সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সর্বশেষ জনসমক্ষে দেখা দিয়েছিলেন গত রোববার (১ ডিসেম্বর)। সে সময় তিনি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এর পর থেকে তিনি আর প্রকাশ্যে আসেননি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আসাদ প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং সিরিয়া ছেড়েছেন। তবে তাঁর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
এর আগে আজ রোববার সকালে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম তাদের মিত্ররা দামেস্ক দখলের ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে, ‘অত্যাচারী বাশার আল-আসাদ পালিয়ে গেছেন।’
সিরিয়ার মানবাধিক পর্যবেক্ষক সংস্থার (এসওএইচআর) প্রধান রামি আবদুল রহমান বলেছেন, ‘আসাদকে বহনকারী একটি বিমান দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দিয়েছে।’
রামির তথ্যমতে, বিমানটি শনিবার রাত ১০টায় (স্থানীয় সময়) ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। রোববার বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে বিমানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা ‘ফ্লাইটরাডার ২৪’ ওয়েবসাইটে ওই সময় কোনো উড্ডয়নের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ‘এ ৩২০’ মডেলের শাম উইংস এয়ারলাইনসের একটি এয়ারবাস সিরিয়ার সময় অনুযায়ী শনিবার রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে দামেস্ক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহর উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। বিমানটি যথাসময়ে শারজাহতে পৌঁছালেও আমিরাতের প্রেসিডেন্টের একজন কূটনৈতিক উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আসাদ আমিরাতে আছেন কি না, সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই।’
এদিকে সিরিয়ার দুটি সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ রোববার ভোরে দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে সিরিয়ান এয়ারের একটি বিমানে চড়েছিলেন। ‘ইলিউশন আইএল ৭৬-টি’ নামে একটি কার্গো বিমানে করেই স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৫৯ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে অজানা গন্তব্যে উড়ে গেছে।
ফ্লাইটরাডার ২৪-এর অনুযায়ী, ওই বিমানটি প্রথমে দামেস্ক থেকে পূর্বদিকে উড়ে গিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে ভূমধ্যসাগরের উপকূলের দিকে যায়। এ সময় বিমানটি মাটি থেকে ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থান করছিল। পরে এটি হঠাৎ পূর্ব দিকে ঘুরে উচ্চতা কমাতে থাকে এবং সিরিয়ার হোমস শহরের দিকে উড়ে যায়। হোমস থেকে ১৩ কিলোমিটার পশ্চিমে বিমানটি মাটি থেকে ১ হাজার ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ছিল। কিন্তু এই সময়ই বিমানটির সংকেত পাঠানোর সিস্টেম (ট্রান্সপন্ডার) থেমে যায়।
ফ্লাইটরাডার ২৪ জানিয়েছে, বিমানটি পুরোনো ধরনের ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করছিল। এই কারণেও কিছু তথ্য অনুপস্থিত থাকতে পারে। বিমানটি এমন এলাকায় ছিল যেখানে জিপিএস জ্যামিং চলছে। তাই সঠিক ডেটা পাওয়া কঠিন। ওই এলাকায় কোনো বিমানবন্দর ছিল কি না, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে যে অঞ্চলটিতে বিমানটির ট্রান্সপন্ডার থেমে গিয়েছিল সেই এলাকায় কোনো বিমান দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময় রোববার সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বাশার আল-আসাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নয়। বিদ্রোহীরা এবং রাশিয়া উভয়েই তাঁর দেশত্যাগের কথা বললেও, তাঁর যাত্রাপথ ও গন্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।