আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর একনিষ্ঠ খাদেম। সফরে-ইকামতে, ঘরের ভেতর-বাইরে সব সময় তিনি তার সঙ্গে থাকতেন। কোনো মজলিসে যাওয়ার সময় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবীজি (সা.)-এর জুতা বগল দাবা করে নিতেন। নসিহত করার সময় নবীজি (সা.) লাঠি তার হাতে দিতেন। নসিহত করে বেরুলে তিনি জুতা সাজিয়ে দিতেন পরার জন্য। নবীজি (সা.) একা বেরুলে তিনি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেরুতেন। রাসুল (সা.) ঘুমালে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন, গোসলের সময় পর্দা করে দিতেন। তার মেসওয়াক বহন করতেন। তিনি যখন হুজরায় অবস্থান করতেন, তখনও তার কাছে যাতায়াত করতেন।
রাসুলের পরিবারের সদস্যতুল্য : রাসুল (সা.) তাকে যখনই ইচ্ছে তার কামরায় প্রবেশ এবং কোনো প্রকার দ্বিধা-দ্ব›দ্ব ও সংকোচ না করে তার সব বিষয় অবগত হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। তার পারিবারিক আলোচনায় বসারও অনুমতি দিতেন। এ কারণে তাকে ‘সাহিবুস সির’ বলা হয়। তার সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সম্পর্ক এতটাই দৃঢ় ছিল যে, অনেকে তাকে মহানবী (সা.)-এর পরিবারের সদস্য ভাবতেন। তিনি ও তার মা প্রায়ই মহানবী (সা.)-এর বাড়ি যেতেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, আমরা মদিনায় এসে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে রাসুল (সা.)-এর পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করতাম। কেননা, রাসুল (সা.)-এর কাছে তার ও তার মায়ের অধিক পরিমাণে যাতায়াত ছিল। (তিরমিজি : ৩৮০৬)।
নবীজির সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ : নবীজি (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করতে করতে তিনি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে, তার আচার-আচরণ ও চলাফেরায় নবীজি (সা.)-এর প্রভাব পরিলক্ষিত হতো। হুজাইফা (রা.) বলেন, সাহাবায়ে কেরামের মধ্য থেকে চলাফেরা ও আচার-ব্যবহারে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। (তিরমিজি : ৩৮০৭)। তাই সাহাবায়ে কেরামও তার প্রতি সুধারণা পোষণ করতেন। আলী (রা.) বলেন, যদি আমি কাউকে বিনা পরামর্শে আমির নিযুক্ত করি, তাহলে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে করব। (তিরমিজি : ৩৮০৮)।
কোরআনের শ্রেষ্ঠ পাঠক : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) খোদ রাসুর (সা.)-এর শিক্ষালয়ে শিক্ষালাভ করেন। তাই সাহাবিদের মধ্যে যারা কোরআনের সবচেয়ে ভালো পাঠক, তার ভাব ও অর্থের সবচেয়ে বেশি সমঝদার এবং আল্লাহর আইন ও বিধিবিধানের সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ, তিনি ছিলেন তাদেরই একজন। তিনি অত্যন্ত বিশুদ্ধরূপে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তার কোরআন তেলাওয়াতের প্রশংসা করেছেন মহানবী (সা.)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন যেভাবে নাজিল হয়েছে সেভাবে পড়তে চায়, সে যেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের মতো পড়ে।’ (মুসনাদে আহমদ)।