ঢাকা ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হারামে অশান্তি বাড়ে

হারামে অশান্তি বাড়ে

আল্লাহতায়ালার নিষেধ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী শরিয়তে যা নিষিদ্ধ, তা হারাম। আর হারাম কাজে আল্লাহতায়ালা খুব অসন্তুষ্ট হন। কাজটি শরিয়তবিরোধী হওয়ায় তার কর্তার জন্য রয়েছে শাস্তির আদেশ। এ হারামসমূহই আল্লাহর সীমারেখা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এসব আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা এগুলোর ধারে-কাছেও যেও না।’ (সুরা বাকারা : ১৮৭)। আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘনকারী ও হারাম অবলম্বনকারীদের আল্লাহতায়ালা ভীতিপ্রদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশের অবাধ্যতা করে এবং তাঁর সীমারেখাসমূহ লংঘন করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরস্থায়ী হবে। তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা নিসা : ১৪)।

হালাল গ্রহণে তাকওয়া বাড়ে : হারাম কাজে শয়তান খুশি হয়। কারণ, এতে বান্দা আল্লাহর কাছ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরতে থাকে। একপর্যায়ে হারাম কাজে লিপ্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সুদ-ঘুষ, অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা, সম্পদে আত্মীয়-স্বজনের অংশ না দেওয়া, প্রতিবেশীর হক নষ্ট করা এবং অশৃংখল পরিবেশ তৈরি করে অন্যের সম্পদ দখল করার প্রবণতা অতিমাত্রায় চলছে। এগুলো থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। হারাম থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা কর্তব্য। যেদিকে হারামের সম্ভাবনা আছে, সেখানে উঁকিও না দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। নিজেকে কঠোর সংযমে আবদ্ধ রাখা চাই। তাহলেই প্রকৃত মোমিন হতে পারব। যখন হালাল গ্রহণ করব, হৃদয়ে আল্লাহর ভয় বৃদ্ধি পাবে, ইবাদতে স্বাদ আসবে, গোনাহের প্রতি বিরক্তি আসবে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘অন্তরগুলো নরম হয় কীসে?’ তিনি বললেন, ‘হালাল গ্রহণের মাধ্যমে।’ (তাবাকাতু হানাবিলা : ১/২১৯)।

হারামের আশংকায় হালাল ত্যাগ : যদি কোথাও হালাল গ্রহণ করতে গিয়ে হারামে লিপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে, সে ক্ষেত্রে হালালকেও ছেড়ে দেওয়া জরুরি। হারাম থেকে বাঁচতে গিয়ে এমন সতর্কতা পূর্ববর্তী বুজুর্গানে দ্বীন করতেন। তাদের ঐক্যমতে সর্বোচ্চ তাকওয়া হলো, ‘হারামের ভয়ে হালালও ছেড়ে দেওয়া।’ (ইরশাদুস সারি লি শারহি সহিহিল বোখারি : ১/১৯১)। প্রখ্যাত তাবেঈ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সিরিন (রহ.)-এর রীতি ছিলÑ কাউকে বিদায় জানানোর সময় বলতেন, ‘আল্লাহকে ভয় করবে। তোমার জন্য যে পরিমাণ হালাল রিজিক বরাদ্দ রয়েছে, শুধু সেই হালাল রিজিকই সন্ধান করবে। তুমি যদি হারাম রিজিক গ্রহণ করো, তাহলে এতেও তোমার জন্য যে পরিমাণ রিজিক বরাদ্দ রয়েছে, এর চেয়ে অধিক গ্রহণ করতে পারবে না।’ (তাবাকাতে কোবরা : ৭/২০১)।

হালালের পুরস্কার নগদ : হারাম বর্জনের মূলে রয়েছে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয়। আল্লাহর ভয় যার যত বেশি, সে তত বেশি হারাম থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। সে যখনই কোনো হারাম কাজের দিকে যেতে চাইবে, তখনই তার মন বলবে, ‘আল্লাহতায়ালা আমাকে সর্বক্ষণ সব ক্ষেত্রে দেখছেন। সুতরাং এ কাজের জন্যও আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। আমার জন্য শাস্তির ফয়সালা হবে।’ এভাবে সে তাকওয়াবান লোক হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হয়। তার জন্য আল্লাহর রহমত নাজিল হতে থাকে। পক্ষান্তরে যার ভেতর আল্লাহর ভয় কম, সে পরকালের কথা চিন্তা না করেই হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। তাই হারাম থেকে বেঁচে থাকা আমাদের কর্তব্য হওয়া সত্তে¡ও তাতে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলাদা পুরস্কার। যা আল্লাহতায়ালা বান্দাকে নগদ দিয়ে থাকেন। ইবনে আতাউল্লাহ এস্কোন্দারি (রহ.) বলেন, ‘বান্দা নগদ হারাম পরিত্যাগ করবে, আর আল্লাহ তাকে বাকিতে প্রতিদান দেবেন; এমনটা হবে না।’ (আল হাসসু আলাত তিজারা : ৪২)। শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.) লিখেছেন, ‘শরিয়তের বিধান পালন করতে গিয়ে যে হারাম থেকে বেঁচে থাকবে, আল্লাহতায়ালা তাকে এর পরিবর্তে হালালের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (রিসালাতুল মুসতারশিদিন : ৭৬)।

হারাম বর্জনে সতর্কতার গল্প : একবার বিখ্যাত বুজুর্গ বিশর হাফি (রহ.)-এর বোন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর কাছে প্রশ্ন করলেন, ‘রাতে আমরা আমাদের বাড়ির ছাদে বসে চরকায় সুতা কাটি। তখন আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে সরকারি প্রহরীদের বিশাল কাফেলা হাতে মশাল নিয়ে অতিক্রম করে। তাদের সেই মশালের আলো আমাদের পর্যন্ত চলে আসে। এ অবস্থায় সেই মশালের আলোয় আমাদের জন্য চরকায় সুতা কাটা কি বৈধ হবে?’ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কে?’ প্রশ্নকারী জবাবে বললেন, ‘আমি বিশর হাফির বোন।’ এ কথা শুনে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) কান্না করলেন। এরপর বললেন, ‘তোমাদের মতো উচ্চ পর্যায়ের লোকদের ঘর থেকে এমন প্রকৃত ও সত্য তাকওয়াই প্রত্যাশিত। সুতরাং তুমি তাদের আলোতে সুতা কাটবে না।’ (রিসালাতুল মুসতারশিদিন : ৭৫)। আল্লাহর প্রতি তাদের ভয় কত গাঢ় ছিল, তারা হারাম থেকে কত সতর্ক থাকতেন! ইমাম আবু ইউসুফ আল গাসুলি (রহ.) বলেন, ‘আমি ৬০ বছর আমার উপার্জনের হালাল-হারাম নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করেছি।’ (আল হাসসু আলাত তিজারা : ৪৩)।

হারাম,অশান্তি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত