারিদ্রতার চাকা ঘুরানোর রঙ্গীর স্বপ্ন দিয়ে ৪ বছর আগে পারি জমান লিবিয়ায়। লিবিয়ার দারনায় শিহাবের সাথে একই ভবনের তিনতলায় বসবাস করতেন । কাজ করতেন একটি গ্লোসারি শপে। সর্বেশষ ঝড়ের দিন রাতে মাকে ফোন করে জানায় " মা প্রচন্ড ঝড় তুফান হচ্ছে। কথা ভালো বুঝতে পারনি না, নেটওয়ার্ক প্রবলেম। খুব খিচুরি খেতে ইচ্ছে করছে আমার"। সে খিচুরি আর খাওয়া হয়েছিল কিনা জানেন না তার বিধবা মা। তাকে হারানোর শোকে মাতম উঠেছে পরিবারটিতে। গ্রামজুড়ে চলছে শোকের পরিবেশ।

মা ভাই বোন আর পরিবারের দাবি যে কোন কিছুর বিনিময়ে যেনো লাশটি অন্তত হাতে পান তারা। স্থানীয়রা জানান, লিবিয়ায় নিহত শিহাবের অবুঝ ছেলে সন্তান রয়েছে। আর মামুন অবিবাহিত হলেও অনেক বড় পরিবারের দায়ভার তার কাধে। রূপগঞ্জ উপজেলার পাশাপাশি দুটি গ্রামের দুটি ছেলের এমন নির্মম মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক মুঠোফোনে বলেন, লিবিয়ায় নিহত এই দুই যুবকের পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তার সহায়তার জন্য লিখিতভাবে আবেদন করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করবো। পাশাপাশি পরিবারগুলো যেন সরকারি আর্থিক সহায়তা পায় সে ব্যাপারেও চেষ্টা করবেন তারা।

মরদেহ,নিহত,দাবী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত