ঢাকা রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যে আমলে দূর হবে দারিদ্রতা

যে আমলে দূর হবে দারিদ্রতা

ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘এ কারণেই যে ব্যক্তি এ আয়াতের নির্দেশ অনুযায়ী আল্লাহতায়ালার ইবাদত করে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য উভয় জাহানে নিরাপদ ও শংকামুক্ত থাকার ব্যবস্থা করে দেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইবাদতের প্রতি বিমুখ হয়, তার কাছ থেকে উভয় প্রকার শান্তি ও নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।’ অন্য এক আয়াতে আছে, ‘আল্লাহতায়ালা একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। এক জনপদের অধিবাসীরা সর্বপ্রকার বিপদাশঙ্কা থেকে মুক্ত হয়ে জীবনযাপন করত। তাদের কাছে সব জায়গা থেকে প্রচুর পরিমাণে জীবনোপকরণ আসত। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতসমূহের না-শোকরি করল এবং আল্লাহতায়ালা তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের ক্ষুধা ও ভয়ের স্বাদ আস্বাদন করালেন।’ (সুরা নাহল : ১১২)। আবুল হাসান কাজবিনি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শত্রু বা বিপদের আশঙ্কা করে, তার জন্য সুরা কোরাইশের তেলাওয়াত নিরাপত্তার রক্ষাকবচ।’ এ কথা উদ্বৃত করে ইমাম জাযারি (রহ.) বলেন, ‘এটা পরীক্ষিত আমল।’ কাজী সানাউল্লাহ পানিপথি (রহ.) তাফসিরে মাজহারিতে বলেন, ‘আমাকে আমার মুর্শিদ মির্জা মাজহার জানজানা (রহ.) বিপদাপদের সময় এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ দিয়েছেন। বলেছেন, প্রত্যেক বালা-মসিবত দূর করার জন্য এটা পরীক্ষিত এবং অব্যর্থ।’ কাজী সানাউল্লাহ (রহ.) আরও বলেন, ‘আমি বারবার এটা পরীক্ষা করেছি।’ (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন : ৮/৮২৪)।

ব্যবসার আদর্শ সময় : প্রত্যেক কাজের একটি আদর্শ সময় থাকে। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করা হলে যেমনিভাবে সবকিছুতে বরকত ও কল্যাণ পাওয়া যায়, তেমনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও সফলতা অর্জিত হয়। ব্যবসায় বরকত ও প্রাচুর্য লাভের আদর্শ সময় হচ্ছে ভোরবেলা। সাত সকালে কর্মব্যস্ততা, ব্যবসা এবং জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে অহরহ কল্যাণ আসে। কেননা, সকালের স্নিগ্ধ সময়টি অত্যন্ত বরকতপূর্ণ। তা ছাড়া প্রিয়নবী (সা.) এ সময়ের বরকত ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে দোয়া করেছেন। সাখার আলগামেদি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের (কাজকর্মে) ভোরবেলায় বরকত দান করুন।’ রাসুল (সা.) বড় বাহিনী কিংবা ক্ষুদ্র কোনো যোদ্ধাদল কোথাও পাঠালে ভোরবেলায় পাঠাতেন। (এ হাদিসের বর্ণনাকারী) সাখার (রা.) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসায়ী কাফেলাকেও কোথাও পাঠালে ভোরে পাঠাতেন। ফলে তিনি ধনী ও প্রভূত সম্পদের অধিকারী হয়ে ওঠেন। (তিরমিজি : ১২১২)।

বেদনার কথা হলো, অধিকাংশ মানুষ এ কল্যাণকর সময়ে ঘুমের ঘোরে বিভোর থাকে।

শয়তানের কাছে পরাজয় লাভ করেই দিনের সূচনা করে। কাকডাকা ভোরে কিচিরমিচির আওয়াজে মেতে ওঠে নানা প্রজাতির পাখি।

অথচ সৃষ্টির সেরা জীব মানবজাতির ঘুম ভাঙে রাঙা সূর্যের প্রখর আলোয়। সকালের সুনসান নীরবতায় অপার্থিব ভালোলাগা কাজ করে। সেই সোনালি সময়ে যে কোনো কাজ করা যায় পরম স্বস্তি ও মুগ্ধতায়। যারা এ সুবর্ণ সুযোগকে লুফে নেয়, তাদের রিজিকে বরকত আসে অকল্পনীয়ভাবে।

ব্যবসায় সততা অপরিহার্য : ইসলাম উপার্জনের পেশা হিসেবে হালাল পথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে যেমন উৎসাহিত করে, তেমনি অবৈধ পন্থায় অর্থোপার্জনকে চরম ঘৃণার চোখে দেখে। মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার ঘৃণ্য মানসিকতা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। দৃষ্টি ভ্রমের কারণে সাময়িক লাভ পরিলক্ষিত হলেও এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কাজেই অন্যায়, জুলুম, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, কালোবাজারি ইত্যাদি খুবই জঘন্য কাজ। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক চাকাও স্থবির হয়ে পড়ে। তা ছাড়া এর ফলে আল্লাহর ভয়ানক আজাবও ধেয়ে আসতে পারে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ফাসেক বা গোনাহগাররূপে তোলা হবে; কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহতায়ালাকে ভয় করে নির্ভুলভাবে কাজ করে এবং সততা ধারণ করে, তারা এর ব্যতিক্রম।’ (তিরমিজি : ১২১০)।

ইবাদতকে অগ্রাধিকার দেয়া : ধন-সম্পদের মোহে পড়ে অর্থ উপার্জনে ব্যস্ততার অজুহাতে ইবাদতের শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো যথা- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি যথানিয়মে আদায় করতে হবে। নামাজের সময় ব্যবসা বন্ধ রেখে মসজিদমুখী হতে হবে। তবেই ব্যবসায় নেমে আসবে আসমানি বরকত ও অবারিত কল্যাণ। এমন নেককার ব্যবসায়ীদের প্রশংসায় পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন বহু অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা নুর : ৩৭)।

লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম কৈয়গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

আমল,দারিদ্রতা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত