ঢাকা ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিজ যোগ্যতায় ভাইভায় ডাক পেয়েছিলেন শিবির সভাপতি মোবারক

নিজ যোগ্যতায় ভাইভায় ডাক পেয়েছিলেন শিবির সভাপতি মোবারক

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক পদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোবারক হোসাইনের ভাইভায় ডাক পাওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বিতর্ক ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসারে মোবারক হোসাইন ভাইভায় ডাক পাওয়ার যোগ্যতা পূরণ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্লানিং কমিটি প্রভাষক পদে ২৮টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে ২৬ জন প্রার্থীকে যোগ্য বিবেচনা করে সুপারিশ করেন। সেই অনুযায়ী ২৬ জন প্রার্থীর ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে কোনো অসামঞ্জস্যতা না থাকলেও গত ৩১ ডিসেম্বর বিভাগটির প্লানিং কমিটি পুনরায় আরেকটি সভা আহবান করে। সেখানে ২৭নং প্রার্থী মোবারক হোসাইনের সব যোগ্যতা পূরণ হলেও বিভাগীয় প্লানিং কমিটি তার প্রার্থিতা বাতিল করে প্রশাসনকে চিঠি দেয়। পরে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হলে সমালোচনার সৃষ্টি হয় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, কোনো কারণ না থাকলেও গত ৩১ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্লানিং কমিটির সভা আহবান করা যুক্তিযুক্ত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, বিভাগের প্লানিং কমিটি শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির নীতিমালা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং ও শর্তের বাইরে গিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর নতুন করে প্লানিং সুপারিশ পাঠায়। বিভাগ থেকে প্লানিং কমিটি গত ৪ ডিসেম্বর প্রার্থীকে ডাকার সুপারিশ করলেও কোনো কারণ ছাড়া ৩১ ডিসেম্বর নতুন করে না ডাকার সুপারিশ করে। বিষয়টি আমাদেরও বিব্রত করল এবং প্রার্থীকেও বিব্রত করল।

গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অথবা ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ থাকার শর্ত দেয় কর্তৃপক্ষ। মোবারকের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ৩ দশমিক ৯০। তিনি ২০০৩ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে পাশ করেন।

তবে ২০০৯ সালের ২ জুন প্রকাশিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে অর্জিত জিপিএ ৩.৫০ হলে তা প্রথম বিভাগ হিসেবে গণ্য হবে। সেই হিসেবে মোবারক উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগ পেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সব শর্তাবলিই পূরণ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য- ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মোবারক হোসাইনের ডাক পাওয়া বৈধ। এছাড়াও শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন নীতিমালায়ও চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শিথিল করা যাবে বলে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, শিবিরের সাবেক এই সভাপতি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরি করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালার ১০নং সাধারণ নিয়মাবলিতে বলা হয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে কর্মরত শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শিথিল করা হইয়াছে। এসএসসি হতে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত এই নিয়ম কার্যকর হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার আরও বলেন, বিভাগীয় প্লানিং কমিটি প্রথমে ২৬ জনের নাম পাঠায়। পরবর্তীতে তারা ১ জন প্রার্থীর ভুলের কথা বললে তখন আমরা প্রার্থীর যোগ্যতা এনালাইসিস করি প্রশাসন থেকে। সেখানে দেখলাম সেই প্রার্থী সব ক্রাইটেরিয়া পূরণ করেছে এবং সে যোগ্য। তবে প্লানিং কমিটি বিষয়টি ইউজিসির নির্দেশনা, আমাদের বিজ্ঞাপন ও শর্তের বিষয়গুলো বিবেচনায় না এনে উল্টো ৩১ ডিসেম্বর নতুন করে প্লানিং সুপারিশ পাঠিয়ে আমাদেরও বিব্রত করল এবং প্রার্থীকেও বিব্রত করল।

প্লানিং কমিটি প্রথমে সুপারিশ করলে পরে কোনো কারণ ছাড়া ভাইভায় না ডাকার পক্ষে দাঁড়ায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রধান ও প্লানিং কমিটির সভাপতি ড. শেখ মকছেদুর রহমান মোবাইল ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। বিভাগে যাওয়ার কথা বললে আজ (বৃহস্পতিবার) তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন না বলে জানান।

প্লানিং কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মাকসুদুল করিম বলেন, বিভাগ থেকে ভুলের কারণে বিষয়টি জটিল হয়ে গেল। এটি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমরা বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই সুপারিশ করে থাকি। সেখানে জিপিএ-৪.০০ এর কথা বলা হয়েছে এবং শর্ত শিথিলের কথা উল্লেখ নাই। আবার অভিন্ন নীতিমালাতে শর্ত শিথিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১০ সালের প্রজ্ঞাপনে ৩ দশমিক ৯০ যেটিকে প্রথম বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটির বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

এ বিষয়ে মোবারক হোসেন বলেন, নিয়মানুযায়ী আমি প্রথম বিভাগ হিসেবেই আবেদন করেছি। এরপরও কোনো কারণ ছাড়াই বিষয়টি নিয়ে এত সমালোচনা হওয়া আমার জন্য বিব্রতকর।

ভাইভা,শিবির,মোবারক,কুবি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত