ঢাকা সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সমকামিতার ক্ষতিকর প্রভাব ও সামাজিক বিপর্যয়

সমকামিতার ক্ষতিকর প্রভাব ও সামাজিক বিপর্যয়

সমকামিতা (Homosexualit) হলো এমন একটি যৌন প্রবৃত্তি, যার ফলে মানুষ তার সম লিঙ্গের মানুষের প্রতি রোমান্টিকতা বা যৌন আকর্ষণ অনুভব করে। সমকামী দুই ধরনের। পুরুষ সমকামী ও নারী সমকামী। পুরুষ সমকামীদের গে এবং নারী সমকামীদের লেসবিয়ান বলা হয়। আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও চিকিৎসা অনুযায়ী সমকামিতা কোনো মানসিক রোগ নয় এবং ১৯৭৩ সালে American Psychiatric Association (APA) এটিকে মানসিক রোগের তালিকা থেকে বাদ দেয়। তবে ইসলাম ধর্মমতে সমকামিতা স্পষ্ট হারাম ও গোনাহের কাজ। মূলত নারী নারীর সঙ্গে, পুরুষ পুরুষের সঙ্গে যৌন আচরণের মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা পূরণ করাকে সমকামিতা বলে। এটা বিকৃত রুচির পরিচয়। মানুষের জন্মগত ও সাধারণ নিয়ম পরিপন্থি।

সমকামিতার ইতিহাস : ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমকামিতা বিষয়টি প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান। মেসোপটেমিয়া, গ্রিস ও রোমান সভ্যতা থেকে শুরু করে মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগ পর্যন্তও তা বিস্তার লাভ করেছে। ইসলামে লুত (আ.)-এর জাতির সমকামিতার এক ভয়ানক কাহিনি সকলেরই জানা। এছাড়া প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত সমকামিতার সম্পর্ককে ‘পেডেরাস্টি’ নামকরণ করা হয়েছিল।

আইন ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা : কিছু কিছু দেশে (ইউএসএ, ভারতসহ পশ্চিমা কিছু দেশ) সমকামিতা স্বীকৃত হলেও বেশির ভাগ দেশে (সৌদি আরব, ইরান, আফগানিস্তান ইত্যাদি) এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশেও সমকামিতা আইনত দণ্ডনীয় (দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী)।

সমকামিতা গড়ে ওঠার কারণ : মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, জন্মগত ও পরিবেশগত সামাজিক কারণে মানুষ সমকামী হয়ে উঠতে পারে। তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। আবার এটি কোনো মানসিক রোগও নয়। এটি এক ধরনের প্রবৃত্তি। যা কোন ব্যক্তিকে ধর্মীয়, সামাজিক, প্রাকৃতিক, নৈতিক, দর্শনগত দিক থেকে প্রকৃতির নিয়মবহির্ভূত এক জগতে ঠেলে দেয়। অসৎ সঙ্গ ও নগদ অর্থে প্রলুব্ধ হয়েও অনেকে নিজের অজান্তে সমকামিতায় নিজেকে যুক্ত করে নেয়। বিশেষত বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কোনো গরিব দেশের নাগরিক নিজের কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করার আকাঙ্ক্ষায় বা প্রবণতায় সমকামী সংঘের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। ট্রান্সজেন্ডারের মাধ্যমে সমকামিতাকে স্বাভাবিক ও সহজ করে সমাজে ভিন্ন একটি সংস্কৃতি দাড় করানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। যা এরই মধ্যে দেশে-বিদেশে ব্যাপক হারে পরিলক্ষিত হয়েছে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ : ইসলামসহ খ্রিষ্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মে সমকামিতাকে প্রশ্রয় দেয় না। ইসলামের সমকামিতাকে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত লুত (আ.)-এর জাতির বাস্তবিক পরিণতি এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। সমকামিতার জন্য আল্লাহ পুরো জাতির উপর কঠোর শাস্তি বর্ষণ করেছিলেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর যখন আমার আদেশ এলো, আমি সে জনপদকে উল্টে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে প্রস্তরবর্ষণ করলাম। (সুরা হুদ : ৮২-৮৩)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমরা কামবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য কি পুরুষদের কাছে গমন করো নারীদের পরিবর্তে? বরং তোমরা তো নির্বোধ জাতি।’ (সুরা আন-নামল : ৫৫)। খ্রিষ্টধর্মেও সমকামিতা পাপ হিসেবে বিবেচিত। বাইবেলে বলা হয়েছে, ‘তুমি পুরুষের সাথে শয়ন করবে না, যেমন নারীর সঙ্গে শয়ন করা হয়; এটি একেবারেই ঘৃণ্য।‘লেবীয় বিধান (Leviticus 18:22)। হিন্দুধর্মে সমকামিতা নিয়ে সমালোচনা করে শাস্ত্রে উল্লিখিত আছে। ‘একজন পুরুষ যদি অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করে, তাহলে তাকে কঠোর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।’ (মনুসংহিতা :৮/৩৭০)।

প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ : সমকামিতা জৈবিক চাহিদা ও মানব জীবন ও শরীরের কল্যাণকর সার্বিক প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম। এ বিষয়ে প্রাকৃতিক কিছু যুক্তি রয়েছে। যেমন :

প্রজনন অক্ষমতা : সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব নয়। সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম এমন জুটি বা তথাকথিত দম্পতি কখনও সুখী হতে পারে না। এ জাতীয় সম্পর্ক আনন্দময় হয় না। টেকসইও হয় না। উল্টো সামাজিক বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। যা অযাচিত।

পশুপাখির মতো আচরণ : গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণিজগতের কিছু প্রজাতির (ডলফিন, বানর, সিংহ, পেঙ্গুইন ইত্যাদি) মধ্যে সমকামিতার প্রবৃত্তি দেখা যায়। তবে তা সাময়িক। কিন্তু মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, মনন মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে। অন্যথায়, সমকামিতা মানুষকে পশুপাখির আচরণের সঙ্গে সহাবস্থানে দাঁড় করায়। মানুষকে পশুর কাতারে নামিয়ে দেয়। এটা খুবই লজ্জার ও অনাকাঙ্ক্ষিত।

সামাজিক দৃষ্টিকোণ : সামাজিক বিভিন্ন যুক্তি সমকামিতাকে নিরুৎসাহিত করে। যেমন :

ভঙ্গুর পারিবারিক কাঠামো : যেহেতু সম লিঙ্গের ব্যক্তিরা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে সক্ষম নয়। তাই সন্তান হিসেবে দত্তক নেয়া সন্তান তাদের লালন পালন করতে হয়। যেখানে শিশুটি প্যারেন্টাল সম্পর্ক, ভালোবাসা ও বিকাশ থেকে বঞ্চিত হয়।

সমকামীদের মানসিক স্বাস্থ্য : গবেষণায় দেখা গেছে, সমকামীদের মাঝে আত্মহত্যা, হতাশা, অবসাদগ্রস্ততার প্রবণতা বেশি। বিভিন্ন যুক্তি থেকে এটি প্রমাণিত হয়, সমকামিতা একটি সামাজিক ব্যাধি। যার ক্রম বিস্তার হতেই থাকলে সামাজিক, ধর্মীয়, বাস্তবিক অর্থে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। আবার যারা সমকামী তারাও এই সমাজেরই মানুষ। তাই তাদের অবহেলা-ঘৃণা না করে বিভিন্নভাবে সতর্ক ও সচেতন করে তুলতে হবে এই ‘সমকামিতা’ নামক জীবনবিনাশী বিকৃত অভিরুচির কালচার থেকে ।

প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় : সমকামিতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সমাজ থেকে সমকামিতাকে দূর করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন কার্যকর প্রতিকার ও প্রতিরোধের পদক্ষেপ। এ লক্ষ্যে নিম্ন বর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

১. ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসন বৃদ্ধি।

২. কাউন্সেলিং ও কগনিটিভ বিহ্যাবিয়রাল থেরাপি (CBT) গ্রহণ।

৩. পুরুষ-নারী সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন।

৪. পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার বিস্তার।

৫. পারিবারিক বন্ধন ও দাম্পত্য জীবন গঠন।

৬. সুষ্ঠু বিনোদনের ব্যবস্থা।

৭. যৌনতা বিষয়ে সুস্থ রুচিবোধ ও বিকৃত রুচিবোধ কী তা ভালোভাবে জানা।

৮. ধর্ম ও সামাজিকতার চর্চা বৃদ্ধি করা। সমকামিতা একটি ঘৃণিত আচরণ। বিকৃত রুচির নোংরা যৌনতা। তাই সভ্য জাতির উচিত সুস্থ সমাজ ও সামাজিকতা বজায় রাখতে সমকামিতাকে প্রতিরোধ করা। সমকামীদের প্রতি দ্বীনি দাওয়াত ও মানবসভ্যতার বাস্তবসম্মত সংস্কৃতির শান্তিময় সদর দরজায় স্বাগত জানানো।

লেখিকা : শিক্ষার্থী, সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সমকামিতা,প্রভাব,সামাজিক বিপর্যয়
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত