ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভারতে হিন্দু-মুসলিম সহিংসতায় আহত ৯, কারফিউ জারি

ভারতে হিন্দু-মুসলিম সহিংসতায় আহত ৯, কারফিউ জারি

ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরে হিন্দু ও মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসময় ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ, দোকান ও গাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা হয়েছে কারফিউ।

সোমবার (১৭ মার্চ) রাত থেকে নাগপুর শহরের মহাল এলাকায় এই সংঘর্ষের শুরু হয়।

বিবিসি বাংলা জানায়, সংঘর্ষের সময় পুলিশের দিকেও ব্যাপক পাথর ছোড়া হয়। প্রাথমিকভাবে ছয় জন বেসামরিক নাগরিক ও তিনজন পুলিশ অফিসার আহত হন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। এরপরে কোতোয়ালি আর গণেশপেঠ এলাকাতেও সংঘর্ষ ছড়ায়। হাজার খানেক মানুষ ব্যাপকভাবে পাথর ছোড়া, ভাঙচুর চালায়। দোকানপাট আর গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোর পর্যন্ত পুলিশ নানা এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে ২০ জনকে আটক করেছিল।

জানা যায়, সোমবার দুপুরে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল নাগপুরের মহাল এলাকায় একটি বিক্ষোভ জমায়েত করে। ওই বিক্ষোভে আওরঙ্গজেবের একটি ছবি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলায় অবস্থিত খুলদাবাদ থেকে আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাজ্যের নানা জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে।

চিটনিস পার্ক থেকে শুখরাওয়ারি তালাও রোড পর্যন্ত। এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি চার চাকার গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, আবাসিক ভবনগুলোকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। এই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ একটা মব ঢুকে পড়ে সেখানে। এলাকার বাড়িগুলোর দিকে পাথর ছোড়া হতে থাকে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। চারটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, একটি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

এরপরে হনসাপুরি এলাকাতেও সহিংসতা ছড়ায়। ওই অঞ্চলের এক দোকানি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ আমি দোকান বন্ধ করছিলাম। হঠাৎ দেখি একদল লোক গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। আমি জল নিয়ে এসে আগুন নেভাতে গেলে ওরা আমার মাথায় পাথর ছোড়ে। ওই ব্যক্তির দুটি গাড়ি আর কাছাকাছি রাখা আরও কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ওই দুষ্কৃতরা। আরেক বাসিন্দা জানিয়েছেন, সহিংসতা শুরুর আগে আক্রমণকারীরা প্রথমে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ওদের মুখ ঢাকা ছিল। ধারালো অস্ত্র, লাঠি আর কাচের বোতল নিয়ে এসেছিল ওরা। এসেই দোকানগুলোয় হামলা চালাতে থাকে, পাথর ছুড়ছিল ওরা, গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেয়।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ওই বিক্ষোভ চলাকালে কোরআন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়, যাতে মুসলমান সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়। পরে এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগও পুলিশের কাছে দায়ের করা হয়।

মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী যোগেশ কদম সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, সহিংসতার কারণ এখনও খুঁজে বের করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদিও কারফিউ জারি আছে সেখানে।

নাগপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অর্চিত চন্দক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, একটি গুজবের ফলেই সোমবারের ঘটনার সূত্রপাত। কিছু ভুল তথ্যের ফলেই এই ঘটনা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সবার কাছেই আবেদন যে ঘর থেকে বের হবেন না, পাথর ছুড়বেন না। গুজবে বিশ্বাস করবেন না।

ভারত,হিন্দু-মুসলিম,সহিংসতা,কারফিউ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত