দুইবার বিয়ে হওয়া নারী জান্নাতে কোন স্বামীর কাছে থাকবে?
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ২১:১০ | অনলাইন সংস্করণ
যে নারীর একাধিক বিয়ে হয়েছে, জান্নাতে তার স্বামী কে হবেন—এ বিষয়ে দুটি বক্তব্য পাওয়া যায়। ১. দুনিয়ার সর্বশেষ স্বামী হবেন আখেরাতের স্বামী। ২. নারীকে ইচ্ছেধীকার দেওয়া হবে। দুই বা একাধিক স্বামীর মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছে গ্রহণ করতে পারবে।
মূলত একজন নারী জান্নাতে কাকে স্বামী হিসেবে পাবেন, তা নির্ভর করবে তার মৃত্যুকালীন ছয় অবস্থার ওপর। অবস্থাগুলো হলো—১. বিয়ের আগে মৃত্যু। ২. তালাকের পর অন্য কারো সঙ্গে বিয়ের আগে মৃত্যু। ৩. বিবাহিতা, কিন্তু স্বামী জাহান্নামি। ৪. বিবাহিতা এবং স্বামী জান্নাতি। ৫. স্বামী মারা যাওয়ার পর আর বিয়ে করা হয়নি। ৬. স্বামী মারা যাওয়ার পর অন্য কাউকে বিয়ে করা হয়েছে।
জান্নাতে যেসব নারী প্রবেশ করবেন, তারা উল্লেখিত ৬টি অবস্থার ওপরই মৃত্যুবরণ করবেন। প্রতিটি অবস্থার জন্য স্বতন্ত্র স্বামীর উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। নিচে ব্যাখ্যাসহ আলোচনা করা হলো—
১. বিয়ের আগে মৃত্যু
দুনিয়াতে বিয়ে না হয়ে থাকলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দুনিয়ার এমন একজন পুরুষ অথবা এমন একজন অবিবাহিত পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেবেন, যা দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যাবে। কেননা জান্নাতের নেয়ামত ও সুখসম্ভার শুধু পুরুষের জন্য নয়, বরং তা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য। আর জান্নাতের নেয়ামতের মধ্যে একটি নেয়ামত হচ্ছে বিয়ে। (মাজমু ফতোয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসাইমিন: ২/৩৮)
২. তালাকের পর পুনরায় বিয়ের আগে মৃত্যু
যে জান্নাতি নারী মৃত্যুবরণ করবে তালাকের পর অন্য কারো সঙ্গে বিয়ের আগেই। তার অবস্থাও এই প্রথম অবস্থার মতোই হবে।
৩. নারী জান্নাতি স্বামী জাহান্নামি
যে জান্নাতি নারী বিবাহিতা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, কিন্তু তার স্বামী যদি জাহান্নামি হয়, তখন সে জান্নাতে প্রবেশের পর সেখানে অনেক পুরুষ দেখতে পাবে, যারা বিয়ে করেনি অথবা বিয়ে করেছে; কিন্তু তাদের স্ত্রী জাহান্নামি। তাদের থেকে পছন্দমাফিক একজনকে স্বামী হিসেবে বেছে নিতে পারবে। (মাজমু ফতোয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসাইমিন: ২/৩৮)
৪. নারী জান্নাতি স্বামীও জান্নাতি
যে নারী বিয়ের পর মৃত্যুবরণ করেছে আর তার স্বামী যদি জান্নাতি হয়, তাহলে এ অবস্থায় সে তাকেই স্বামী হিসেবে পাবে, যার কাছ থেকে সে ইহলোক ত্যাগ করেছে। কেননা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘জান্নাতে প্রবেশ করো তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা সানন্দে।’ (সুরা জুখরুফ: ৭০)
হাদিসে এসেছে, হুজায়ফা (রা.) তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘যদি তোমাকে এই বিষয়টি আনন্দিত করে যে তুমি জান্নাতে আমার স্ত্রী হিসেবে থাকবে, তাহলে আমার পর আর বিয়ে করো না। কেননা জান্নাতে নারী তার দুনিয়ার সর্বশেষ স্বামীর সঙ্গে থাকবে। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (স.) মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদের জন্য অন্য কারো সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম করা হয়েছে। কেননা তাঁরা জান্নাতে তাঁরই স্ত্রী হিসেবে থাকবেন।’ (বায়হাকি, সুনানে কুবরা: ১৩৮০৩)
৫. স্বামী মারা যাওয়ার পর আর বিয়ে করা হয়নি
যে জান্নাতি নারীর স্বামী মারা গেল আর সে আমৃত্যু বিয়ে ছাড়াই রইলেন, তার অবস্থাও চতুর্থ অবস্থার মতোই হবে।
৬. স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যত্র বিয়ে করা জান্নাতি নারী
কোনো নারীর স্বামী মারা গেছেন, এরপর তিনি অন্য পুরুষকে বিয়ে করেছেন এবং আগের-পরের উভয় স্বামীই জান্নাতি। এমতাবস্থায় তিনি যত বিয়েই করুন না কেন, জান্নাতে সর্বশেষ স্বামীকেই পাবেন। কারণ আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘একজন নারী তার সর্বশেষ স্বামীর জন্যই থাকবে।’ (জামে সাগির: ৬৬৯১, সিলসিলা সহিহাহ: ১২৮১)
অবশ্য এক্ষেত্রে ভিন্ন মতও আছে। অনেক আলেম তাবরানির একটি হাদিসকে দলিল হিসেবে এনে বলেছেন, নারীরা চাইলে যেকোনো একজন স্বামীকেই বেছে নিতে পারবেন। ওই হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, হে উম্মে সালামা! ওই নারী নিজের পছন্দমতো তার স্বামীদের থেকে যে কাউকে বেছে নিতে পারবে। আর নিঃসন্দেহে সে উত্তম চরিত্রের স্বামীকেই বেছে নেবে। ওই নারী আল্লাহর কাছে আরজ করবে, ‘হে আল্লাহ! এ ব্যক্তি দুনিয়ায় আমার সঙ্গে সবচেয়ে ভালো আচরণ করেছে। অতএব তার সঙ্গেই আমায় বিয়ে দিন।’ হে উম্মে সালামা! উত্তম চরিত্র দুনিয়া ও আখেরাতের সব কল্যাণের মাঝে উত্তম। (তাবরানি)
আর আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চাবে এবং যা কিছু তোমরা ফরমায়েশ করবে। এগুলো পাবে ক্ষমাশীল পরম দয়ালুর পক্ষ থেকে আতিথেয়তাস্বরূপ।’ (সূরা হা মিম সাজদা: ৩১)
মূল কথা হলো- জান্নাতে সবাই পছন্দমতো স্বামীকেই পাবে এবং সন্তুষ্ট থাকবে। এটি নিয়ে অহেতুক টেনশন করার প্রয়োজন নেই। মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত- জান্নাতে যাওয়ার জন্য আমল করায় মনোনিবেশ করা। জান্নাতে যাওয়ার পর কী করব? সেটি জান্নাতে যাবার পর স্বচক্ষে দেখতো পাবো ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক নারী-পুরুষকে জান্নাতে যাওয়ার আমলগুলো যথাযথ করার তাওফিক দান করুন। আমাদের সবাইকে জান্নাতি হিসেবে কবুল করুন। আমিন।