না ফেরার দেশে চলে গেলেন কাজী শাহেদ আহমেদ

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০৯ | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের আধুনিক সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদ চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রাজধানীর একটি হাসপাতালে আজ সোমবার সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

কাজী শাহেদ আহমেদের মেজো ছেলে বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কাজী শাহেদ আহমেদ খবরের কাগজ নামে একটি পত্রিকারও প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

দেশের বিশিষ্ট এই শিল্প উদ্যোক্তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠানের কর্মী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি অঙ্গনেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার স্ত্রী আমিনা আহমেদ বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে কাজী নাবিল আহমেদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এবং যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মেজো ছেলে কাজী আনিস আহমেদ খ্যাতিমান লেখক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন, ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন ও সাহিত্য পত্রিকা বেঙ্গল লাইটস-এর প্রকাশক। ছোট ছেলে কাজী ইনাম আহমেদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের আধুনিক সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক কাজী শাহেদ আহমেদ জীবনের বেশিরভাগ অংশজুড়ে নতুন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। পত্রিকা, ব্যবসা কিংবাশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবকিছুতেই নতুনত্বের ছোঁয়া তার হাত দিয়ে। বাংলাদেশে প্রকাশিত খবরের কাগজে আজকে যে আধুনিকতার উপস্থিতি, তার শুরুই হয়েছিল কাজী শাহেদ আহমেদের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকার হাত ধরে; যা তৎকালীন মুক্তমত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

কাজী শাহেদ আহমেদ ১৯৪০ সালের ৭ নভেম্বর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাসের পর তিনি ১৪ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাকালীন প্লাটুন কমান্ডারদের একজন তিনি।

১৯৭৯ সালে ‘জেমকন গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তার ব্যবসায়ী জীবন শুরু। তিনি ছিলেন ‘খবরের কাগজ’ ও ‘আজকের কাগজ’-এর প্রকাশক ও সম্পাদক। বাংলাদেশে প্রথম অর্গানিক চা বাগানের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। এছাড়াও তার রয়েছে অসামান্য কিছু অলাভজনক উদ্যোগ। এর মধ্যে আছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) ও কাজী শাহেদ ফাউন্ডেশন।

কাজী শাহেদ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন যাবৎ। ৭৫ পরবর্তী সময়ে ক্লাবের দুর্দিনে তিনি হাল ধরেন। ১৯৯১ থেকে ক্লাব লিমিটেড হওয়ার পর ডিরেক্টর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাহিত্য পরিমণ্ডলেও কাজী শাহেদ আহমেদ সুপরিচিত। তার প্রথম গ্রন্থ ‘আমার লেখা’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। সে বছরই ‘ঘরে আগুন লেগেছে’ নামে তার দ্বিতীয় বই প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সালে ৭৩ বছর বয়সে তিনি রচনা করেন তার প্রথম উপন্যাস ‘ভৈরব’। আত্মজীবনী ‘জীবনের শিলালিপি’ প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। একই বছর প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘পাশা’। ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘দাঁতে কাটা পেনসিল’। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘অপেক্ষা’। ইতোমধ্যে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে ‘ভৈরব’।