ঢাকা রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নারীর জন্য নামাজ ও রোজা নিষিদ্ধ যখন

নারীর জন্য নামাজ ও রোজা নিষিদ্ধ যখন

নামাজ ও রোজা গুরুত্বপূর্ণ দুটি ফরজ ইবাদত। এই ইবাদত নারী-পুরুষ সবার ওপর ফরজ। তবে নারীর শারীরিক গঠন ও নারীত্বসুলভ কিছু স্বাভাবিক কারণে তাদের জন্য কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে নামাজ ও রোজা পালন করা নিষেধ। যেসব কারণে নারী নামাজ ও রোজা পালন থেকে শরিয়তসম্মতভাবে বিরত থাকতে পারে এমন কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো।

মাসিক চলাকালে নামাজ-রোজা নিষিদ্ধ : মাসিক হওয়া নারীদেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে সঠিক সময়ে মাসিক শুরু হওয়ার মাধ্যমে নারীদের শারীরিক সুস্থতা ও সন্তান ধারণে সক্ষমতা নিশ্চিত হয়। একজন নারীর মাসিকের সর্বনিম্ন সময় তিন দিন আর সর্বোচ্চ সময় ১০ দিন।? ৩ দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে মাসিক চলাকালীন নামাজ ও রোজা পালন নারীর জন্য নিষিদ্ধ। আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত?। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এ কথা কি ঠিক নয় যে, হায়েজ শুরু হলে মেয়েরা নামাজ আদায় করে না এবং রোজাও পালন করে না। এ হলো তাদের দ্বীনেরই ত্রুটি। ( বোখারি : ১৮২৭)।

এ হাদিসে প্রশ্নসূচক ভঙ্গিতে নারীর নামাজ ও রোজা কখন পালন করতে হয় না তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মাসিক চলাকালে নারীরা রোজা রাখবে না। তবে রমজানের মাসিকের ক্ষেত্রে মাসিক শেষ হলে রমজানের বাকি রোজাগুলো রাখবে। আর রমজান শেষ হলে মাসিকের দিনগুলোতে রাখতে না পারা রোজাগুলো কাজা করে নিতে হবে। কিস্তু নামাজের কোনো কাজা আদায় করতে হবে না।

কোনো নারী যদি (রমজানে) সন্তান জন্ম দেয়, তাহলে সন্তান জন্মদানের সময় থেকে নিয়ে সর্বোচ্চ ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা নারীদের জন্য নামাজকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন। তবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ৪০ দিনের আগেই যদি নারীর রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে পবিত্রতার বিধান শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু রমজানের রোজা নামাজের মতো স্থায়ীভাবে মাফ হবে না। কেননা ইসলামি বিধান মতে হায়েজ বা নিফাস শেষে আবার রোজার কাজা আদায় করতে হয়। মুআজা (রহ.) থেকে বর্ণিত। এক মহিলা আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করল, আমাদের কেউ কি তার হায়েজ এর দিনগুলোর নামাজ কাজা করবে? আয়েশা (রা.) বললেন, তুমি কি হারুরিয়?্যা (খারেজি)? রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে আমাদের কারো হায়েজ হলে পরে তাকে (নামাজ) কাজা করার নির্দেশ দেয়া হত না। (মুসলিম : ৬৫৪)।

নারীর জন্য শিথিল বিধান : আল্লাহতায়ালা গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীর জন্য রোজার হুকুম শিথিল করে দিয়েছেন। দুগ্ধদানকারী নারী রোজা রাখলে যদি সন্তান দুধ না পায় আর ঐ সন্তান অন্য কোনো খাবারেও অভ্যস্ত না হয় তাহলে সন্তানের মৃত্যু বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা দেখা দিলে, স্তন্যদানকারী মা রোজা ভাঙতে পারবেন এবং পরে এ রোজার কাজা আদায় করবেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা মুসাফির থেকে অর্ধেক নামাজ ও রোজা কমিয়ে দিয়েছেন আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী নারীদের জন্য রোজা পালন মাফ করে দিয়েছেন। (তিরমিজি : ৭১৫)।

মাসিক চলাকালীন তাওয়াফ : হজ পালনকালে ঋতুস্রাব হলে তাওয়াফ ছাড়া অন্যান্য আমলগুলো করা যাবে। তবে ফরজ তাওয়াফ পরে পবিত্র হয়ে আদায় করতে হবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী কারিম (সা.) তার কাছে প্রবেশ করলেন। অথচ মক্কা প্রবেশ করার পূর্বেই সারিফ নামক স্থানে তার মাসিক শুরু হলো। তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। নবী কারিম (সা.) বললেন, তোমার কী হয়েছে? মাসিক শুরু হয়েছে না কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটা তো এমন এক বিষয় যা আল্লাহ আদম (আ.)-এর কন্যা সন্তানের উপর নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

সুতরাং তুমি আদায় করে যাও, হাজীরা যা করে থাকে, তুমিও অনুরূপ করে যাও। তবে তুমি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। এরপর আমরা যখন মিনায় ছিলাম, তখন আমার কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এটা কী? লোকজন উত্তর করল, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন। (বোখারি : ৫১৫০)।

হায়েজ নেফাস-অবস্থায় আমল : নারীর মাসিককে আরবিতে হায়েজ বলে। আর সন্তান জন্মদান পরবর্তী রক্ত¯্রাবকে নেফাস বলে। হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করা নিষেধ। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত । নবী কারিম (সা.) বলেছেন, হায়েজ চলা নারী এবং যাদের উপর গোসল ফরজ তারা কোরআনের কিছুই তেলাওয়াত করতে পারবে না। (তিরমিজি : ১৩১)। তবে ওই সময় নারীদের আল্লাহর জিকির, দোয়া, দরুদ ও নেক কাজের সুযোগ আছে। তাই এ সময়ে দরুদ বা বিভিন্ন দোয়া পাঠ করে কিংবা বই পাঠ বা অন্য কোনোভাবে দ্বীন শেখার মাধ্যমে কাজে লাগানো উচিত।

নারী,নামাজ,রোজা,নিষিদ্ধ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত