পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পুরস্কার

প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ১৭:০০ | অনলাইন সংস্করণ

ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ নামাজ। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া মুসলমানদের জন্য আবশ্যক। যেকোনো ইবাদতের তুলনায় নামাজের ব্যাপারে অধিক যত্নশীল হওয়া প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন করলে ইহকাল-পরকালে অনেক পুরস্কারের কথা এসেছে কোরআন-হাদিসে। এখানে ৬ টি বড় পুরস্কার তুলে ধরা হলো।

১. পবিত্র বান্দার খেতাব

আল্লাহ তাআলা পবিত্র বান্দাদের ভালোবাসেন। জান্নাতেও ঠিকানা হবে শুধুমাত্র পবিত্র বান্দাদের। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ইসলাম পরিচ্ছন্ন। সুতরাং তোমরা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে কেবল পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে।’ (ফাইজুল কাদির: ৩০৬৫) অন্য হাদিসে মহানবী (স.) বলেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর দ্বীনের ভিত্তি স্থাপিত।’ (মাউসুআতু আতরাফিল হাদিস আন-নাবাবি, পৃষ্ঠা-২৯৪)

নবীজি বলেছেন, নামাজিরা হলো পবিত্র বান্দা। তাদের কোনো গুনাহ থাকে না। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘বল তো যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোন ময়লা থাকবে? তারা বললেন, তার দেহে কোনোরূপ ময়লা থাকবে না। আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, এ হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা (বান্দার) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন।’ (সহিহ বুখারি: ৫২৮)

২. অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে হেফাজত

নামাজিদের অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫) যারা নামাজ পড়ার পরও অশ্লীল কাজ করে, বুঝতে হবে তাদের নামাজ হচ্ছে না। হয়ত তাদের উপার্জন হারাম, নতুবা তাদের অজু-গোসল হচ্ছে না। এমনও হতে পারে, তার ইবাদত রিয়ামুক্ত নয় কিংবা তার রুকু-সেজদা সঠিক নয়।

৩. আল্লাহর ক্ষমা লাভ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করলে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে নির্ধারিত সময়ে পূর্ণরূপে রুকু ও পরিপূর্ণ মনোযোগ সহকারে নামাজ আদায় করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করবেন, অন্যথায় শাস্তি দেবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪২৫)

৪. ফেরেশতাদের দোয়া লাভ

সময়মতো নামাজ আদায়ের জন্য যারা সময়ের আগেই মসজিদে উপস্থিত হয় এবং নামাজের জন্য অপেক্ষা করে ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যে পর্যন্ত মসজিদে নামাজের প্রতীক্ষায় থাকে, সে যেন নামাজের মধ্যেই থাকে, আর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ মসজিদে থাকে ফেরেশতারা সে পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে, ‘হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন।’ অজু ছুটে না যাওয়া পর্যন্ত তার জন্য দোয়া চলতে থাকে। (তিরমিজি: ৩৩০)

৫. জান্নাতের প্রতিশ্রুতি

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করলে তার জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা নিজেদের নামাজের হেফাজত করে তারাই জান্নাতে সম্মানের পাত্র হবে।’ (সুরা মাআরিজ: ৩৫)

মহানবী (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলার কারণে এর কোনোটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ: ১৪২০)

৬. রিজিকে প্রশস্ততা

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমি আপনাকে রিজিক দেই এবং আল্লাহকে ভয় করার পরিণাম শুভ তথা কল্যাণকর।’ (সুরা ত্বাহা: ১৩২) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মহাপবিত্র আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর হতাশা দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব না।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১০৭)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাসময়ে এবং যথানিয়মে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।