ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন: ইসলাম যা বলে
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:২৮ | অনলাইন সংস্করণ
মুফতি ইবরাহীম আল খলীল
ইসলাম একটি সার্বজনীন জীবনব্যবস্থার নাম। এখানে মানুষের জননিরাপত্তাসহ মানব জীবনের সকল দিক উঠে এসেছে। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সর্বদিক থেকে সম্মানিত করেছেন। বানিয়েছেন তাকে সকল ধরনের রূপ-লাবণ্য দিয়ে। মৃত্যুর আগে যেমন মানুষ সম্মানিত থাকে ঠিক তেমনি মৃত্যুর পরেও। একজন মুসলমান ব্যক্তির দেহ সম্মানের পাত্র, জীবদ্দশায় হোক অথবা মৃত্যুর পরে হোক। তাই ইসলামে অতি যত্নের সাথে মৃতের গোসল, কাফন-দাফন প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে সসম্মানে তার লাশ কবর দেয়ার নির্দেশ এসেছে। আর মৃত ব্যক্তিকে অপদস্থ করা বা শরীরে আঘাত করা অথবা তার হাড়-হাড্ডি ভাঙ্গার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞায় হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা, জীবিতকালে তার হাড় ভাঙ্গারই মতো। (আবু দাউদ : ৩২০৭)।
ময়নাতদন্ত আসলে কী: পোস্টমর্টেম শব্দের বাংলা পরিভাষা ময়নাতদন্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানে সাধারণত বলা হয়, অটোপসি। আমাদের দেশে সাধারণত হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে ময়না তদন্ত করা হয়। এর মাধ্যমে অপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়। তবে অনেক সময় বিনা প্রয়োজনেও তা করা হয়। যেমন কাউকে ফাঁসানোর জন্য স্বাভাবিকভাবে মৃত মানুষের লাশটি ময়না তদন্ত করা হয়। বর্তমানে হত্যা, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনার মতো যেকোনো অপমৃত্যু বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ময়না তদন্ত করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ঘটনায় প্রথমেই পুলিশ একটি সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। অর্থাৎ মৃতদেহ কী অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এর পর ময়না তদন্ত করা হয় ।
এ ব্যাপারে ইসলাম বিশেষজ্ঞ আলেমদের বক্তব্য : বিশেষজ্ঞ আলেমদের মতে, প্রধানত ইসলামে লাশের পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত নীতিগতভাবে জায়েজ নয়। ইসলামের বিধানমতে মৃতের দেহে আঘাত বা কাটাছেড়া বৈধ নয়। খুনের আসামী ধরতে কিংবা মৃত্যুর কারণ বের করা ইত্যাদি প্রয়োজনে যদি শরিয়তের বিশেষজ্ঞ বিচারক বা ফতোয়া প্রদানকারী (কাজি ও মুফতি) সম্মতি দেন তাহলে পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত জায়েজ হতে পারে। তবে, মৃতের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চুরি করা অথবা এর বাণিজ্য করা কোনো অবস্থাতেই শরিয়ত সমর্থন করে না। সুতরাং, অহেতুক পোস্টমর্টেম বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাটাছেড়া করা জায়েজ নয়। (জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামি ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ)।
শরিয়তের দৃষ্টিতে মানুষ জীবিত অবস্থায় যেমন সম্মানী, মৃত্যুর পরেও তেমন সম্মানী। জীবিত মানুষকে কষ্ট দেয়া যেমন অপরাধ ও গুনাহের কাজ তেমনি মৃত্যুর পরেও কাউকে কষ্ট দেয়া অপরাধ ও গুনাহের কাজ। সুতরাং একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কারো লাশ কাটা-ছেড়া পোস্টমর্টেম করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে ডাক্তারী পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেক সময় শরয়ি প্রয়োজন ছাড়াই করা হয়। যা ক্ষেত্র বিশেষ অনর্থকও বটে। যদি শরয়ি প্রয়োজন ছাড়া করা হয় তাহলে তা নাজায়েয। বিশেষ কোনো শরয়ি প্রয়োজনে যদি করতেই হয় তাহলে তা শরিয়তের নির্দেশনার ভিত্তিতে করতে হবে। যেমন সতরের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং মৃতের সম্মানের প্রতি সজাগ থাকা ইত্যাদি অপরিহার্য।
অনেক সময় অপরাধ নির্ণয়, অপরাধের ধরন এবং অপরাধী চিহ্নিত করার জন্য ময়না তদন্তের প্রয়োজন হয়। এমতাবস্থায় প্রয়োজন অনুযায়ী ময়না তদন্তের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু যেখানে মৃত্যুর কারণ সুস্পষ্ট বা অপরাধী নিজ অপরাধ স্বীকার করে অথবা মৃতের অভিভাবক ময়না তদন্ত করাতে অস্বীকার করে এবং তারা হত্যা বিষয়ে সন্দেহকারী না হয়, তবে ময়না তদন্ত করা যাবে না। (কেফায়াতুল মুফতী ২/২০০)।