আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। প্রয়োজনীয় সব উপকরণ দান করেছেন। বেঁচে থাকার জন্য ধন-দৌলত, রিজিক, অলংকার ইত্যাদি দিয়েছেন। এ সবকিছু আমাদের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার আগপর্যন্ত আমাদের সব প্রয়োজন সম্পন্ন করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন। অতএব, তোমরা তাতে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিজিক আহার করো। তাঁরই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।’ (সুরা মুলক : ১৫)। তিনি আরও বলেন, ‘নভোমÐল, ভ‚মÐল ও উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছি। অথচ যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে, কাফেররা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ (সুরা আহকাফ : ৩)।
পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য : আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না। সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে তা দুনিয়াতেই দান করবেন। আল্লাহতায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। আর সেই সত্য হলো, আল্লাহর একত্ববাদ, আল্লাহর প্রতি উপাসনা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত করো; যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন। হয়তো তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা : ২১-২২)। তিনি আরও বলেন, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে। আল্লাহতায়ালাই তো জীবিকাদাতা, শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।’ (সুরা জারিয়াত : ৫৬-৫৮)।
রাসুলদের দায়িত্ব : আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে অনেক রাসুল পাঠিয়েছেন। তাদের সর্বশেষ হলেন প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)। আল্লাহতায়ালা মানুষকে পরিশুদ্ধ করার জন্য তাকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য এবং সবাইকে শিরক থেকে মুক্ত করে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি আহ্বানে তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝেই রাসুল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাকো। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন, আর কিছু সংখ্যকের জন্য বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো। দেখ, মিথ্যারোপকারীদের কীরূপ পরিণতি হয়েছে?’ (সুরা নাহল : ৩৬)। রাসুল (সা.)-এর অনুসারীদের জন্য তার আনুগত্য করা আবশ্যক। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো। যেগুলো আমি তোমাদের রুজি হিসেবে দান করেছি। আল্লাহর যদি বন্দেগি করো, তাহলে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সুরা বাকারা : ১৭২)। রাসুল (সা.) এবং তার অনুসারী মোমিনদের কাছে এ পার্থিব জীবন নিজেকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষেত্র। তারা এখান থেকেই চ‚ড়ান্ত সফলতা জান্নাত লাভের আশায় কাজ করে। বান্দা তার সব ভালো কাজের উত্তম প্রতিদান অবশ্যই পাবে।
কোনো আমলই ছোট নয় : কোন আমলকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। কেননা, জানা নেই, কোন আমল আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে জান্নাতের অধিবাসী করবে! রাসুল (সা.) বলেন, ‘ভালো কোনো কিছু দান করাকে হীন মনে কোরো না। এমনকি হোক সেটা কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত।’ (মুসলিম : ২৬২৬)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘চলার পথে কাঁটাযুক্ত ডাল পেয়ে কেউ যদি তা সরিয়ে ফেলে, আল্লাহ তার এ কাজ সাদরে কবুল করেন। তার গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (বোখারি : ৬৫২)। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কারও প্রাপ্য হক বিন্দু-বিসর্গও রাখেন না। আর যদি তা সৎকর্ম হয়, তবে তাকে দ্বিগুণ করে দেন। নিজের পক্ষ থেকে বিপুল সওয়াব দান করেন।’ (সুরা নিসা : ৪০)।
পার্থিব জীবন কাটুক আল্লাহর আনুগত্যে : মোমিন পার্থিব জীবনকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে। ভালো আমলের মাধ্যমে চ‚ড়ান্ত সফলতা জান্নাত লাভ করে। আর যারা অবিশ্বাসী, এ পৃথিবী তাদের জন্য ভোগ-বিলাসের জায়গা। তারা নিষিদ্ধ কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে ফেলে। বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় অন্যায় হলো, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। অর্থাৎ উপাসনা অথবা সাহায্য প্রার্থনায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে মাথা নত করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ওপর ভরসা করা। প্রয়োজন পূরণে অন্য কারও কাছে প্রার্থনা করা। রিজিক অথবা সাহায্যপ্রাপ্তির পর আল¬াহ ছাড়া অন্য কাউকে দাতা হিসেবে বিশ্বাস করা। এগুলো শিরক। আল্লাহ কখনও এ গোনাহ মাফ করবেন না। তবে তওবা করে শিরক বিশ্বাস থেকে ফিরে এলে আল্লাহ মাফ করতে পারেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে। এ ছাড়া যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।’ (সুরা নিসা : ১১৬)।
গোনাহ থেকে বিরত থাকুন : গোনাহ থেকে বাঁচতে হবে, যদিও তা আমাদের দৃষ্টিতে ছোট হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক নারী একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গিয়েছিল, সে তাকে বেঁধে রেখেছিল। সে তাকে খাবারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি; যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেতে পারত। তাই গোনাহ একেবারে ছোট হলেও তা থেকে বিরত থাকো। কেননা, ছোট ছোট গোনাহ একসময় একত্রিত হয়ে মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।’ (বোখারি : ৩৩১৮)। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমুখী হও। তোমাদের কাছে শাস্তি আসার আগে তাঁর আজ্ঞাবহ হও। নইলে এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। তোমাদের কাছে অতর্কিতে ও অজ্ঞাতসারে শাস্তি আসার আগে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ উত্তম বিষয়ের অনুসরণ করো।’ (সুরা যুমার : ৫৩-৫৫)।