ঢাকা ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতুন বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি

নতুন বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি

গেল বছরের শুরু থেকে রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও শেষ সময়ে এসে রাজধানীরসহ সারা দেশে সেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। নতুন বছরে রাজনৈতিক উত্তাপের পাশাপাশি জঙ্গি ইস্যুকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বছর রাজনৈতিক উত্তাপের সময় জঙ্গিগোষ্ঠী কোনও ধরনের সুযোগ নেয় কি না, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতির কোনও কমতি নেই বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ নিতে ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনোভাবেই যাতে সুযোগ সন্ধানীরা পরিবেশ ঘোলাটে করতে না পারে, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‌জঙ্গিগোষ্ঠী যেন নির্বাচনকে ইস্যু না করে এবং নির্বাচন সামনে রেখে এসব শক্তি যাতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই তাদের মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেবেন না তারা। এমন পরিকল্পনা মাথায় রেখেই সাজানো হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এ ছাড়া জঙ্গিবাদের নাম করে বিএনপি-জামায়াত যাতে ঝামেলা বাধাতে না পারে, সেটাও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছে বলে জানান তিনি।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজনৈতিক ও জঙ্গি ইস্যু একসঙ্গে মুভ করলে। টেকেল (নিয়ন্ত্রণ) করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে। ২০২৩ সাল পুরোটাই চ্যালেঞ্জিং হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে মারমুখী হচ্ছে, সেটাও আশঙ্কার বিষয়। সবকিছু মাথায় রেখেই জানুয়ারি প্রথম থেকেই পুলিশ মাঠে থাকবে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ সপ্তাহের পর নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাতে থাকবে বলে মনে করছে তারা।

গেল বছর যেভাবেই কেটেছে, নতুন বছর সেভাবে কাটবে কি না, তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই রাজনৈতিক উত্তাপ থাকবে দেশে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য প্রশাসনে কয়েক দফা দবদলও করা হয়েছে।

গোয়েন্দা তথ্য আরও বলছে, পুলিশের মহানগরীও কার্যালয়সহ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় পর্যন্ত একাধিক কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়েছে। নতুন বছরে ওই সব কর্মকর্তার পারফরম্যান্স দেখা হবে। এরই মধ্যে অনেক পুলিশ সুপার নিজ নিজ জেলায় সন্তুষ্টজনক পারফরম্যান্সও দেখিয়েছেন। যাদের পারফরম্যান্স খারাপ প্রতিবেদন এসেছে, সম্প্রতি তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই বর্তমানে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দেখাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে জঙ্গি নিয়েও আলোচনা থাকতে পারে। সম্প্রতি আদালত পাড়া থেকে ছিনতাই হওয়া জঙ্গি ও কথিত হিজরতের নামে বান্দরবানের পাহাড়ে অবস্থান করা জঙ্গিদের নিয়ে বছরজুড়ে ভুগতে হতে পারে। নির্বাচনের বছর হওয়ায় জঙ্গি ইস্যুতে অধিক গুরুত্ব দিতে চান তারা।

অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) মুখপাত্র পুলিশ সুপার মো. আসলাম খান বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এটিইউ কাজ করছে। নতুন বছরেও সেই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। জঙ্গিবাদ কোনও দলীয় বা দেশীয় সমস্যা নয়, এটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই এ ক্ষেত্রে কোনও প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। সম্প্রতি আদালতপাড়া থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গির আমলে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বে ৪০তম। আমরা চাইবো এই অবস্থাকে আরও এগিয়ে নিয়ে আসতে। আর জঙ্গিদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাদের যেভাবে ঘৃণা করে আসছিল দেশের মানুষ, এটাই যথেষ্ট।’ তবে নিজের সন্তানরা কার সঙ্গে চলাফেরা করে, সেদিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন বছরে চেলেঞ্জ আছে। তবে র‌্যাব তাদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী কাজ করবে। র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত আছে। এখন পর্যন্ত জনগণের জন্য হুমকি, এমন কোনও কিছুর আশঙ্কা নেই। তারপরও র‌্যাব সজাগ আছে। আর যেহেতু নতুন বছরে রাজনৈতিক উত্তাপ থাকবে, সে জন্য র‌্যাবও নতুন কৌশল অবলম্বন করবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিএমপির টার্গেট জিরো টলারেন্স ক্রাইম সোসাইটি গড়ে তোলা। ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনশৃঙ্খলার দিক থেকে রাজধানীকে শতভাগ নিরাপদ শহর করতে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীতে আইনবহির্ভূত কোনও কাজ যাতে না হয়, সেদিকে সজাগ থাকবে। নগরবাসীর সহযোগিতা থাকলে এটা করা পুলিশের পক্ষে সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটা ভালো গেছে, নতুন বছরে আরও ভালো যাবে বলে আশা করি। পুলিশের কাজ হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করে যাবে। একটা বিষয় পরিষ্কার, রাজনীতির সঙ্গে পুলিশের কোনও বিরোধ নেই।’

রাজনৈতিক উত্তাপের বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা কোনও বিষয় না। রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করবে, তারা তাদের কর্মসূচি পালন করবে। রাজনীতি চলবে রাজনীতির গতিতে। এখানে পুলিশের কোনও কিছুই নেই। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যদি আইনবিরোধী ও জনগণের জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে পুলিশ আইন প্রয়োগ করবে। আর সে বিষয় সামনে রেখে নতুন বছরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাজানো হচ্ছে।’

রাজনৈতিক দলগুলো আইন মেনে তাদের কার্যক্রম করবে বলে আশা করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন মেনে যেকোনও দল তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারবে। আমরা

নিরাপত্তার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশে আছি। পুলিশের কোনও প্রতিপক্ষ নেই। পুলিশের কাজ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। সেটাই আমরা করবো।’

পুলিশ,জঙ্গী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত