সুইজারল্যান্ড সরকার বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া আলবেনিয়া এবং জাম্বিয়ার বিষয়েও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। সুইস সরকারের ফেডারেল কাউন্সিলের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সংসদের বাজেট কমানোর সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২৮ সালের শেষে বাংলাদেশ আর সুইস উন্নয়ন সহায়তার অগ্রাধিকারে থাকবে না।
গত সপ্তাহেই বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সুইজারল্যান্ডে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।
যদিও অর্থায়ন বন্ধের মতো সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া আরও আগে থেকে শুরু করা হয়। এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের জন্য বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।
২০২৫ সালের বাজেট থেকে ১১০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ এবং ২০২৬-২৮ অর্থবছরের জন্য ৩২১ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশসহ তিনটি দেশের জন্য দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতা ধাপে ধাপে বন্ধ হবে।
সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র পিয়ের-আলাঁ এল্টশিঙ্গার লিখিত এক বক্তব্যে বিবিসিকে জানিয়েছেন, “আগামী চার বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কর্মসূচি ধাপে ধাপে বন্ধ করা হবে এবং ২০২৮ সালের শেষে বাংলাদেশ আর সুইস উন্নয়ন সহায়তার (SDC) অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ থাকবে না।”
কেন এই সিদ্ধান্ত?
সুইজারল্যান্ড সরকার তাদের উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, যা ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে কার্যকর হবে। ২০২৫ সালের বাজেট থেকে ১১০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ এবং ২০২৬-২০২৮ অর্থবছরের জন্য ৩২১ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ কমানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের ফলে, ২০২৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ তিনটি দেশে সুইজারল্যান্ডের দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যেমন ইউনেস্কো, ইউএনএইডস এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনেও অর্থায়ন কমানো হবে।
সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র পিয়ের-আলাঁ এল্টশিঙ্গার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রেক্ষাপট ও সুইস উন্নয়ন সহযোগিতার অবদান মূল্যায়ন করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, রোহিঙ্গা শরণার্থী সহায়তা এবং জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসের মতো বিশেষ কর্মসূচিতে সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
এতে বাংলাদেশে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখলেও ২০২৮ সালের পর সুইজারল্যান্ড আর বাংলাদেশের অগ্রাধিকারভুক্ত দেশ হবে না।
কী পরিমাণ সহায়তা পায় বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডের উন্নয়ন সহায়তার দিক দিয়ে শীর্ষ ১৫ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য সুইজারল্যান্ডের উন্নয়ন সহায়তা ছিল ৩৪১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা এশিয়ায় ফিলিস্তিন, সিরিয়া, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের পরবর্তী সর্বোচ্চ অর্থায়ন ছিল।
এশিয়ার বাইরের দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেন, মলদোভা, এবং আফ্রিকায় মালি, বুরকিনা ফাসো, সোমালিয়া ও চাদ ছিল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি সহায়তা প্রাপ্ত। ২০২৩ সালে সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাটিস্টিকস ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সুইস অর্থায়নের অন্তত ১১২টি দেশের মধ্যে ১১তম।
এছাড়া, সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলা এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করার মতো বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।