বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আজ চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যত এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ু-বান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবন্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
ড. ইউনূস বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে সামাজিক ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’ এসময় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে এশিয়ার নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক হয়েছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে জনগণের আস্থা ফেরাতে সংস্কারকাজ করা হচ্ছে।
এ সময় জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে বৈশ্বিক যে ক্ষতি হচ্ছে তা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। জলবায়ুর এই প্রভাব রোখে অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
গাজায় যা হচ্ছে তা শুধু মুসলিম বা আরব বিশ্বের নয়, এটি মানবতার বিষয় বলেও মন্তব্য করেন ড. ইউনূস।
এদিকে, স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করবেন দেশটির খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কু দোংইউ। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন ও রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীও সাক্ষাৎ করবেন প্রধান উপদেষ্টার সাথে।
অধ্যাপক ইউনূস বুধবার চার দিনের সরকারি সফরে চীনে পৌঁছেছেন। প্রধান উপদেষ্টাসহ তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী সাউদার্ন এয়ারলাইন্সে একটি বিশেষ ফ্লাইট বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে হাইনানের কিয়োংহাই বোয়াও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম এবং হাইনান প্রদেশের ভাইস গভর্নর বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান।
অধ্যাপক ইউনূস এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। ২৯ মার্চ অধ্যাপক ইউনূস পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিকেইউ) বক্তৃতা দেবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে।
সফরে প্রধান উপদেষ্টা চীনের হাসপাতাল চেইনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। যাতে তারা যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা অন্বেষণ এবং হাসপাতাল স্থাপনের জন্য উৎসাহিত হয়।
আগামী ২৯ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।