পবিত্র জুমার বিরল এক খুতবায় বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেন, ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অস্তিত্ব কৃত্রিম, এটা বেশি দিন টিকবে না। ইসরায়েল পুরোপুরি আমেরিকার সহায়তায় নিজের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে। ইসরায়েলি বর্বর হামলা সত্ত্বেও হিজবুল্লাহ ও হামাস পিছু হটবে না।
শুক্রবার ইরানের রাজধানী তেহরানের ইমাম খোমেনি গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে জুমার খুতবায় এ আহ্বান জানান খামেনি। প্রায় পাঁচ বছর পর জুমার খুতবা দিলেন তিনি। ইসরায়েল সরকারকে রক্তচোষা শাসকগোষ্ঠী এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এ অঞ্চলে ‘পাগলা কুকুর’ বলেও অভিহিত করেন খামেনি।
সম্প্রতি ইসরায়েলে ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তার প্রশংসা করে খামেনি বলেন, ‘কয়েক রাত আগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর অভিযান (ইসরায়েলে) ছিল সম্পূর্ণ আইনসম্মত ও বৈধ। ইসরায়েলের অপরাধের ন্যূনতম শাস্তি এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।’
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এই হামলাকেও যৌক্তিক ও আইনসম্মত বলে অভিহিত করেন খামেনি। তিনি বলেন, এমন কোনো একক আদালত বা আন্তর্জাতিক সংস্থা নেই, ফিলিস্তিনি জনগণকে শুধু তাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য দোষারোপ করতে পারে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, হিজবুল্লাহ ও হামাসের গুরুতর ক্ষতি ইসরায়েল করতে পারবে না। লেবাননের শিয়াপন্থি রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর লড়াই পুরো অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেবা বলে মন্তব্য করেন খামেনি। তিনি বলেন, প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর নেতাদের ইসরায়েল হত্যা করলেও ইরানের এই মিত্ররা পিছু হটবে না।
তিনি বলেন, ‘এই শাহাদাতের জেরে এ অঞ্চলের প্রতিরোধ পিছু হটবে না এবং জয়ী হবে।’ আরব জনগণের উদ্দেশে আরবি ভাষায় এ খুতবায় তিনি বলেন, ইরান, ফিলিস্তিন, লেবানন, মিসর, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনের ‘শত্রু অভিন্ন’।
আঞ্চলিক যুদ্ধের যে আশঙ্কা, তাকে বাস্তব বলে মনে করছেন খামেনি। তবে তিনি বলেন, ইসরায়েল প্রশ্নে ইরান কোনো কিছুতেই ‘দ্বিধা’ করবে না বা ‘দীর্ঘসূত্রতা’ করবে না।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) কমান্ডার আব্বাস নিলফরোউশান এবং তেহরানে গত জুলাইয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যার বদলা নিতে ইসরায়েলে ইরানের প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তিন দিন পর খামেনি এই খুতবা দিলেন।
খুতবায় হাসান নাসরাল্লাহর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। বলেন, আমাদের মাঝে হাসান নাসরাল্লাহর শরীরী উপস্থিতি না থাকলেও তাঁর পথ ও বক্তব্য আমাদের সঙ্গে থাকবে। তিনি ছিলেন অত্যাচারী দানবদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ঝান্ডা। তিনি ছিলেন নির্যাতিত মানুষদের সাহসী কণ্ঠ ও সমর্থক। সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ সত্যসন্ধানী ও সত্যপথের সংগ্রামীদের উৎসাহ ও সাহসের উৎস ছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের পরিধি লেবানন, ইরান ও আরব দেশগুলোর গণ্ডিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই মহান ব্যক্তির শাহাদাত তাঁর প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইসলামী জিহাদের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোর বড় কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম নয় বলেই নিকৃষ্ট ও অসভ্য শত্রু দখলদার ইসরায়েল বেসামরিক মানুষ হত্যাকে নিজের বিজয়ের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করছে।
খামেনি সর্বশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে জুমার নামাজে ইমামতি করেছিলেন। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন। বদলা হিসেবে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। এ ঘটনার পর খামেনি জুমার নামাজে ইমামতি করেছিলেন।