শীত আর ঘন কুয়াশায় রবি শস্যে ক্ষতির শঙ্কা

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪২ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন সংস্করণ

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে বোরোর বীজতলা। নষ্ট হচ্ছে কৃষকের শিম, লাউ, করলা, মিষ্টি কুমড়া, আলু, শাকসবজিসহ বিভিন্ন রবি ফসল। গত বছরে বন্যার কারণে দাম চড়া ও বীজ উৎপাদন কম থাকায় চলতি বছরে কৃষকরা সবজি চাষ বেশি করেছেন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই তীব্র শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশায় নষ্ট হতে শুরু করে তাদের স্বপ্নের ফসল। পাতা পচা রোগ থেকে ফসলকে রক্ষায় কয়েক দফা কীটনাশক প্রয়োগ করেও সুফল পাচ্ছেন না কৃষক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, তৃতীয় দিনের মতো সোমবারও দেশে বিভিন্ন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে, তা আগামী দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। শস্যভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই তলানিতে নামছে। এ অবস্থায় বীজতলা পচে বোরো ধানের চারা সংকটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, তারা বীজতলায় ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন। কুয়াশার হাত থেকে রক্ষায় পলিথিন দিয়েও ঢেকে রাখছেন বীজতলা। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। গত আমন ও আউশ মৌসুমেও বন্যা এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ভালো ফলন পাননি তারা। এবারের তীব্র শীত-কুয়াশায় বোরো নিয়েও রয়েছেন শঙ্কায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকদিনে উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশ বেড়েছে। দিনের বড় অংশই কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকায় দেখা দিয়েছে ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ। কোনো কোনো জায়গায় চারা হলুদাভ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকের বীজতলায় চারা পোড়া ও ঝলসানো রোগও দেখা দিয়েছে। 

বেশ কয়েকটি জেলার কৃষকরা জানান, দুঃসময়েও তারা পাশে পাচ্ছেন না কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, বোরোর চারা রক্ষায় কৃষকদের পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে কম তাপমাত্রা বজায় থাকলে ধান, সরিষা, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। ঝরে পড়তে পারে আমের মুকুল।

দুই সপ্তাহ ধরে সারাদেশে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে; পড়ছে ঘন কুয়াশা। গত রোববার রোদ উঠলেও জানুয়ারি মাসে আরও শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ৬ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাদেশে ১ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ভুট্টার জমি ১ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর।

কৃষকরা জানান, রাতভর বৃষ্টির মতো ঘন কুয়াশা পড়ার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলুর ক্ষেতে 'লেট ব্লাইট' রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ছত্রাক ধরে পাতা ও কা পচে গাছ মরে যাচ্ছে। একই কারণে বোরো ধানের বীজতলায় 'কোল্ড ইনজুরি' দেখা দিয়েছে। এতে চারা মরে যাচ্ছে। আলুক্ষেতে ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন চাষিরা। কুয়াশার হাত থেকে ধানের চারা বাঁচাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে। অনেক সময় এতেও কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বোরো রোপণের জন্য ৩ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এখনও মাঠ পর্যায় থেকে ক্ষতির খবর আসেনি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। আলুতে এখনও কোনো সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঠান্ডা দীর্ঘমেয়াদি হলে এর প্রভাব পড়তে পারে, আলুর পাতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য কৃষকদের কিছু কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে পাতা নষ্ট হওয়া বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত না হয়। কারণ, মাসখানেকের মধ্যেই আলুর মূল ফলন উঠতে শুরু করবে। শীতের কারণে সবজি ও ভুট্টার খুব বেশি সমস্যা হয় না বলে জানান তিনি।