বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:২০ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন সংস্করণ

ফাইল ছবি

বয়ান ও জিকিরের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। বুধবার থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করলেও গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিটি খিত্তায় তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর বয়ান ও জিকিরের মধ্য দিয়ে এবারের ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। প্রতিবারের মতো এবারও উপমহাদেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। 

শুক্রবার প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী আয়োজনে থাকছে তাবলিগ জামাতের আলমি শূরা (জুবায়েরপন্থি)। মাঝে ৪ দিন বিরতির পর সা’দপন্থিদের তত্ত্বাবধানে আগামী ২০ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। আগামী ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

এদিকে বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার মুসল্লি তাদের নির্ধারিত কামরায় অবস্থান নিয়েছে। বিদেশি মেহমানদের জন্য ইজতেমা কর্তৃপক্ষ ১২ হাজার কামরা প্রস্তুত রেখেছে। 

দিনভর যানজটের কারণে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। স্থানীয়রা জানান, এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফুটপাথে দোকান বসানোর অনুমতি না দিলেও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশে দোনপাট বসানোর কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। টঙ্গীর যানজটের কারণে বিমানবন্দর, ঢাকার আশুলিয়া, মিরপুরের কালশী ও মহাখালী পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ভোগান্তিতে পড়েন নারী-শিশু ও রোগীরা। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত পুরো সড়ক-মহাসড়ক যানজটের কারণে অচল হয়ে পড়ে। 

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, মুসল্লিদের সুবিধার্থে এবার সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো দোকানপাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপরও দেখা গেছে দোকানপাট বসিয়ে অনেকে মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, অবৈধ দোকানপাট বসানোর কারণে মূলত যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে জিএমপি কমিশনারের নির্দেশে বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সব দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাসড়কে অনেকটা যানচলাচল বন্ধ হয়েছে, যেহেতু টঙ্গীতে ইজতেমা চলছে। তাই ঢাকামুখী উত্তরাঞ্চলের বাস-ট্রাকসহ ভারী যান সাভার হয়ে গাবতলীর দিকে পাঠানো হচ্ছে। এতে সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত রয়েছে ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়ক। 

রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, মহাসড়কে অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানপাট উচ্ছেদের কাজ করছেন। এ ছাড়াও মুসল্লিদের সুরক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তার জন্য চোর, ছ্যাঁচড়া, ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশ প্রতিটি স্থানে অবস্থান করছে। 

ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা জানান, ভেতর-বাইরের বহু প্রচেষ্টার পরও তাবলিগ জামাতে বিভক্তির অবসান না হওয়ায় এবারও যুগপৎ ইজতেমা অনুষ্ঠানের আয়োজন ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তৃতীয় বারের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই গ্রুপের আলাদা ইজতেমা। 

সর্বশেষ ২০২০ সালে ইজতেমা অনুষ্ঠানের পর করোনা পরিস্থিতি ও তাবলিগের দ্বিধাবিভক্তির কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।

বিগত ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ইজতেমায় মুরব্বীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের ৮, ৯ ও ১০ জানুয়ারি প্রথম পর্ব এবং ১৫, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা হওয়ার কথা ছিল। ওই ইজতেমার প্রাক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে জোড় ইজতেমাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি বিধি নিষেধের কারণে ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর ৫ দিনের জোড় ইজতেমা সমাপ্ত হওয়ার পর তাবলিগ সাথিরা ২০২১ সালের ইজতেমা অনুষ্ঠানের অনিশ্চিয়তা নিয়ে ময়দান ত্যাগ করেন। যদিও তাবলিগ জামাত দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার পর ২০১৯ সাল থেকেই তাদের জোড় ইজতেমা ও বিশ্ব ইজতেমাসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়োজনে ছন্দপতন ঘটে। 

শুক্রবার থেকে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গত বুধবার থেকেই মুসল্লিরা ময়দানে এসে অবস্থান করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারই পুরো ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকেই সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ানও শুরু করেন তাবলিগের মুরব্বীরা।

দুই মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে বৃহস্পতিবার দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। বাদ জোহর ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন- গাজীপুর শহরের ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০) এবং সিলেটের জৈন্তাপুর থানার হরিপুরের হেমুবটে পাড়া এলাকার মো. ফজলুল হকের ছেলে মো. নুরুল হক (৬৩)।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আবদুন নূর জানান, বার্ধক্যজনিত কারণে তাবলিগ জামাতের গাজীপুর মারকাজের শূরা সদস্য আবু তৈয়ব সকাল ১০টার দিকে মারা গেছেন। আর নুরুল হক ভুগছিলেন অ্যাজমা রোগে। সকালে ইজতেমা ময়দানের ৬২ নম্বর খিত্তায় অবস্থানকালে নুরুল হকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি মারা যান। দুপুরে ইজতেমা ময়দানে জানাজা শেষে লাশ দুটি তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।