ঢাকা ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিদ্যুতের পর এবার বাড়ছে গ্যাসের দাম

বিদ্যুতের পর এবার বাড়ছে গ্যাসের দাম

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে কয়েক দিন আগে। এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। শিগগিরই তা ঘোষণা করা হবে। তবে এখনই আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে না। দেশের বিদ্যুৎ উপাদন, শিল্প কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং শিল্পের গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। এ ছাড়া প্রতি মাসে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হবে। সে জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। বিষয়টি সময়ের আলোকে নিশ্চিত করেছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

গত বছরের ৫ জুন গ্যাসের দাম ২২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। এই মূল্যবৃদ্ধির পরও লোকসান হচ্ছে উল্লেখ করে আবারও দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলো। পিডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরের জন্য পিডিবি ভর্তুকি প্রাক্কলন করেছে ৪৪ হাজার ২০ কোটি টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিবি ভর্তুকি চেয়েছিল ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। সরকার চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রেখেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় করেছে ১৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। সরকার ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ায় লোকসান মেটাতে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম পড়ে ৫ টাকা ২ পয়সা। সেটা ৯ টাকা বৃদ্ধি করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম হবে ১৪ টাকা। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিটের দাম এখন রয়েছে ১৬ টাকা। এই শ্রেণির গ্রাহকের জন্য ৫ টাকা বাড়িয়ে দাম ২১ টাকা করা হতে পারে।

শিল্পে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহের প্রত্যাশায় উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে এলএনজির আন্তর্জাতিক বাজার দর বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে না বলে জানানো হয়। তখন ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনে বাড়তি দাম দিয়ে গ্যাস নিতেও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান। সরকারের তরফে এলএনজি আমদানির পর দেশি গ্যাসের সঙ্গে মিশ্রণের পর প্রতি ঘনমিটারের দাম ৩৫ টাকা করে পড়ছে বলে জানানো হয়। এ দাম ব্যবসায়ীরা দিতে পারবেন কি না জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা ২১ টাকা দিতে সম্মত হন বলে বৈঠকসূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা বিইআরসি গ্যাসে দাম বাড়ানোর বিষয়ে কিছুই জানে না। তাদের কাছে কেউ কোনো আবেদনও করেনি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে বিদ্যুতের পর এবার গ্যাসের দামও বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে কোনো আবেদন বা শুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে দাম বৃদ্ধি করা হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ পেতে ভর্তুকি হ্রাসের অংশ হিসেবে কয়েক ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। সম্ভাব্য জনপ্রতিক্রিয়ার বিষয় মাথায় রেখে ধাপে ধাপে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ভর্তুকি সমন্বয় করতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হবে। সে জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে।

শিগগিরই গ্যাসের দাম বাড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আবাসিকে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়বে না। যারা কমার্শিয়াল গ্যাস ব্যবহার করেন তাদেরটা বাড়বে।

বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এখন ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী মাসে বাড়বে কি না সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। বিইআরসি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করলে আরও বেশি করত। এ থেকে বোঝা যায় সরকারের আবারও দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী তো বলেছেনই, প্রতি মাসে তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৪ জুন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিইআরসি। তার আগে ২০১৯ সালের জুনে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তখন বিদ্যুতে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, ক্যাপটিভে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা এবং শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে সংস্থাটি।

এর আগে ২০১৭ সালের ১ মার্চ ও ১ জুন দুই দফায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে সরকার। ওই বছর ১ মার্চ গ্যাসের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিদ্যুতে ঘনমিটার প্রতি ২ টাকা ৯৯ পয়সা, ক্যাপটিভে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা ও শিল্পে ৭ টাকা ২৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সে বছরের ১ জুন আরও এক দফা দাম বাড়ে। তখন ঘনমিটারপ্রতি বিদ্যুতে ৩ টাকা ১৬ পয়সা, ক্যাপটিভে ৯ টাকা ৬২ পয়সা ও শিল্পে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা দাম নির্ধারণ করা হয়।

গ্যাস,বিদ্যুৎ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত