সিরিয়ায় গঠিত হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

প্রারম্ভে প্রভূত প্রশ্নের উদয় হয়। প্রত্যাশা ও প্রতিবন্ধকতা একসাথে জেগে ওঠে। অটল আত্মবিশ্বাস যেমন থাকে, সঙ্গে উপেক্ষা করা যায় না এমন উদ্বেগও। সিরিয়া পড়েছে সেই দশায়। স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে। নতুন ভোরের দেখা পেয়েছে জনতা। এতদিনের যন্ত্রণাদায়ী রাষ্ট্রযন্ত্র ভেঙে পড়েছে, পালিয়ে গেছেন জোরজবরদস্ত গদি আঁকড়ে থাকা শাসক বাশার আল আসাদ। নতুন করে দেশকে সাজানো ও সামনে বাড়বার সুযোগ অবারিত হয়েছে। কিন্তু গদি নড়িয়ে দেওয়া আর গদিতে আসীন হয়ে দেশ চালনা এক জিনিস নয়। এখন সিরিয়া চালাবে কে, কীভাবে এই প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

মিডল ইস্ট আইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাশারবিরোধীদের জোটের প্রধান হাদি আল বাহরা বলেছেন, সিরিয়ায় এখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার প্রচেষ্টায় জোর দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ নির্বাচন দিতে এই সরকার কমপক্ষে ১৮ মাস সময় নেবে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত

এই সরকারই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে।

আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে গতকাল জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন, এ নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে। শিগগির হয়তো বিদ্রোহী নেতারা এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবেন। এর আগে বাশারের আমলের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল জালালি জানিয়েছেন, নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণের আগ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। তাকে সেই পর্যন্ত সময় দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করেছেন বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল জোলানি, যিনি বাশারের পলায়নের পর রাজধানী দামেস্কে সশরীরে উপস্থিত থেকে ‘বিজয়’ ঘোষণা করে বলেছেন, ‘সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখন আমাদের হাতেই।’

আল জোলানি হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) প্রধান নেতা। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়দার সঙ্গে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সম্পর্ক ছিল (এবং এখনও রয়েছে বলে অনেকের সন্দেহ)। ফলে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের মিত্ররা উদ্বেগে রয়েছে।

সিরিয়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার দেখতে চায় বলে জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান রাজধানী আঙ্কারায় রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, ‘আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতারা বিশেষ করে জাতিসংঘ সিরিয়ার জনগণের কথা শুনবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে তাদের সব রকম সহায়তা করবে।’

সিরিয়া ২০১১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। কিন্তু সম্প্রতি মাত্র ১২ দিনের ‘আচমকা ঝোড়ো হাওয়া’য় আল জোলানির নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বড় শহরগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রবিবার রাজধানী দামেস্ক পর্যন্ত পৌঁছে যায়। দীর্ঘ ২৪ বছর পর পতন হয় বাশার আল আসাদের শাসনের। তিনি পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। রবিবারই রাশিয়া জানায়, তিনি দামেস্ক থেকে মস্কোয় পৌঁছেছেন। তাকে রাশিয়া রাজনৈতিক আশ্রয় দিচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তাকে ব্যক্তিগতভাবে মানবিক কারণে এই আশ্রয় দিচ্ছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়। তবে, বিবিসির এক প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, বাশার রাশিয়াতেই আছেন কি না, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে আর কোনো তথ্য দেয়নি মস্কো।

বাশার আল আসাদের আগে তার বাবা হাফিজ আল আসাদ মৃত্যুর আগ অব্দি টানা প্রায় ৩০ বছর সিরিয়া শাসন করেন। বাশারকে গত দুই যুগে সহযোগিতা করেছে রাশিয়া ও ইরান। বাশারের পতনকে পুতিন ও রাশিয়ার জন্য ‘মর্যাদার প্রশ্ন’ বলে মন্তব্য করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। ইরানও বড় সংকটে পড়েছে, কারণ এরই মধ্যে দেশটির আঞ্চলিক প্রধান মিত্র ইসরায়েল দাবি করেছে, বাশারের পতনে তাদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। আবার বাশার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দিনেই সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনা ট্যাংক ঢুকে পড়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় আইএসের অনেক স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে। তবে, গতকাল তেহরান দাবি করেছে, সিরিয়ার এই নতুন অধ্যায়ের নেতৃত্ব দেওয়া বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইরান যোগাযোগ স্থাপন করেছে। দুই দেশের সম্পর্ক ভালোর রাখার স্বার্থে নতুন সরকারের সঙ্গে তারা কাজ করতে আগ্রহী।

বিবিসি ও আল জাজিরাসহ প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত একাধিক মতধর্মী বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা সিরিয়ার সামনের ঘোর সংকটগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। তারা একদিকে সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে জঙ্গিবাদের উত্থানের আশঙ্কা করছেন। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের মধ্যে মতের অমিলের কারণে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের অবসান আরও পিছিয়ে যেতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।