বিবাহ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিবাহের মাধ্যমে বৈধ পন্থায় একজন নারী ও পুরুষের মাঝে গড়ে ওঠে এক বরকতময় সম্পর্ক। ইসলাম বিবাহের বিষয়ে অনেক গুরুত্বারোপ করেছে। পবিত্র এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে নানাবিধ দিক নির্দেশনা দিয়েছে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক সব সময় সমান থাকে না। কখনো কখনো এই মধুর সম্পর্ক মলিন হয়ে যায়। তার ইতি টানতে হয় এক সময়। সামী স্ত্রীর এই বৈবাহিক সম্পর্ক যখন কোন ভাবেই টিকিয়ে রাখা যায় না, তখন ইসলাম তাদের মাঝে তালাকের মাধ্যমে সম্পর্কের ইতি টানতে বলেছে। আমাদের সমাজে এই তালাক দেয়া ও পরবর্তীতে বিবাহ করার ক্ষেত্রে নানা রকম ভুল-ক্রটি ও অসংগতি দেখা যায়। হিল্লা বিয়ে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এ বিষয়ে ইসলামি বিধান বা শরয়ি দৃষ্টিকোণ কী, তা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
হিল্লা বিয়ের পরিচয় : লোকমুখে শোনা ‘হিল্লা’ শব্দটি সঠিক নয়। এটি আরবি শব্দ। আরবীতে শব্দটি হল, ‘হীলাহ্’ অর্থাৎ কৌশল, ফন্দি, ছল, চাতুরী ইত্যাদি। কোন স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দিবে, যেন সে পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে। এটাই প্রচলিত হিল্লা। এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত বা লানত করেছেন। (তিরমিজি: ১১১৯)।
হিল্লা বিয়ে শরিয়তে না জায়েয: হিল্লা বিয়ে না জায়েয। এটি একটি গর্হিত, জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ। মূর্খ, নির্লজ্জ ও অর্থলোভী একশ্রেণির বিদয়াতি আলেম এই নোংরা প্রথা সমাজে চালু রেখেছে। যাতে ইসলামের বদনাম হয় এবং ইসলাম বিরোধীরা সুযোগ পায়। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কাজের ব্যাপারে অভিসম্পাত করেছেন। এ বিয়েকে নিরুৎসাহিত করেছেন। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদের ভাড়াটে পাঁঠা সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি বলেন, সে হলো হিল্লাকারী (হিল্লা বিয়ে করে যে)। আল্লাহ হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয়, তাদের উভয়কে অভিসম্পাত বা লানত করেছেন । (ইবনু মাজাহ: ১৯৩৬)।
পুনরায় প্রথম স্বামীর কাছে ফেরার বিধান : প্রথম স্বামীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের পুরোপুরি ইতি ঘটলে, তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত শেষ হওয়ার পর কোনো চুক্তি ছাড়া কোন পুরুষ যদি সংসার করার জন্য তাকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করে, তারপর স্বাভাবিক ঘর-সংসার করে। স্বামীস্ত্রী হিসেবে শারীরিক সম্পর্ক করে। অতঃপর দুজনের মাঝে বনিবনা না হওয়ায় তালাক হলে বা দ্বিতীয় স্বামী মারা গেলে সেক্ষেত্রে নারী তার ইদ্দত পালনের পর প্রথম স্বামী তাকে আবার বিয়ে করতে পারবে। তখন তাদের মাঝে আগের মতো সম্পর্ক হালাল হবে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, ফলে সে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তার সাথে নির্জনবাস করে, অতঃপর সহবাস ব্যতীতই স্বামী তাকে তালাক দেয়, সে কি পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হবে? নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অপরের সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে এবং সে তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে। (বোখারি: ৫২৬১)।
ইসলামের তালাক সম্পর্কিত বিধানগুলো অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হোক ইসলাম তা চায় না। নিজের স্ত্রী অন্য পুরুষের ঘর করে আসুক এটা সাধারণত কোনো পুরুষ পছন্দ করে না। তাই তালাক দেয়ার সময় এক সঙ্গে তিন তালাক না দিয়ে প্রয়োজনবশত এক তালাকে বাইন দিলে হিল্লা বিয়ের আর দরকার পড়ে না। নতুনভাবে বিয়ে করে নিলেই সম্পর্ক হালাল হয়ে যায়। তাই মূলত পুরুষকে তালাক প্রদানে সতর্ক থাকা জরুরি।