রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তার ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে চলতি বছরে এশিয়ার সেরা ১০ এয়ারলাইন্সের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া, পরের বছর সেরা তিনের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া, উড়োজাহাজের বহর বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নতুন রুট চালু করা, সব রকম যাত্রী সেবা বৃদ্ধি করে তা নিশ্চিত করা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বিমানকে স্মার্ট এয়ারলাইন্স হিসেবে গড়ে তোলা, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
আজ ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হ্যাঙ্গার পরিদর্শন করেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সফিউল আজিম। এ সময় গত ৫১ বছরে বিমানের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
চলতি বছরে বিমানকে এশিয়ার সেরা ১০ এয়ারলাইন্সের মধ্যে জায়গা করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সফিউল আজিম বলেন, এবার সেরা ১০ এ জায়গা পেলে পরবর্তী বছরে বিমান সেরা তিনে নিয়ে যেতে সক্ষম হব। সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে আমরা দিকনির্দেশনা নিচ্ছি। কোনো কাজে যদি ব্যত্যয় ঘটে, তা সংশোধন করছি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে কারও স্বার্থসিদ্ধির জায়গা হতে দেওয়া হবে না।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বলেন, ৫১ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে একটিমাত্র উড়োজাহাজ দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজকে এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আমাদের নব প্রজন্মের উড়োজাহাজ দিয়ে নবযাত্রা শুরু করেছি। এখন ২১টি অত্যাধুনিক এবং নব প্রজন্মের উড়োজাহাজ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর মধ্যে ১৮টি উড়োজাহাজ বিমানের নিজস্ব। এখানে ড্রিমলাইনার, বোয়িং-৭৭৭ ও বোয়িং-৭৩৭ আছে।
বিশ্বে বিমানের বৈমানিক, কেবিন ক্রু, প্রকৌশলী, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার সুনাম রয়েছে জানিয়ে সংস্থাটির সিইও বলেন, আমাদের দক্ষ বৈমানিক, ক্রেবিন ক্রু ও প্রকৌশলীরা সারা বিশ্বে বিমানের সুনাম করছে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা এবং চিন্তাভাবনার প্রতিফলন বিমানে ঘটছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের যেমন দরকার বিমানের আধুনিকায়ন, একই সঙ্গে বিমান পরিচালনার সঙ্গে যারা আছেন তাদের মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। তার মানে আমরা যারাই বিমানে কাজ করি, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিমান খাতে সরকার এবং জনগণের বিপুল পরিমাণ টাকার প্রতি সবাইকে যত্নবান হতে হবে।
বর্তমানে বিমান ২০টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করছে জানিয়ে সফিউল আজিম বলেন, টরেন্টো-মধ্যপ্রাচ্যসহ যেখানে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকরা কাজ করেন, সেখানে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। তাদের সেবা দিতে সামনের দিনগুলোতে বিমান যাতে আরও কাজ করতে পারে এবং নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত করতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই আমরা কাজ করছি। এভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে মিল রেখে বিমান হবে স্মার্ট এয়ারলাইন্স।
বিমানের সিইও বলেন, বিমানে যাদের পদোন্নতি-প্রশিক্ষণ দরকার, আমরা তাদের তা দিচ্ছি। আবার যারা কোনো ধরনের মন্দ কাজে জড়িত তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করছি। কেউ ফৌজদারি অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধেও বিমান ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিমানে কোনো ধরনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা এবং দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। বিমানের যারা ভালো কর্মী তারা পুরস্কৃত হবেন, যারা অন্যায় করবেন তাদের শাস্তি পেতে হবে।
আগামী হজে বিমান নিজ উড়োজাহাজ দিয়েই হাজিদের সেবা দেবে জানিয়ে সিইও বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হজ যাত্রায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সামনে হজ মৌসুমে যাতে হজযাত্রীদের কোনো ভোগান্তি না হয়, সেই পরিকল্পনা আমরা শুরু করে দিয়েছি। আগামী হজে নিজেদের উড়োজাহাজ দিয়েই হজযাত্রীদের পরিবহন করব। অন্য প্রতিষ্ঠানের উড়োজাহাজ লিজ নেব না।
বিমানের হ্যাঙ্গারে নিজ ব্যবস্থাপনায় উড়োজাহাজের কারিগরি ত্রুটি সারানো হয় জানিয়ে সফিউল আজিম বলেন, এখন আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট নিজেরাই করছি। প্রতিটি উড়োজাহাজে ২০ লাখ টাকা করে সাশ্রয় করছি। বিমান কাতার এয়ারওয়েজসহ অন্যদেরও সেবা দিচ্ছে। আমাদের যেসব দক্ষ প্রকৌশলী আছেন, তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ধাপে ধাপে আগাচ্ছি। এভাবে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে বিমানও সহযাত্রী হবে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা যেন সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হয়, সে জন্য বিমানের সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যাতে বিমান জনবান্ধব হয়, যাত্রীবান্ধব হয়। এ ছাড়া বিমানের টিকেট সম্পূর্ণ ওয়েব বেজড করা হবে। যাতে অনলাইন থেকে সবাই সহজেই টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন।
নতুন বছরে (২০২৩ সালে) বিমানের পরিকল্পনার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সফিউল আজিম বলেন, বিমানে যাতে টাইম শিডিউল ঠিক থাকে, সে জন্য সক্ষমতা বাড়ানো হবে। নতুন নতুন গন্তব্যে ফ্লাইট চালু করব। আগামী হজের পর জাপানের নারিতায় ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। কানাডার টরেন্টোতে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। লন্ডনসহ সব রুটেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখানে আরও কিছু করার থাকলে সক্ষমতা অনুযায়ী করব। পাশাপাশি কার্গো সার্ভিসের সেবা বাড়াতে পারব। এ ছাড়া গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা আরও আধুনিক করব। যেমনটা উন্নত দেশের বিমানবন্দরে দেওয়া হয়। এভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাব। গত সপ্তাহে পাইলট নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করেছি, কেউ অসুস্থ বা অন্য কারণে ফ্লাই করতে না পারলেও সমস্যা হবে না, আমাদের এখন পর্যাপ্ত পাইলট থাকবে। আশা করি, চলতি বছরে বিমানকে সবাই নতুনভাবে দেখবেন।
তিনি বলেন, গত বছর আমাদের যাত্রী পরিবহনের টার্গেট ছিল ৭১ শতাংশ, সেখানে আমরা ৩ শতাংশ বেশি অর্থাৎ ৭৪ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করেছি। চাইলেই ১০০ সিটে ১০০ জনকে নেওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কিছু সায়েন্টিফিক বিষয় রয়েছে। আমরা পুরোপুরি ওয়েব পেইজ টিকেটিং সিস্টেমে যাব এবং মার্কেটিং আরও উন্নত করা হবে। তিনি বলেন, বিমানের ওটিপি পারফরমেন্স এখন ৮০ শতাংশের অধিক। এটা ওঠানামা করে। বিমানের বকেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বকেয়া নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে, বড় ধরনের বকেয়া নেই। বিমানের আর্থিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই।