ঢাকা রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউরোপে মুসলমানদের অবদান

ইউরোপে মুসলমানদের অবদান

শেষনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় বিশ্বে দুই পরাশক্তি ছিল- রোম ও পারস্য। রোম বর্তমান ইতালির রাজধানী। তবে সে সময় রোম সাম্রাজ্য বলতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকেই বোঝানো হতো। রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক দিহইয়া কালবি নামক সাহাবির দ্বারা রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে দাওয়াতি চিঠি পাঠানো হয়। এর মাধ্যমেই ইউরোপের একটি অংশে ইসলামের বার্তা পৌঁছে। যে কারণে ইউরোপের সঙ্গে মুসলিম দুনিয়ার সম্পর্ক সেই খলিফাতুল মুসলিমিনের সময় থেকে। তবে ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, তুরস্কে আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) এবং সাইপ্রাসে উম্মে মিলহান (রা.)-সহ কয়েকজন সাহাবি ইসলামের সুমহান আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইউরোপে আসেন। ৭১১ খ্রিষ্টাব্দে তারিক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ৮শ বছর ইউরোপ শাসন করেছে মুসলিমরা। ৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে ইতালিতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। তা ২৬০ বছর প্রতিষ্ঠিত ছিল। ওসমানি খেলাফতকালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসলামের বিস্তার ঘটে। বসনিয়াসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে মুসলিম শাসন কিংবা মুসলিমদের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের কোলোনি রাজ্যসমূহ থেকে শ্রমিক হিসেবে এবং বিভিন্ন পেশায় চাকরিজীবী হিসেবে কিছু মুসলিম ইউরোপে আসেন। এ কারণে ইসলামের শুরু থেকেই ইউরোপ গঠনে মুসলমানরা অবদান রাখেন। ইতালির রেনেসাঁয় ইবনে সিনা, আল-কিন্দি, আল খারিজমিসহ মুসলিম বিজ্ঞানীদের বিরাট অবদান রয়েছে। মুসলিম বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গ্রন্থ ল্যাটিন ও রোমান ভাষায় অনূদিত হয়। আরব শাসনের স্থাপত্যকীর্তি আজও পালেরমোতে বিদ্যমান রয়েছে। ইউরোপের পর্যটকদের জন্য এসব স্থাপত্যকীর্তি অন্যতম আকর্ষণ।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান : বর্তমানে ইউরোপ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত। তারা গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটছে। নতুন নতুন গ্রহ-উপগ্রহ আবিষ্কার করছে। তাদের আবিষ্কারের সুবাদে পুরো পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। ইউরোপীয়দের এ জ্ঞানের হাতেখড়ি হয়েছিল মুসলমানদের ইউরোপে পদচারণার মধ্য দিয়ে। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মুসলিমরা শীর্ষে ছিলেন। সমাজ-সভ্যতা বিনির্মাণে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। অতীতের মুসলিম ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, রসায়নবিদ, চিকিৎসাবিদ, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, স্থাপত্যবিদ, অর্থনীতিবীদ, সমাজবিজ্ঞানী, শিল্পী এবং শিক্ষাবিদ। তারা সমাজ ও মানবতার প্রতি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় চেতনার স্বাক্ষর রেখেছেন। তারা মুক্ত মনের অধিকারী ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সঙ্গে ইতিবাচক এবং সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেছেন।

প্রিন্স চার্লসের স্বীকারোক্তি : মুসলিমদের অতীত গৌরবময় ইতিহাস অনেক মুসলিমও জানেন না। কচিতে ইউরোপ মুসলিমদের কাছ থেকে জ্ঞান ও সভ্যতার আলো নিয়েছিল। ইউরোপ যে মুসলিমদের কাছে ঋণী, এ সত্য এইচ এইচ আর প্রিন্স চার্লস ১৯৯৩ সালের ২৭ অক্টোবর Oxford এর Scheldonian Theatre -এ অনুষ্ঠিত Islam and the West শীর্ষক সেমিনারে প্রকাশ করেন, ‘পশ্চিমে ইসলামের প্রকৃতি সম্পর্কেই যে ভুল ধারণা আছে, কেবল তা নয়; বরং আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিনির্মাণে ইসলাম কী কার্যকর ভূমিকা রেখেছে, সে সম্পর্কেও আমরা বেখবর। আমি মনে করি, এটি আমাদের একটি বড় ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা আমরা ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছি। মধ্য এশিয়া থেকে শুরু করে আটলান্টিকের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত মধ্যযুগের ইসলামি দুনিয়ায় পণ্ডিত আর বিজ্ঞজনরা বিস্মিত হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা ইসলামকে পশ্চিমের শত্রু হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এটিকে একটি অচেনা সমাজ, সংস্কৃতি, ব্যবস্থা ও ধর্মীয় বিশ্বাস বলে মনে করি। সে কারণে আমরা এর মহান অবদানগুলোকে হয় অবজ্ঞা করে আসছি অথবা ইতিহাস থেকে ইসলামের অবদানগুলো মুছে ফেলছি।’

বারাক ওবামার বক্তব্য : ইউরোপ-আমেরিকার সমাজ-সভ্যতা বিনির্মাণে মুসলিমরা অতীতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। বিশেষভাবে, ৭১১ থেকে ১৪৯২ শতাব্দী পর্যন্ত স্পেনে মুসলিম শাসন চালু থাকার সময় গ্রানাডা-কর্ডোভার মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যায়নের জন্য পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ থেকে অমুসলিমরা ভিড় জমাত। স্পেন জ্ঞানচর্চার জন্য এত বেশি খ্যাত ছিল যে, পৃথিবীর কোথাও কোনো বই প্রকাশিত হলে, সেখানে বিক্রি না হলে প্রকাশকগণ বইটি বিক্রির জন্য ছুটে আসতেন। সে সময় ইউরোপ-আমেরিকায় স্পেন অথবা মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সমৃদ্ধ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া বক্তব্যে মুসলিম সভ্যতার এ অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ইতিহাসের একজন ছাত্র হিসেবে আমি জানি, বর্তমান সভ্যতা কতটা ইসলামের কাছে ঋণী। আল-আজহারের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহু শতাব্দী জ্ঞানের আলো বিতরণ করে এসেছে। ইউরোপের পুনর্জাগরণে এবং আলোকিত হবার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। মুসলিমরাই বীজগণিত, ম্যাগনেটিক কম্পাসের মতো যন্ত্র, কাগজ ও ছাপার যন্ত্র, রোগের কারণ এবং তা নিরাময়ের উপায় শিখিয়েছে। ইসলামি সংস্কৃতি আমাদের অতুলনীয় স্থাপত্য আর সময়োত্তীর্ণ কাব্য, সঙ্গীত এবং আত্মিক পূর্ণতার পদ উপহার দিয়েছে। ইতিহাসের সব বাঁকেই ইসলাম কথা ও কাজের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জাতি-গোষ্ঠীসমূহের সমানাধিকারের উদাহরণ তৈরি করেছে।

বরিস জনসনের দায়-স্বীকার : মধ্যযুগীয় ইউরোপে মুসলিমদের অসংখ্য অবদান রয়েছে। একাদশ শতক থেকে ত্রয়োদশ শতকে পর্যন্ত ইসলামি সভ্যতা থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে ইউরোপ। ইউরোপীয় সভ্যতার এ অবদানের কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে বর্তমান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন লন্ডনের মেয়র বরিস জনসন বলেন, ‘ট্রাফালগার শব্দটি এসেছে আরবি থেকে। পশ্চিম স্পেনের তারাফ আল-ঘার বন্দরে নেলসন ১৮০৫ সালে ফরাসি নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেন। লন্ডনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কয়ারের নাম আরবি থেকে আসাটাই প্রমাণ করে, আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা আমাদের ইতিহাসের একক সূত্র সম্পর্কে যত জানতে পারব, ততই আমাদের মধ্যকার অহমিকা কমে আসবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা হয়তো জানতে পারেন কিংবা নাও জানতে পারেন, আমার পরদাদা ১৯০৮ সালে দক্ষিণ লন্ডনে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মুসলিম এবং কোরআনের হাফেজ। অন্তত কোরআনের একটা বড় অংশ তার মুখস্থ ছিল। তিনি নিশ্চয় এখন খুবই অবাক হতেন জেনে যে, তার প্রপৌত্র আজ লন্ডনের মেয়র। আমি এর জন্য গর্বিত।’ এ প্রসঙ্গে মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের সেক্রেটারি জেনারেল ডক্টর আবদুল বারি বলেন, ‘মুসলিমরা ব্রিটেনের সুখ-দুঃখের সঙ্গী। এর উন্নতি, প্রতিরক্ষা এবং মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের সুরক্ষা করে আসছে তারা। আজকের ব্রিটেন তাদের সে প্রচেষ্টারই ফল।

জ্ঞান ও সভ্যতার রাজধানীর অবদান : স্পেনের কর্ডোভা-গ্রানাডায় মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অনেক নিদর্শন আজও বিদ্যমান। সেসব নিদর্শন মুসলিমদের গৌরবদীপ্ত অতীতের সাক্ষ্য দেয়। কর্ডোভার বিখ্যাত মসজিদের পাশে রয়েছে একটি জাদুঘর। সেখানে মুহাম্মদ ইবনে আরাবি, আল্লামা শাওকানিসহ অনেক মুসলিম দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও তাফসিরকারকের জীবনী সংরক্ষিত আছে। মূলত এসব মুসলিম চিন্তাবিদই ইউরোপে জ্ঞানের মশাল জ্বালাতে বিরাট অবদান রাখেন। বিশেষত তাতারদের দ্বারা বাগদাদে মুসলিম সভ্যতার পতন ঘটলে মুসলিমরা স্পেনের কর্ডোভাকেন্দ্রিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। কর্ডোভা শহরে একটু ঘুরলে সহজেই অনুধাবন করা যায়, অতীতে একসময় এটা ‘জ্ঞান ও সভ্যতার রাজধানী’ ছিল। মুসলিম বিজ্ঞানীরা ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা সাধনের ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ছিলেন।

ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানে যাদের অবদান : ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অতীতে যেসব মুসলিম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, তাদের অন্যতম হলেন- ১. আল-খাওয়ারিজমি : অ্যালজেবরার জনক। জিরো, ডিসিমাল সিস্টেম এবং পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র তিনিই উদ্ভাবন করেন। ২. জাবির ইবনে হাইয়ান : রসায়ন শাস্ত্রের জনক। ক্যালসিনেশন ও রসায়নের অনেক মূলনীতি তিনি উদ্ভাবন করেন। তিনি ১০০টির চেয়ে বেশি রচনা করে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অমূল্য অবদান রাখেন। ৩. ইবনে সিনা : চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক। তার লিখিত ‘কিতাবুশ শিফা’ চিকিৎসাবিজ্ঞানের অমূল্য সম্পদ। তিনিই প্রথম গ্লোব-এর ধারণা দেন। ভূমিকম্প, পানির উৎস, মিনারেল, মেঘ ও বৃষ্টি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। ৪. আল-কিন্দি ইবনে ইসহাক : ফিজিক্স-এর অন্যতম জনক। তিনি ২৬৫-এর বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। ৫. আল-বেরুনি : পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কেবলার নির্দেশনা দেন। তিনি ১৫০-এর মতো গ্রন্থ রচনা করেন। ৬. আল-জাহরাবি : আধুনিক সার্জারির জনক। তার লিখিত ‘কিতাবুত তাসরিফ’ ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। ৭. আল-হাইসাম আল-হাজিন : তাকে ফাদার অব মডার্ন অপটিক্স বলা হয়। তিনি দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তার লিখিত ‘কিতাবুল মানাজির’ ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স গ্রন্থ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। ৮. মুসলিম বিজ্ঞানী আবুল হাসান টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন। ৯. কুতুবি প্রথম ঘড়ি আবিষ্কার করেন। ১০. ইউসুফ ইবনে ওমর ৭৯৪ সালে প্রথম কাগজের কারখানা আবিষ্কার করেন। ১১. উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ৭০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম হাসপাতাল স্থাপন করেন। গ্রানাডা শহরে ১৩৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আন্দালুস হাসপাতাল স্থাপিত হয়। মুসলিমরা এ সর্বপ্রথম হাসপাতালে নারী-পুরুষের জন্য পৃথক ওয়ার্ড ও নার্স নিয়োগ করেন। উন্নত সেবা নিশ্চিত করার জন্য রোগীদের রেকর্ড সংরক্ষণ সিস্টেম চালু করেন।

শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অবদান : ইউরোপের শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে মুসলিমদের অবদান রয়েছে। মুসলিমরা স্পেনে প্রথম মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া স্পেনে মুসলিম শাসনামলে মুসলিমদের উদ্যোগে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়, সেভিল বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ ইতালির সালের্নো বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিমরাই স্থাপন করেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইউরোপের সকল অঞ্চল থেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা ভিড় জমায়। গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কর্ডোভাতে মুসলিমরাই প্রথম বিনামূল্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া স্পেন ও সিসিলিতে ইসলামিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করে ইউরোপের শিক্ষার উন্নয়নে মুসলিমরা অবদান রাখেন। এজন্য তৎকালীন লন্ডনের মেয়র, বর্তমান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘লন্ডনের বহুজাতিক কথা ও সহনশীলতা এর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক বর্ণাঢ্যতার কারণ। লন্ডনবাসীর বিনিয়োগ, সঞ্চয় আর ঋণ গ্রহণের ধারা বদলে দিয়ে ইসলামি অর্থব্যবস্থা এর অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। মুসলিমরা আমাদের সমাজের সকল দিকেরই অংশীদার। মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তা, শিক্ষক, বিজ্ঞানী লন্ডনের গাঠনিক অংশ। তাদের অবদান থেকে সকল লন্ডনবাসী উপকৃত হচ্ছেন।’

অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান : ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও মুসলিমরা ইউরোপে অসামান্য অবদান রাখেন। বিশেষত প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর ইউরোপ পুনর্গঠনে মুসলিমরা বিরাট অবদান রাখেন। ইউরোপীয় নাগরিকরা যেসব কাজ করতে সম্মত হতো না, অনেক দেশ থেকে আগত শ্রমিকরা সেসব কাজ করে ইউরোপের সমাজ ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। বিশেষভাবে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শ্রমিক হিসেবে অনেকেই চাকরি করতে এসে ইউরোপের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখেন। এ ছাড়া মিশর, আলজেরিয়া, লিবিয়া, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলিম স্থাপত্যকলার অনেক প্রাচীন নিদর্শন ব্রিটেনসহ ইউরোপের অনেক জাদুঘরে রয়েছে। যেসব স্থাপত্যকলা দেখার জন্য অনেক পর্যটক এখনও ভিড় জমায়। এর মাধ্যমেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। ইসলামি ব্যবসাপদ্ধতি ও ব্যাংকিং সিস্টেম ইউরোপের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যে ভূমিকা রাখছে, তা পোপ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করে মন্তব্য করেন, ‘চলমান বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় ইসলামি ব্যাংকব্যবস্থা সহায়তা করতে পারে। যে নৈতিক মূল্যের ওপর ইসলামি অর্থব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে, তা ব্যাংকগুলোকে তাদের গ্রাহকদের আরো কাছাকাছি নিয়ে আসবে।’ এ ছাড়া ইউরোপের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, সামাজিক অপরাধ দমনে অবদান, বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে সামরিক ক্ষেত্রে অবদান, আদর্শ পরিবার গঠনে অবদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউরোপের আজকের আকাশচুম্বী যেই উন্নতির শেখর, তার পেছনে মুসলিম সভ্যতার এক অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে।

লেখক : ইতিহাসবিদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক ও গণমাধ্যমকর্মী

ইউরোপ,মুসলমান
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত