ঢাকা ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আবারো বাড়বে বিদ্যুতের দাম

আবারো বাড়বে বিদ্যুতের দাম

দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর প্রতিটি জিনিসের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। এরপর বাড়ানো হয় বিদ্যুতের পাইকারি দাম। এখন গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম ইউনিটপ্রতি এক টাকা ১০ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি।

রোববার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সঞ্চালন সংস্থা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শেষে এ তথ্য জানানো হয়। শুনানির ৯০ দিনের ভেতরে আদেশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বিইআরসির। শুনানিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক শূন্য ৮ থেকে সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিতরণকারী সংস্থাগুলো।

বিইআরসি বলছে, অংশীজনদের মতামত ও বিতরণ সংস্থাগুলোর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিতরণ সংস্থাগুলো বলছে, দাম বাড়ানো না হলে তাদের বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান গুনতে হবে অপরদিকে, এই হারে দাম বাড়ানো হলেও শুনানিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।

শুনানিতে পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতি টন কয়লার দাম ২৩০ ডলার এবং প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৭০ টাকা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। কিন্তু বিআরসি পাইকারি মূল্য বৃদ্ধিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজেই এই মূল্য কাঠামো ধরে দাম বাড়ানো হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে না।

শুনানিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তাদের প্রস্তাবে জানায়, দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে ১১২৭ কোটি টাকা। একইভাবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২৩৪ কোটি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ১৫৫১ কোটি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১৪০২ কোটি টাকা, নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ৫৩৫ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে দাবি করা হয়েছে। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) কোনও আর্থিক অঙ্ক দাঁড় না করালেও বলেছে, দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেছেন, বিতরণকারী সংস্থার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। বিইআরসি আইন-২০০৩ এর ৫৪ ধারায় আমাদের ভোক্তার যে সব অভিযোগ, তা নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই এগুলোর দাম বাড়ানো হলে এর বিরূপ প্রভাব প্রতিটি জিনিসের উপর পড়ে। সম্প্রতি জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানোর ফলে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা। এখন গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হলে দ্রব্যমূল্য জনগণের নাগালের বাইরে চলে যাবে। অস্থিরতা দেখা দেবে। জনগণের কষ্ট আরও বাড়বে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে তা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। দাম বাড়ানোর উদ্যোগ জনবিরোধী। এখনই দাম না বাড়ানোর পক্ষে মত দেন তারা।

দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এম শামসুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লে ২০২৩ সালের মূল্যস্ফীতিকে তা উসকে দেবে। খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রভাব প্রতিটি সেক্টরে পড়বে। দাম বাড়ানোর এই উদ্যোগ জনস্বার্থবিরোধী, অযৌক্তিক। বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইচ্ছামতো মুনাফা করার জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। এই মুহূর্তে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি জনগণের কষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বিদ্যুৎ খাতের সিস্টেম লস, অনিয়ম বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ১ টাকা ১০ পয়সা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। সেই হিসেবে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৭ দশমিক ১৩ পয়সা থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ১৩ পয়সা করার সুপারিশ করেছে। এতে গড়ে বৃদ্ধি পেতে পারে ১৫ দশমিক ৪৩ ভাগ।

ভর্তুকি কমাতে গত বছরের ২১ নভেম্বর পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। এর পরপরই খুচরায় দাম বাড়াতে আবেদন করে বিতরণ সংস্থাগুলো। সেসব আবেদন কারিগরি কমিটিতে মূল্যায়ন শেষে তা গণশুনানিতে আসে।

উল্লেখ্য, সবশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সব পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সেসময় পাইকারিতে দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহক বা খুচরা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার ক্রমাগতভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, উপরন্তু নিজেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে হাওয়া দিচ্ছে। সরকার বিইআরসিকে আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। বিধিবিধানগুলো পরিবর্তন করেছে।

তিনি বলেন, আমরা গণশুনানিতে অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছি যে, দুর্নীতি ও ভুল নীতি পরিত্যাগ করলে বিদ্যুতে দাম বাড়ানোর তো প্রশ্নই ওঠে না, বহুল পরিমাণে কমানো সম্ভব। এটা সরকারের গণবিরোধী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। আমরা এই উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং এর প্রতিবাদের আমরা আন্দোলন গড়ে তুলবো। জনগণকে সেই আন্দোলনে শরিক হবার আহ্বান জানাবো।

বিদ্যুৎ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত