‘জুমা’ শব্দের অর্থ এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা কাতারবদ্ধ হওয়া। শুক্রবার মসজিদে জোহরের চার রাকাতের পরিবর্তে কাতারবদ্ধ হয়ে দুই রাকাতের যে ফরজ নামাজ আদায় করা হয়, ইসলামের পরিভাষায় সেটিই সালাতুল জুমা বা জুমার নামাজ।
হজরত ইবনে সাব্বাক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো এক জুমার দিনে বলেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়, আল্লাহতায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আরবি জুমুআ শব্দের অর্থ একত্র হওয়া। শুক্রবারকে বলা হয় ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন।
ইতিহাসের প্রথম জুমা
প্রথম হিজরিতে মুসলমানদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের নামাজের সময় হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। যাতে ১০০ জন মুসল্লি শরিক হন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।
তবে হিজরতের পরে জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে নবুওয়তের দ্বাদশ বর্ষে মদিনায় নাকীউল খাজিমাতে হজরত আসআদ বিন যুরারাহ (রা.) এর ইমামতিতে সম্মিলিতভাবে শুক্রবারে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের দলিল আছে হাদিসে। তবে সেটা ছিল নফল নামাজ।
এ প্রসঙ্গে মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকে সহীহ সনদে মুহাম্মদ ইবনে সিরীন থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (স.) এর মদিনায় আগমনের পর এবং জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে একবার মদিনার আনসারগণ একত্র হয়ে আলোচনা করলেন যে, ইহুদিদের সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি দিন আছে, যে দিনে তারা সবাই একত্র হয়। নাসারাদেরও সপ্তাহে একদিন সবার একত্র হওয়ার জন্য নির্ধারিত আছে। তাই আমাদের জন্য সপ্তাহে একটা দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যে দিনে আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব ও নামাজ আদায় করব।
এরপর তারা বললেন শনিবার ইহুদিদের আর রোববার নাসাদের জন্য নির্ধারিত। অবশেষে ‘ইয়াওমুল আরুবা’ (শুক্রবার)-কে তারা সবাই গ্রহণ করলেন এবং তারাই এদিনকে ‘জুমার দিন’ নামকরণ করলেন। (সীরাতুল মুস্তাফা, দারসে তিরমিজি)
জুমার নামাজের গুরুত্ব
জোহরের নামাজের পরিবর্তে শুক্রবার জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। জুমার খুতবায় ইমাম উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করবেন ও দিক নির্দেশনা দেবেন।
হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সব মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরজ)। (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২ , আস্-সুনানুল কাবীর : ৫৫৮৭)
জুমার নামাজের গুরুত্ব রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে বারবার স্মরণ করে দিয়েছেন এবং এই দিনকে ঈদের দিনের সাথে তুলনা করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না। (তাফসিরে মাজহারি ,খণ্ড : ৯ , পৃষ্ঠা : ২৮৩)
ফজিলত
হজরত সালমান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, নামাজ আদায় করবে এবং ইমামের খুতবা চুপ করে মনোযোগসহকারে শুনবে, দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)
জুমাবারের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করবেন। (সহীহ মুসলিম : ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৭১৫১, আস্-সুনানুল কুবরা : ১০২৩৪)