ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সদকাতুল ফিতর কীভাবে আদায় করব

সদকাতুল ফিতর কীভাবে আদায় করব

সদকাতুল ফিতর কী : রোজাদারের অনর্থক কথা, কাজকর্ম ও ছোটো ছোটো ত্রুটির ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইসলামি শরিয়তে সদকাতুল ফিতরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) সদাকাতুল ফিতর জরুরি সাব্যস্ত করেছেন, যা রোজাদারের জন্য বেহুদা কথা ও অশ্লীল কাজকর্ম থেকে রোজাকে পবিত্র করার উপায় এবং মিসকিনদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করে আল্লাহর নিকট তা মকবুল জাকাত বলে গণ্য হয়। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পর আদায় করে তাও সদাকাগুলো থেকে একটি সাদাকা হিসেবে পরিগণিত হয়। (আবু দাউদ : ১৬০৯, ইবনে মাজাহ : ১৮২৭)। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, ঈদুল ফিতরের দিন ভোরে যে সদকা ওয়াজিব হয় তাকে সদকায়ে ফিতর বলে। কোনো কোনো ফকিহ আলেমের মতে সদকাতুল ফিতর এমন সদকাকে বলে,যা ইবাদত এবং দয়াপরবশতার বন্ধন হিসেবে দেয়া হয়।

সদকায়ে ফিতরের হুকুম : যে ব্যক্তি জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ছাড়া এ পরিমাণ মালের মালিক যার উপর জাকাত ফরজ, তার উপর ঈদুল ফিতরের দিন সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। (হিদায়াা ১/২০৮)।

সদকায়ে ফিতর কখন ওয়াজিব : ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় হতে সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়। কাজেই রোজা পালন শেষে ঈদের খুশিতে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক মুসলমানের পরিবারের প্রতিটি সদস্য এমনকি ঈদের দিন সুবহে সাদেকের পূর্বে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তার পক্ষ থেকেও তা আদায় করা ওয়াজিব। (ইলমুল ফিকহ : ৪/৫১, দারুল উলুম : ৬/৩১৩, কিতাবুল ফাতাওয়া : ৩/৩৫৪)। উল্লেখ্য, ঈদের আগে রমজান মাসের যেকোনো দিন সদকাতুল ফিতর আদায় করলে তা আদায় হবে।

কে আদায় করবে : নিসাব পরিমাণ মালের অধিকারী ব্যক্তির উপর তার মাল থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। (শরহে বেকায়া : ১খন্ড সদকায়ে ফিতর অধ্যায়)।

আর বোধসম্পন্ন, সাবালক সন্তানের পক্ষ থেকে সদকা ফিতর আদায় করা বাবার জন্য জরুরি নয়। কিন্তু সে যদি বাবার লালন-পালনে থাকে আর পিতা তার পক্ষ থেকে আদায় করে দেন তবে তা বৈধ আছে। (বাহরুর রায়িক : ২/২৫২, বাদায়েউস সানায়ে : ২/৫৩৩-৫৩৬)। নিজ গৃহের কাজের লোকদের পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করা উচিত তবে আবশ্যক নয়। (কিতাবুল ফাতাওয়া ৩/৩৫৭)। স্ত্রীর সদকায়ে ফিতর স্বামীর উপর ওয়াজিব নয়। তবে স্ত্রীর পক্ষ থেকে আদায় করে দিলে আদায় হয়ে যাবে । এতে অনুমতি নিয়ে হোক বা না হোক। (আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৩৮৫)।

কখন আদায় করবে : ঈদের নামাজের আগে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। এ সময় যদি আদায় না করা হয়,তবে পরে যখন ইচ্ছা আদায় করতে পারবে। পরে যখনই তা আদায় করা হবে তা আদায় বলে গণ্য হবে,কাজা বলা যাবে না। (বাদায়ে উস সানায়ে : ২/৫৪৬)।

কী দিয়ে আদায় করবে : পাঁচ প্রকার খাদ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। হাদিস থেকে এমনটাই প্রমাণিত। পাঁচ প্রকার খাদ্য হলো : যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম।

পরিমাণে পার্থক্য : উপরোক্ত পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক সা’ দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। সবগুলোর ওজন সমান নয়। খাদ্যভেদে আদায়ের ক্ষেত্রে ওজনের কমবেশ আছে। তাই মূল্যের ক্ষেত্রেও এ পার্থক্য থাকবে।

এ বছর ফিতরার পরিমাণ : এ বছর জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা আর সর্বোচ্চ ২হাজার ৮০৫ টাকা সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করা হয়েছে। ১১ মার্চ ২০২৫ রোজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি আবদুল মালেক।

পাঁচটি খাদ্যদ্রব্যের মূল্য হিসেবে এ বছরের ফিতরা নিম্নরূপ : ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ নিচে উল্লেখ করা হলো : গম বা আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬শ’ ৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য হিসেবে ১১০ (একশ দশ) টাকা প্রদান করতে হবে। যব দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৫৩০ (পাঁচশ ত্রিশ) টাকা, খেজুর দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২,৩১০ (দুই হাজার তিনশ দশ) টাকা, কিসমিস দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১,৯৮০ (এক হাজার নয়শ’ আশি) টাকা ও পনির দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২,৮০৫ (দুই হাজার আটশ পাঁচ) টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে।

লেখক : মুহাদ্দিস ও গণমাধ্যমকর্মী

সদকাতুল ফিতর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত