মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সড়ক প্রকল্প

কাজ না বাড়লেও বাড়ছে ব্যয়

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:২৭ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন সংস্করণ

মাতারবাড়ী শুরুতে কাজের পরিধি যা ছিল সেটি অপরিবর্তিত থাকছে, কিন্তু পাঁচ খাতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ১৩৬ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, কাজের পরিধি তিন খাতে কমেছে, অথচ সেখানেও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির এই অদ্ভূত ঘটনা ঘটছে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে নির্মিতব্য ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সড়ক প্রকল্পে।

দেশের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে জাপান সরকারের অর্থায়নে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের যোগাযোগব্যবস্থা সহজগম্য করতে নেওয়া সহযোগী প্রকল্পে কাজ কমলেও ব্যয় বাড়ছে ৩৬৪ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে নতুন করে আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটি আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। প্রকল্পের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, প্রকল্পের তিন খাতে কাজ কমানো হচ্ছে। পাঁচ খাতের কাজ অপরিবর্তিত থাকলেও ১৩৬ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে।

প্রকল্পটিতে সড়ক নির্মাণকাজ তিন কিলোমিটার কমলেও ব্যয় বেড়েছে ১০৪ কোটি টাকা। সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসনের কাজ কমলেও ব্যয় বেড়েছে পাঁচ কোটি টাকা। সাড়ে ১৯ কিলোমিটার জেনারেল সাইট ফ্যাসিলিটিজ এবং মেরামত কাজ কমলেও ব্যয় কমেছে মাত্র ১৬ কোটি টাকা। এখন এক কিলোমিটারের জন্যই ব্যয় করা হচ্ছে ৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ কাজ কমানোর পরও এই তিন খাতে ১২৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 

অন্যদিকে কাজ না বাড়লেও পাঁচ খাতে ১৩৬ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে জেটি নির্মাণ খাতে ৯৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সাইন, সিগন্যাল, গার্ড রেইল, পোস্ট ইত্যাদি খাতে ১১ কোটি ৪৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। ব্রিজ খাতে ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা। বাঁধ নির্মাণে ১০৫ কোটি ৪৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।

এ ছাড়া ডিজাইন ও সুপারভিশনে পরামর্শক খাতে ১৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, কর্মকর্তাদের বেতন ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, এনজিও সার্ভিসে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ব্রিজ নির্মাণে ৪০ কোটি টাকা মূল ডিপিপির তুলনায় কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তির জন্য রিজিভ পেমেন্ট খাতে ২০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, দুই কিলোমিটার কালভার্ট নির্মাণে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, ২২ মিটার রেগুলেটর/ওয়াটার ইনলেট নির্মাণে ৩৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ৫৪ মিটার আরসিসি ব্রিজ নির্মাণে ৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

কাজ কমলেও ব্যয় বাড়ার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সড়ক পরিবহন উইংয়ের যুগ্মসচিব নিখিল কুমার দাস গণমাধ্যমকে বলেন, এটি সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি প্রকল্প। সড়কটি সাগরের পাশে হচ্ছে। সাগরের পাশের মাটি দুর্বল হওয়ায় মাটিকে সাপোর্ট দিয়ে সড়ক তৈরি করতে হচ্ছে। যার ফলে ব্যয় বাড়ছে। এ ছাড়া অন্যান্য যেসব খাতে ব্যয় বাড়ছে সেগুলোও যাচাই-বাছাই করেই দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সঠিকভাবে করা হয়নি। যে কারণে প্রকল্পের জন্য যেসব কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো মূল প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। নতুন করে এসব খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বেশ কিছু অঙ্গে কাজ কমেছে, আবার কিছু অঙ্গে বেড়েছে। আগে যখন ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় সেটি বাজারদরের চেয়ে কম ছিল। আবার কাজের রেট সিডিউলও বেড়েছে। যে ব্যয় দেওয়া হয়েছে সেটা পরিকল্পনা কমিশন অনেক যাচাই-বাছাই করেই দিয়েছে।

প্রকল্পটি প্রস্তাবনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এটি ২০১৫ সালের জুনে ৬০২ কোটি ৩২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে পাঁচ বছরের জন্য একনেক সভায় অনুমোদন পায়। কিন্তু প্রকল্পটি শুরুর এক বছর না গড়াতেই ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধিত অনুমোদন দেয় একনেক। কিন্তু তাতেও সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে সময় বাড়িয়ে দেওয়া ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপরও কাজ শেষ করতে না পারায় কিছু খাত ও ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এতে দেখা যায়, মূল প্রকল্প প্রস্তাবের তুলনায় ৫৫ দশমিক ২৮ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ১ হাজার ২৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়ছে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সময়ও চাওয়া হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ সময় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৯ বছরে।