তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ
বিক্ষোভে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ, চাপে রাজনৈতিক দলগুলো
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১৩:২৫ | অনলাইন সংস্করণ
তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের ফাঁসি চেয়ে শুক্রবার মিছিল করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। আবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের ওই ঘটনায় মমতার পদত্যাগ চেয়ে মিছিল করেছে বিজেপি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যটিতে শুক্রবার মিছিল, পাল্টা-মিছিল, বনধ একইসঙ্গে সব চলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে কেন একইসঙ্গে এতগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচীতে নেমে পড়ল ক্ষমতাসীন-বিরোধী সব দলগুলোই?
একাধিক বিশ্লেষকের মতে, গত বুধবার আর বৃহস্পতিবারের মাঝ রাতে দেশটিতে লাখ লাখ নারী-পুরুষ রাস্তা দখল করে নিয়েছিলেন। জনতার সেই স্বতঃ:স্ফূর্ত প্রতিবাদ দেখেই রাজনৈতিক দলগুলো রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে।
তারা বলছেন, ওই রাতের রাস্তা দখল সবগুলো রাজনৈতিক দলকেই একটা বার্তা দিয়েছে যে নারী নিরাপত্তার ব্যবস্থা বা দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থার দাবি নিয়ে দলগুলো যদি শুধু রাজনীতিই করে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষ পথে তো নামবেই।
আর সেই রাতের ‘জনসমুদ্র’ দেখে শুক্রবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোও রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক দলগুলো যখন রাস্তায় নেমেছে শুক্রবার, তার মধ্যেই আরজি কর মেডিকেল কলেজ সহ রাজ্যের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়ার ডাক্তাররা কর্মবিরতি চালাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রেসিডেন্ট ডাক্তাররাও কাজ করছেন না। ভারতে চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন শনিবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ধর্মঘট ডেকেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী গত সোমবার আরজি কর মেডিকেল কলেজে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে তার সরকার ঘটনায় ধৃতের দ্রুত বিচার চায়, এবং তারা ফাঁসির দাবি জানাবে আদালতে।
পরের দিনই অবশ্য কলকাতা হাইকোর্ট কলকাতা পুলিশের তদন্তের ওপরে ভরসা না রেখে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোকে ওই চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়। এরই পরে বুধবার রাত থেকে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বহু জায়গায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামতে শুরু করেন। দুটো স্লোগান ছিল তাদের মুখে, ‘বিচার চাই’ আর ‘রাতের রাস্তা দখল করো’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আগেই বিচার এবং ফাঁসির দাবি তুলে থাকলেও ওই রাতের রাস্তা দখল কর্মসূচির পরে, বৃহস্পতিবার তার দল চার দিনের এক কর্মসূচি ঘোষণা করে। সেই অনুযায়ীই শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের সহকর্মীদের নিয়ে ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন মমতা ব্যানার্জী।
মিছিলের শেষে মমতা বলেন যে ‘‘ডিউটিতে যারা থাকেন, প্রতি ঘণ্টায় রোগী কেমন রয়েছেন, দেখতে হয়। ডাক্তারদেরও অনেক কষ্ট করে কাজ করতে হয়। পুলিশের মতো। এটা নিয়ে রাজনীতি করতে নামলেন বলে আমাদের নামতে হলো।’’
শুক্রবার সকাল থেকে আরজি কর মেডিকেল কলেজের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিরুদ্ধে ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছিল এসইউসিআই দলটি। তাদের ক্যাডাররা অনেক জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছেন।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি আবার শুক্রবার কলকাতায় ধর্না-অবস্থান, জেলায় জেলায় রাস্তা অবরোধ আর দুপুরে দু ঘণ্টার জন্য ‘সামাজিক কর্মবিরতি’র ডাক দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশ্যে এক মশাল মিছিলও করার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে।
তবে মিছিল শুরুর আগেই পুলিশ বিজেপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ায় সেই মিছিল আর হয়নি। এর আগে কলকাতার শ্যামবাজারে বিজেপির ধর্না অবস্থান মঞ্চ পুলিশ ভেঙ্গে দিয়েছিল। সেখান থেকেও বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্যদিকে বামদলগুলোও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বলেছে, ‘দফা এক, দাবি এক, মমতা ব্যানার্জীর পদত্যাগ’। এর আগের বহুল আলোচিত গণধর্ষণ ও হত্যার মামলাগুলোতে মমতা ব্যানার্জী ‘ছোট ঘটনা’, ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’র মতো আর কী কী মন্তব্য করেছিলেন, সেগুলোও তুলে ধরছে বামদলগুলো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্যের কথায়, সাধারণ মানুষ একটা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে ইনাফ ইজ ইনাফ, তোমরা যদি নারী নিরাপত্তার ইস্যুতে শুধুই রাজনীতিই করে যাও, তাহলে আমাদের ব্যবস্থা আমরাই করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখি।
কলকাতার একজন পেশাজীবি ও সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় নারী সুজাতা ঘোষ বলছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো শুক্রবার পথে নামছে, কেউ ফাঁসি চাইছেন, কেউ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইতে তার বাড়ির দিকে মিছিল করছেন, কেউ বনধ ডাকছেন।
“অথচ বুধবারের আগে, অর্থাৎ ওই মাঝ রাতের জনসমুদ্র দেখার আগে কিন্তু এইসব রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো আমরা দেখতে পাইনি। মাঝরাতের ওই লাখো মানুষের ভিড় দেখে এখন দলগুলোর মনে হচ্ছে স্বতঃ:স্ফূর্তভাবে মানুষ যখন নেমে গেছে, আমরা যদি এখন না নামি তাহলে দলীয় সমর্থকরা প্রশ্ন তুলবে, তাই এখন তারা মাঠে নেমেছে,” বলছিলেন সুজাতা ঘোষ। তথ্যসূত্র: বিবিসি