হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি: কি আছে চুক্তিতে?
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫১ | অনলাইন সংস্করণ
দীর্ঘ ৪৬০ দিন ধরে ভয়াবহ যুদ্ধ এবং গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস এবং ইসরায়েল। এ বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়েছে দুই পক্ষের মাঝে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কাতার, হামাস, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটি হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
চুক্তিতে কি থাকছে?
এই চুক্তির আওতায় একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এতে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের অবসান এবং বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে উভয়পক্ষের বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এছাড়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজ নিজ ঘরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের কারণে গাজার বেশিরভাগ বাড়ি আর বাসযোগ্য নেই।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ
> যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে ছয় সপ্তাহ।
> হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এদের মধ্যে থাকবে নারী, শিশু ও ৫০ বছর বয়সোর্ধ্ব বেসামরিক মানুষ।
> ইসরায়েল বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। এদের অনেকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্য থাকবেন ৭ অক্টোবরের পর আটক হওয়া প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনিও।
> ইসরায়েল গাজার জনবহুল এলাকা থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করে সীমান্তের ৭০০ মিটারের বেশি দূরে অবস্থান করবে। তবে নেটজারিম করিডরের নিয়ন্ত্রণ পরবর্তী পর্যায়ে ধাপে ধাপে হস্তান্তর হতে পারে।
> গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা ঘরে ফেরার অনুমতি পাবেন। পাশাপাশি, প্রতিদিন ৬০০টি পর্যন্ত ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারবে।
> রাফাহ সীমান্ত সাতদিনের মধ্যে খোলা হবে এবং আহত ফিলিস্তিনিরা চিকিৎসার জন্য গাজার বাইরে যেতে পারবেন।
> মিশর-গাজার মধ্যকার ফিলাডেলফি করিডোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ৫০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি সরে যাবে।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপ
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের বিস্তারিত প্রথম পর্যায়ে আলোচনা করা হবে। যদিও বিষয়গুলো নীতিগতভাবে সম্মত বলেই মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনা প্রথম পর্যায়ের ছয় সপ্তাহের সময়সীমা অতিক্রম করে গেলেও যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে।
> দ্বিতীয় ধাপে হামাস অবশিষ্ট জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েল আরও ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে এবং গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করবে।
> তৃতীয় ধাপে বাকি জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গাজার পুনর্গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।
ইসরায়েল বলেছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় সম্পন্ন হওয়ার পরে এবং বেসামরিক জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার পরেও তাদের আক্রমণ আবার শুরু করার সম্ভাবনা বাতিল করার জন্য কোনো লিখিত নিশ্চয়তা দেওয়া হবে না।
তবে, বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে উদ্ধৃত একটি মিশরীয় সূত্র অনুসারে, আলোচনায় জড়িত তিন মধ্যস্থতাকারী - মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে মৌখিক নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং তিন পক্ষই এমন একটি চুক্তির জন্য চাপ দেবে যাতে প্রাথমিক ছয় সপ্তাহের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ বাস্তবায়িত হয়।