বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

  শরিফ আহমাদ

বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক হতে হয় মা-মেয়ের মতো। একজন আদর্শ বউ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান দিয়ে থাকে। মনেপ্রাণে ভালোবাসার নজির পেশ করেই আদর্শ বউ হতে হয়। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়ি পুত্রবধূর সুবিধা-অসুবিধার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হয়। নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসার বন্ধনে আগলে রাখতে হয়। ছেলের বউ শ্বশুর-শাশুড়ির কল্যাণেই স্বামীর হাত ধরে নতুন ঠিকানায় আসে। এ নতুন ঠিকানাকে জান্নাতময় করতে হলে বউ শাশুড়ির মাঝে সমঝোতা জরুরি। উন্নত আখলাকের চর্চা আবশ্যক। উত্তম ও উন্নত আখলাক ছাড়া কেউ কখনও কারো প্রিয়ভাজন বা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিতে পরিণত হয় না। এটাই সব সম্পর্কের মূল কথা। গুড রিলেশনের নেপথ্য রহস্য। শাশুড়ির অনেক অবদান আছে তার সংসারে। তিনি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তার সংসার। নিজে ক্ষয়ে গিয়ে গড়েছেন সন্তান। এসব মনে রেখে বউ যখন শাশুড়ির সামনে উপস্থিত হয়- সে বউ ও শাশুড়ি সদা সুখময় জীবন যাপন করে। সর্বজন বিদিত, সংসারে সুখ আসে কৃতজ্ঞতা থেকে। একজন বউ সংসারে এসেই শাশুড়ির সবকিছু কেড়ে নিতে চাইলে সেখানে অশান্তি বিরাজ করাটা আবশ্যক। এটাই হচ্ছে এখন দেশজুড়ে। যা অনাকাঙ্ক্ষিত। ধর্ম অসিদ্ধ। তাই কৃতজ্ঞতাবোধ জীবনে খুব জরুরি।

এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস রয়েছে। তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না। (আবু দাউদ : ৪৭৩৬ )।

শাশুড়ির জুলুম কাম্য নয় : একজন পুত্রবধূ নিজের মাতা-পিতা ,আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশে আসে। সংসারে তার মন বসা কিংবা কাজে কর্মে দক্ষ হয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। মানবিক কারণে তার প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। সামান্য ভুল ত্রুটির জন্য ঝগড়াঝাটি ও শাশুড়ি কর্তৃক বউকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সম্পূর্ণ জুলুম। শাশুড়িরা সাধারণত বউদের খোটা দেয়। বউদের দোষ ধরে ঝগড়া করে। এটা বর্জনীয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল¬াহর নিকট সেই লোক সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে। (বোখারি : ২২৯৫)।

নিজের কাজে হেলা নয়: সাংসারিক কাজ নারীদের দায়িত্ব। এটা কোন বাড়তি বোঝা নয়। এই বুঝ বউ শাশুড়ির মধ্যে থাকলে অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ফাতেমা (রা.) এর জীবনী থেকে নারীদের অনেক শিক্ষা রয়েছে। তিনি সংসারের কাজে প্রচুর পরিশ্রম করতেন। রাসুল (সা.) আহলে সুফফা ও বিধবাদের প্রয়োজনের অগ্রাধিকার দিয়ে তাকে আল¬াহর হাতে সোপর্দ করেছিলেন। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। ফাতেমা (রা.) আটা পিষার কষ্টের কথা জানান। তখন তার নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, রাসুল (সা.)-এর কাছে কয়েকজন বন্দী আনা হয়েছে। ফাতেমা (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে একজন খাদেম চাইলেন। তিনি তাকে না পেয়ে তখন তা আয়েশা (রা.)-এর কাছে উলে¬খ করেন। তারপর রাসুল (সা.) এলে আয়েশা (রা.) তার কাছে বিষয়টি বললেন। আলী (রা.) বলেন, নবী (সা.) আমাদের কাছে এলেন। তখন আমরা শয্যা গ্রহণ করেছিলাম। আমরা উঠতে উদ্যত হলাম। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাকো। আমি তার পায়ের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা যা চেয়েছো আমি কি তোমাদের তার চাইতে উত্তম বস্তুর সন্ধান দেবো না? তিনি বললেন, যখন তোমরা শয্যা গ্রহণ করবে তখন ৩৪ বার আল¬াহু আকবার, ৩৩ বার আলহামদুলিল¬াহ এবং ৩৩ বার সুবহানাল¬াহ বলবে। এটা তোমাদের জন্য তার চাইতে উত্তম যা তোমরা চেয়েছো। (বোখারি : ২৮৯৩)।

শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা : কোরআন ও হাদিসে পিতা মাতার সেবা করার দায়িত্ব ছেলেকে দেয়া হয়েছে। পুত্রবধূর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি। তাকে সেবা করতে বাধ্য করা নিষেধ। সে কাজের মেয়ে নয়। তবুও নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের ভিত্তিতে তাকে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করতে হয়। এটাকে পরম সৌভাগ্য ও সাওয়াবের মাধ্যম বানিয়ে নিতে হয়। কেননা শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার নমুনা সাহাবীদের যুগেও ছিল। কাবশা বিনতে কাব ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি আবু কাতাদা (রা.)-এর পুত্রবধূ ছিলেন। একদা আবু কাতাদা গৃহে আগমন করলে তিনি তাকে অজুর পানি এগিয়ে দিলেন...। ( আবু দাউদ : ৭৫)।

লেখক : কবি ও আলেম