ঢাকা ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশব্যাপী আজ বই উৎসবে মেতে উঠবে শিক্ষার্থীরা

দেশব্যাপী আজ বই উৎসবে মেতে উঠবে শিক্ষার্থীরা

নতুন বছর। নতুন শিক্ষাবর্ষ। নতুন বইয়ের গন্ধ পেতে অপেক্ষা করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বছরের প্রথম দিন শিশু-কিশোররা খালি হাতে স্কুলে আসবে আর নতুন ঝকঝকে-তকতকে বই নিয়ে ঘরে ফিরবে। নতুন বছরে নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণের উচ্ছ্বাস আর নতুন বইপ্রাপ্তির আনন্দ-দুয়ে মিলে খুশির বন্যা বয়ে যাবে দেশের প্রতিটি স্কুলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় চিরচেনা এ বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের দেখা মিলবে। মহামারি করোনায় গত দুই বছর বই উৎসবে ছেদ পড়ে।

দেশের ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে, যা বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত, অনন্য নজির। ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ সরকার। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, ঝরে পড়া রোধ এবং শিক্ষাকে মানসম্পন্ন করতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ভূমিকা রাখছে।

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বই বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিটি শ্রেণির একজন করে শিক্ষার্থীকে এক সেট করে বই দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। মানে প্রতিটি নাগরিক হবে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন। প্রতিটি ছেলেমেয়ে কম্পিউটার টেকনোলজি এখন থেকে শিখছে এবং আরও এগিয়ে যাবে। আমাদের পুরো জনগোষ্ঠীই হবে প্রযুক্তি জ্ঞানে স্মার্ট। বিশ^ থেকে কোনো কিছুতেই পিছিয়ে থাকবে না। নিশ্চয়ই আমরা পারব। তিনি বলেন, করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সরকার জনগণের অর্থ সাশ্রয়ের জন্য অনেক দিক থেকে কঠোরতা আরোপ করলেও শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তকের বই ছাপানোর ক্ষেত্রে কোনো আপস করেনি। কম্পিউটার শিক্ষা অর্থাৎ প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন পিছিয়ে থাকবে।

আজ রোববার কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিকের বই উৎসব হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। সেখানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন উপস্থিত থাকবেন। আর গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাধ্যমিকের বই উৎসবে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

এদিকে বছরের প্রথম দিন ঘটা করে বই উৎসব হলেও পুরো সেট বই প্রাপ্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে। কাগজ ও কালির সংকট, ঊর্ধ্বমুখী দাম, ছাপা সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, দুটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম ও এনসিটিবির কার্যাদেশে দেরি ইত্যাদি কারণে পুরো সেট বই পাবে না অনেক শিক্ষার্থী। শুরুর দিকে ছাপানো মাধ্যমিকের বইগুলো মানসম্মত হলেও কাগজ সংকটের অজুহাতে নিম্নমানের বই ছাপানো হয়। বইয়ের কাগজ, রং, বাঁধাই, মলাট সব নিয়েই রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মাধ্যমিকে ৮১ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর প্রাথমিকের বই মাঠ পর্যায়ে পৌঁছেছে ৭০ শতাংশ বই। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে প্রস্তুতি শেষ করেছে সরকার।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সাড়ে ৩৪ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি মিলিয়ে এই স্তরে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি মিলিয়ে ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার বই ছাপা হচ্ছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৭ কপি।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কাগজের সংকট ছিল। দেশে ‘ভার্জিন পাল্প’ ছিল না। এ জন্য উজ্জ্বলতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এরপরেও সংকটের সুযোগ নিয়েছে অনেকে। নিম্নমানের অভিযোগে অনেক বই বিনষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনিয়ম করে কেউ ছাড় পাবে না। যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তাই নেওয়া হবে। দ্বিগুণ জরিমানা করা হবে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, এ বছর শতভাগ বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে দেশব্যাপী বই উৎসবে কোনো সমস্যা হবে না। কেউ বাদ পড়বে না। প্রথম দিন সবাই বই নিতে আসে না। জানুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যে শতভাগ বই পৌঁছানো সম্ভব হবে।

নতুন বই
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত