ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যভিচার রোধে ইসলাম

ব্যভিচার রোধে ইসলাম
প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি আমাদের দেশে ধর্ষণ একটি মারাত্মক ব্যাধির আকার ধারণ করেছে। নাবালক শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ, পর্দাহীন থেকে পর্দানশীন সব শ্রেণির নারীই ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণরোধে ইসলামের কার্যকর দিকনির্দেশনা রয়েছে। নারী-পুরুষ উভয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ধর্ম মেনে চললে ধর্ষণের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। এজন্য প্রয়োজন সর্তকতা, সামাজিকতা ও ধর্ম পালনের আন্তরিক প্রচেষ্টা। শুধু রাষ্ট্রীয় আইন দিয়ে কখনো ধর্ষণ রোধ করা যাবে না। কারণ রাষ্ট্রীয় আইনে ফাঁক ফোকর রয়েছে; যার ছিদ্র পথ দিয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধীও শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যায় কিংবা ধর্ষণের আইনি সংজ্ঞার মারপ্যাঁচে ধর্ষণ শব্দটির অস্তিত্বই বিলোপ হয়ে যায়। তাই নাগরিক সচেতনতা ও ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতার চর্চা ছাড়া এ সমাজ থেকে ধর্ষণের মতো জঘন্য পাপের বিলোপ কখনো সম্ভব হবে না। ধর্ষণ রোধে ইসলামের কার্যকর বেশকিছু রীতিনীতি ও বিধিবিধান আছে। এ নিবন্ধে সংক্ষিপ্তাকারে কিছু নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো।

দৃষ্টি সংযত রাখা : নারী-পুরুষ উভয়েই দৃষ্টি সংযত রাখা আবশ্যক। শুধু নারীর জন্য দৃষ্টি সংযত রাখার বিধান নয়। এ বিধান পুরুষের জন্যও। ধর্ষণের জন্য শুধু নারীর পোশাককে দায়ী করা যাবে না। পুরুষের মন ও চোখকেও নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। কেননা, পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা নারীপুরুষ উভয়কেই দৃষ্টি সংযত রাখার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘মোমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। আর মোমিনা নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সুরা আন-নুর : ৩০-৩১)। সুরা নুরের এ দুটি আয়াতে আল্লাহতায়ালা নারীপুরুষ উভয়কেই পর্দা করার হুকুম দিয়েছেন। বিশেষত চোখ ও যৌনাঙ্গ পবিত্র রাখার আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশ পালন করা প্রাপ্ত বয়স্ক সবার জন্যই আবশ্যক।

পর্নো ছবি ও ভিডিও থেকে দূরে থাকা : আজকাল তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের অনেক কিছুই এখন হাতের মুঠোয়। বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে অশ্লীল ও নোংরা ছবি, ভিডিও দেখা এখন খুব সহজলভ্য। এ সুযোগটাকে ঘৃণা না করে সাদরে গ্রহণ করে অনেক নারী ও পুরুষ প্রেম ও পরকীয়ায় জড়ায়। যার শেষ পরিণতি হয় ধর্ষণের শিকার। সম্প্রতিকালে ঘটিত ধর্ষণের কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, ছোট্ট মেয়েশিশুও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। যে মেয়ে এখনো বুঝে না শরীরের আকর্ষণ বা চাহিদা। সে ছোট্ট অবোঝ শিশুটিও ধর্ষিত হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে পুরুষের অনিয়ন্ত্রিত কাম ও কামনার কুফল। এমন ঘৃণিত ঘটনা একটি জাতির অধোঃপতনের আলামত। চারিত্রিক অবক্ষয় ও অশ্লীলতার ব্যাপক চর্চা ছাড়া এসব ঘৃণিত কাজ কখনো সংঘটিত হতে পারে না। তাই পর্নো দেখা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা আবশ্যক।

গাইরে মাহরামের সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা : একজন পুরুষ যখন কোনো গাইরে মাহরাম নারীর সান্নিধ্যে আসে, সে নারী যতই পর্দাশীলা হোক না কেন, তার সামনে সেই পুরুষের কুপ্রবৃত্তিকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। আ’তা ইবনু আবী রবাহ (র.) হতে বর্ণিত, ‘যদি আমাকে বাইতুলমালের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়, আমি অবশ্যই বিশ্বস্ত থাকতে পারব। কিন্তু আমি আমার নিজের নফসকে কোনো কুৎসিত দাসীর নিকটও নিরাপদ ও বিশ্বস্ত মনে করি না।’ বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবাধ বিস্তৃতির কারণে পুরুষরা এমনিতেই নারীদের দৈহিক গঠন সম্পর্কে অবগত; তার ওপর নারীদের সাথে অপ্রয়োজনে হাসি-ঠাট্টায় মজে থাকলে তার মনের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তাই প্রয়োজন ছাড়া অনলাইন কিংবা অফলাইনে নারীদের সাথে অযথা চ্যাটিং থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে সাক্ষাতে মিলিত হলে নিঃসন্দেহে তৃতীয়জন হয় শয়তান।’ ( তিরমিজি : ৪ / ৪৬৫) ।

পর্দার আড়াল থেকে কথা বলা : আমাদের সমাজে এমনও অনেক পুরুষ আছেন যারা নিজেদের স্ত্রী, কন্যা, ভগ্নিকে গাইরে মাহরামের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে বিরত থাকার কড়াকড়ি নির্দেশ দিয়ে থাকেন; কিন্তু নিজেরাই অনেক সময় গাইরে মাহরাম নারীদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকেন। ইসলামে এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা তার নবীজি (সা.)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমার এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার বিষয়।’ (সুরা আহযাব : ৫৩)। ইমাম কুরতুবি (রহ.) উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, ‘এ আয়াতে রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। অন্যান্য সকল মোমিনা নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।’ (তাফসিরে কুরতুবি : ১৪/২২৭) কিন্তু গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাও জায়েজ নেই।

যথাসময়ে বিয়ে করা : বেকারত্বের অজুহাতে আমাদের সমাজে বিয়েপ্রথা কঠিন হয়ে পড়েছে। যার কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও তরুণ-তরুণীরা বিয়ে না করতে পেরে জড়িয়ে যাচ্ছে অবৈধ প্রেম, ভালোবাসায়। তাই সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরপরই তার বিয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। বিয়ে মানুষের ক্যারিয়ারের সাথে সম্পর্কিত নয় বরং যৌবনের সাথে সম্পর্কিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিয়েহীন তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও; তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। (সুরা আন-নুর : ৩২)।ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেই শুধু নারীর পর্দাকে দোষারোপ না করে পুরুষকেও চারিত্রিকভাবে পবিত্র থাকার চেষ্টা করা জরুরি। নারী-পুরুষ উভয়ের মন-মানসিকতা পবিত্র রাখলে এবং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা হলে সমাজ থেকে ধর্ষণ-ব্যভিচার পুরোপুরিভাবে বিদায় নেবে। ফাঁক-ফোকরের আইন দিয়ে কখনো ধর্ষণ প্রতিরোধ করা যায় না। আইনি প্রক্রিয়ার নানান ঘটনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট ও প্রমাণিত।

লেখিকা : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ব্যভিচার,ইসলাম
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত