ঢাকা ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চীনকে বাংলাদেশ টাইম টু টাইম সাপোর্ট দিবে

চীনকে বাংলাদেশ টাইম টু টাইম সাপোর্ট দিবে

চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতিতে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে। ছবি: পিডিআই

চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতিতে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে। ছবি: পিডিআই

এক চীন নীতিতে বাংলাদেশের সমর্থন পুর্নব্যক্ত করে ঢাকা বেইজিংকে জানিয়েছে যে চীনকে বাংলাদেশ টাইম টু টাইম সাপোর্ট দেবে। অন্যদিকে বেইজিং ঢাকাকে জানিয়েছে যে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাবে। সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে ইথিওপিয়াসহ আফ্রিকার পাঁচ দেশ সফরে যাওয়ার পথে চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুইপক্ষ ওই বৈঠকে এমন বার্তা বিনিময় করেন। সংক্ষিপ্ত ওই বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা সঙ্কট, ইউক্রেন যুদ্ধ, বহুপক্ষীয় কূটনীতি নিয়ে আলোচনা হয়।

ঢাকার কূটনীতিকরা জানান, চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং যাত্রা বিরতিতে কমবেশি ৫২ মিনিট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থান করেন। যার মধ্যে দুইমন্ত্রীর মধ্যে অন্তত ৩০ মিনিটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কূটনীতিকদের মতে চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যায়ের ঢাকায় যাত্রাবিরতী এই বার্তা দেয় যে ভূ-রাজনীতিসহ একাধিক কারণে চীনের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে যখন রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশ আসেন, তখন এই সময়কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন।

দুইমন্ত্রীর বৈঠক শেষে সোমবার মধ্যরাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বাণিজ্যে সমতা ফিরাতে চীনের বাজারে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা ছিলো। যা গত বছর আগে ঘোষণা দিয়েছিল চীন। কিন্তু গেজেট না হওয়ায় দীর্ঘদিন পার হলেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে গেজেট নোটিফিকেশন ঘোষণা দিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। পদ্মাসেতুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে চীনের সহযোগিতা বিশেষত পদ্মাসেতুর রেল লিংক স্থাপনে চীনের সহায়তার বিষয়টি আলোচনায় স্থান পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে বলেছি যে আমরা এক চীন নীতিতে বিশ্বাস করি। এটা আমাদের মূলনীতি, এটা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। তবে আমাদের সবাইকে নিয়েই যে চলতে হয় সেটাও আমি বলেছি। আমি বলেছি, এ জন্য আমরা আপনাদের (চীনকে) টাইম টু টাইম সাপোর্ট দেবো। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় অর্থ সহায়তার বেশ কিছু চুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু সবগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তাই প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত ছাড়ের অনুরোধ করেছি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিন গ্যাং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমেনকে বেইজিং সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী মোমেন বলেন, জবাবে আমি তাকে (কিন গ্যাংকে) আরও বেশি সময় নিয়ে (পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয় সফরে) বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

ঢাকার কূটনীতিকরা আরও বলছেন, চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং এমন সময়ে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি করেছেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা এবং হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার চারদিনের বাংলাদেশ সফর করছেন। বৈশ্বিক মেরুকরণের চলমান প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন দুই দেশই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠভাবে পাশে চায়। যুক্তরাষ্ট্র চায় যে তাদের নেতৃত্বে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশে যোগ দিক। ঠিক তেমনিভাবে চীন যায় যে তাদের নেতৃত্বে বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ (জিএসআই) এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই) এ বাংলাদেশ যোগ দিক। এই ইস্যুতে দুইপক্ষই বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ দুইপক্ষকেই জানিয়েছে যে ঢাকা এসব ইস্যু পর্যালোচনা করে দেখছে। ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন প্রকাশ্য, এমন অবস্থায় এই দুই দেশের সঙ্গে আমরা ভারসাম্যের সম্পর্ক কীভাবে রক্ষা করব, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমরা অন্য কারও ধানে মই দেই না। তাদের সমস্যা থাকতে পারে। এটা তাদের হেডেক। আমরা তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। কী কারণে তাদের অসুবিধা, সেটা আমাদের হেডেক না। এটা তাদের হেডেক। আমরা সুসম্পর্ক রাখতে চাই এবং আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, এ নীতিতে বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারসাম্য নীতির কারণে বাংলাদেশের দিকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর নজর বাড়ছে। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। কেউ এগুলো হাতছাড়া করতে চান না। সেজন্য আসছেন। আর আমরাও চাই, অধিক যোগাযোগ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে চলছে ও এর উন্নয়ন অভাবনীয় এবং চীন এর সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চায়। চীনের মন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যোগান ব্যাহত হচ্ছে, আর্থিক লেনদেনে সমস্যা হচ্ছে এবং নতুন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তবে আমাদের বড় ইস্যু হচ্ছে রোহিঙ্গা এবং এই বিষয়ে চীনারা আমাদের সহায়তা করেছে। সেই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে চীনের মন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমারে কিছু অসুবিধা আছে। সেজন্য এটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

চীন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত