ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আল্লাহর জিকিরে প্রকৃত সফলতা

আল্লাহর জিকিরে প্রকৃত সফলতা

মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর গোলাম। মানুষের প্রধান কাজ হলো আল্লাহর ইবাদত করা। তার মর্জি অনুযায়ী চলা, তার দেখানো পথের পথিক হওয়া এবং সর্বক্ষেত্রে একমাত্র তার হুকুম পালন করা। তবেই তিনি খুশি হবেন। প্রতিদান দেবেন। চির শান্তির ঠিকানা জান্নাত দেবেন। সুখের সকল ফোয়ারায় তার প্রিয় বান্দাকে সিক্ত করবেন। আর দুনিয়ায় মানসিক শান্তিতে রাখবেন। দিলমন প্রশান্ত রাখবেন।

আল্লাহ বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসম‚হ শান্তি পায়।’ (সুরা রাআদ : ২৮)। প্রকৃত অর্থেই চিত্তের শান্তি আল্লাহর জিকিরে। সদা আল্লাহর স্মরণে। আল্লাহ ওই বান্দাকে স্মরণ করেন, আলোচনা করেন। যে বান্দা আল্লাহর জিকির করে, আল্লাহকে স্মরণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সুরা বাকারা : ১৫২)।

হাদিসে আছে, সাহাবিদের উদ্দেশে রসুল (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন উত্তম আমলের কথা বলে দেব না? যা তোমাদের প্রভুর নিকট অত্যন্ত পবিত্র, যা সর্বাধিক মর্যাদাস¤পন্ন, এবং স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যয় করা অপেক্ষা উত্তম আর শত্রুর মোকাবিলায় যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাদের ঘাড়ে আঘাত করা আর তারা তোমাদের ঘাড়ে আঘাত করার চেয়েও উত্তম? সাহাবিগণ (রা.) বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, ‘তা হলো আল্লাহতায়ালার জিকির।’ ( ইবনে মাজাহ : ৩৭৯০)।

একটু চিন্তা করুন আল্লাহর স্মরণ শত্রুর মোকাবিলায় যুদ্ধের চেয়েও উত্তম। আল্লাহর জিকির বা স্মরণে শয়তান দূর হয়। শয়তানের মোকাবেলায় জিকির বড় ও মোক্ষম হাতিয়ার। প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘শয়তান আদম সন্তানের কলবে জেঁকে বসে থাকে যখনই আল্লাহর জিকির করে তখনই সে ছিটকে পড়ে এবং যখনই কলবের জিকির বন্ধ থাকে সে কুমন্ত্রণা দেয়।’ (মুসান্নাফে আবি শাইবাহ : ৩৫৯১৯)।

আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান হৃদয়ে বাসা বাধে। বান্দার ওপর কর্তৃত্ব চালায়। বান্দাকে পরীক্ষার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শয়তান আসে। আল্লাহ দেখতে চান শয়তানের সঙ্গে লড়ে তার বান্দা জয়ী হয় কিনা? এমর্মে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর।’ (সুরা জুখরুফ : ৩৬)।

সুতরাং আল্লাহকে স্মরণ করে, সদা তার জিকিরে মশগুল থেকে মানবজীবন পরিচালিত করা জরুরি। যে আল্লাহকে স্মরণ করে সে কখনো অমানবিক হতে পারে না। সে কখনো জালেম হতে পারে না। মিথ্যাবাদী, চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারী হতে পারে না। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী হতে পারে না। আল্লাহকে স্মরণ করার সবচেয়ে বড় উপকার হলো, মানুষ প্রকৃত অর্থেই মানুষ হতে সক্ষম হওয়া। দুনিয়ার ইতিহাস বলে, কোনো আইন বা প্রশাসনের ভয়ে কেউ কখনো মানুষ হয় না। মানবতা ও মনুষ্যবোধ তখনই জাগ্রত থাকে, যখন কেউ সদা আল্লাহকে স্মরণ করে। জিকির করে। হৃদয়ে আল্লাহর স্মরণ, মুখে আল্লাহ নামের জপ যাদের স্বাভাবিক রুটিন দুনিয়া ও আখেরাতে তারা সফল মানুষ।

জিকিরের গুরুত্ব বুঝিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা প্রতিপালকের জিকির কর, সকাল-সন্ধ্যায়, বিনয় ও নম্রতার সাথে ,অনুচ্চস্বরে, মনে-মনে, আর তুমি গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সুরা আল আ-রাফ : ২০৫)। আমরা কী বলে জিকির করব? আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর জন্যই যাবতীয় সুন্দর নাম। সুতরাং সে সব নাম ধরেই তাকে ডাকো।’ (সুরাআ’রাফ : ১৮০)।

হাদিসে বিভিন্ন জিকিরের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন- রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পরে কয়েকটি কালেমা এমন আছে যেগুলো পাঠকারী ব্যর্থ হয় না। সে কালেমাগুলো হলো, প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল হামদুলিল্লাহ’ ও ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার।’ (মুসলিম : ১৩৭৭)।

জিকির বা আল্লাহর স্মরণে প্রকৃত সফলতা অর্জিত হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সুরা আনফাল : ৪৫)। মৃত্যুর সময় যদি কারো মুখে জিকির থাকে তবে সে জান্নাতে যাবে।

একবার হজরত মুআজ বিন জাবাল রাসুল (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) সর্বোত্তম আমল কোনটি? রাসুল (সা.) বললেন ‘ মৃত্যুর সময় যেন তোমার জিহŸা আল্লাহর জিকিরে সিক্ত থাকে।’ (মুজামুল কাবির : ১৮১)।

মৃত্যুর সময় জিকিরই মহাসফলতা। মৃত্যুর সময় জিকির জারি থাকতে চাইলে মৃত্যুর পূর্বে সর্বদা জিকিরে; আল্লাহর স্মরণে মশগুল হতে হবে। সারাজীবন আল্লাহর জিকির মুখে থাকলে মৃত্যুর সময়ও আল্লাহ বান্দার মুখে তার জিকির জারি করে দিবেন। ফলে সে বান্দার পরকালীন জীবনও চির সুখময় হয়ে ওঠবে।

আল্লাহ,জিকির,সফলতা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত