এবার ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায় বেলজিয়ামও
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলাকে অমানবিক আখ্যা দিয়ে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে বেলজিয়াম। এর আগে এমন দাবি জানিয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন।
বুধবার বেলজিয়ামের উপপ্রধানমন্ত্রী পেত্রা দে সাতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে এই আহ্বান জানান।
পেত্রা দে সাতার বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এখনই উপযুক্ত সময়। তারা যে বোমাবাজি করছে, তা অমানবিক। গাজায় যুদ্ধাপরাধের পাশাপাশি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানকেও উপেক্ষা করছে।’
পরে এক বিবৃতিতে বেলজিয়ান এই রাজনীতিবিদ অবিলম্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইসরায়েলের মধ্যে যত সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে তা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বেলজিয়াম সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে অতিরিক্ত তহবিল জোগানোর আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে নিরপেক্ষভাবে ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করা সম্ভব হয়।
বেলজিয়ামের এই নেতা এ সময় জোর দিয়ে বলেন, যারা হামাসকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে, তাদেরও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা উচিত। আর যেসব সহিংস ইসরায়েলি সেটেলার, রাজনীতিবিদ, সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন, তাঁদেরও ইউরোপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত।
দে সাতার বলেন, ‘ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান বোমা হামলা ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্তভাবে হতাশ করেছে। একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান ছাড়া এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে। আর এ কারণেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এমন রাজনৈতিক সমাধান সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ এর আগে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্দর দে ক্রোও গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছিলেন।
এর আগে ইসরায়েল গাজায় পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে স্পেন। গাজায় পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছে স্পেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপের এ দেশটি।
স্পেনের সামাজিক অধিকার বিষয়ক মন্ত্রী ইয়ন বেলারা বিশ্ব নেতাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতির নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্বনেতারা ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের ব্যাপারে বধির নিরাবতা অবলম্বন করেছে।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের এ পরিকল্পিত গণহত্যা অবশ্যই শেষ করতে হবে। কেন আমরা অন্যান্য সংঘাতে মানবাধিকারের পাঠ দেব আর এখানে কেবল বিশ্ব নৃশংসতা দেখে যাবে। এখানে হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। তাদের মায়েরা এসব হত্যার দৃশ্য দেখে চিৎকার করছে।
গাজায় গণহত্যা নিয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেন, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সম্প্রদায়ের ওপর হামাস যে হামলা করেছে তা ভয়াবহ। তবে এখন ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাযেল যা করছে তা-ও অসহনীয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১০ হাজার ৫১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪ হাজার ৩২৪ জনই শিশু। নিহতের মধ্যে নারীর সংখ্যা ২ হাজার ৮২৩ জন। এ ছাড়া ৬৪৯ জন বয়স্ক ফিলিস্তিনিও রয়েছেন নিহতদের তালিকায়। ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন ২৬ হাজারেরও বেশি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার বাইরে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে নিহত হয়েছে আরও অন্তত ১৬৩ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে আরও ২ হাজার ৪০০ জন। গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর এখনো অন্তত ২ হাজার ৫৫০ জন নিখোঁজ রয়েছে। এদের মধ্যে আবার ১ হাজার ৩৫০ জনই শিশু।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মনে করেন, গাজায় নিহত মানুষের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাই বলে দিচ্ছে, সেখানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের স্পষ্ট কিছু ভুল রয়েছে।