নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের আশ্বস্ত করা আমাদের কাজ নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন সংস্করণ

ফাইল ছবি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে যে প্রশ্ন বা উদ্বেগ আছে সে বিষয়ে বিদেশিদের আশ্বস্ত করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ না। এই বিষয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথ্যা নেই, এই মাথাব্যথ্যা হচ্ছে সাংবাদিকদের। সরকার জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখে। নির্বাচন নির্বাচনের সময়েই হবে। ওই সময় সবগুলো দল অংশ নিলে ভালো, কেউ অংশ না নিলে সরকারের কিছু করার নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এমন ধরনের মন্তব্য করেন।


বছরের শুরুর দিনে দেশ সম্পর্কে বিদেশে অপপ্রচার ঠেকাতে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। যার নেতৃত্বে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করবে। সমন্বয় কমিটি আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠন করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার বলেন, ‘নির্বাচনের বহুদিন বাকি। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের গল্পস্বল্প শুরু হয় এক-দুই মাস আগে। আর বাংলাদেশে কী ঢং, এক বছর আগেই হইচই শুরু হয়ে যায়। দিস ইজ ভেরি স্যাড। আমরা নির্বাচন নিয়ে অত চিন্তিত না। নির্বাচন নির্বাচনের নিয়মেই হবে এবং স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী সব ব্যবস্থা নিয়েছেন। এখানে সব দল আসলে ভালো, কিন্তু কেউ না আসলে নাই। নির্বাচন নির্বাচনের সময়ই হবে। আমরা জনগণের ওপর বিশ্বাস করি।’


নির্বাচন ইস্যুতে বিদেশিরা একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ইস্যুতে বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে। এমন পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন ইস্যুতে বিদেশিদের আশ্বস্ত করবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার বলেন, ‘এটা আমাদের হেডেক না, আপনাদের হেডেক। বিদেশিদেরকে আশ্বস্ত করা আমাদের কাজ না, আমরা আমাদের কাজ করে গেলে তারা (বিদেশিরা) নিজেরাই বুঝবে এবং আমাদেরকে ফলো করবে। জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকলে বিদেশি, নন-বিদেশি ফরগেটবল।’


দেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ততবেশি বিদেশি দূতাবাসকেন্দ্রিক হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতি এখন দূতাবাসমুখী। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত এনি ভন লিউয়েন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চালর্স হোয়াইটলি গত ২৪ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক নিয়ে জার্মানির রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বাগতিক দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কূটনীতিকদের প্রধান দায়িত্ব। নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বাগতিক দেশের পরিস্থিতি বোঝার জন্য এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে একজন কূটনীতিক সব অংশীদারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সব সময়েই চেষ্টা করেন। 


এর আগে, গত ২ জুন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে তার বাসভবনে সুশীল সমাজের ৫ প্রতিনিধিকে মধ্যাহ্ন ভোজের আমন্ত্রণ জানান। পশ্চিমা বিশ্ব এবং ইউরোপভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন নিয়ে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের নিয়ে একসঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে গত ৭ নভেম্বর ঢাকা সফররত মার্কিন সহকারী উপমন্ত্রীর বৈঠক করতে দেখা গেছে। পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব যতটা আগ্রহী, পুবের দেশগুলো এবং আরব বিশ্বের দেশগুলো এই ইস্যুতে এতদিন তেমন কোনো আগ্রহ প্রকাশ না করলেও গত বছরের শেষদিকে এসে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নির্বাচন ইস্যুতে মন্তব্য করেন এবং এর পরপরই জাপানের দূতকে ডেকে নিয়ে কথা বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।