গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সফল: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:২০ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি আমরা। তাতে সফল হয়েছি। গ্যাসের দাম বাড়ার আভাস দিয়ে তিনি বলেন, গ্যাস যে মূল্যে কেনা হবে সেই মূল্যই গ্রাহককে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে।

সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সরকার জোর দেওয়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ; বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে যদি ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয় তাহলে সেটা কী করে দেব? এর ফলে দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার যে চেষ্টা সেটা করে কিছুটা সফলতা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। 

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে পারে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যারা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী আছেন। এখানেও আছেন তাদের আমি তো স্পষ্ট বলেছি, গ্যাস আমি দিতে পারব, কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসলাম সেই মূল্য যদি আপনারা দেন আমরা গ্যাস দিতে পারব। আমরা বাল্কের যেটুকু বাড়ানোর বাড়িয়েছি। তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায় তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব সেই মূল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। এটা ভুলে যাবেন না ভর্তুকির টাকা তো জনগণেরই। বিদ্যুতের দাম কম থাকলে আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। যারা সাধারণ মানুষ তারা ঠিকমত বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম আয়েশ করবে আর স্বল্প মূল্যে পাবে তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আইএমএফের ঋণের শর্তে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সরকার কীভাবে সামলাবে সেই প্রশ্ন রাখেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ তখনই ঋণ দেয় যখন ওই দেশের ঋণ পরিশোধ করার যোগ্যতা থাকে। আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসে এখনো ভর্তুকি দিচ্ছি। কিন্তু জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। তারপরও সব মানুষ খাদ্য যাতে কম দামে পায় সে ব্যবস্থা করেছি আমরা। যারা কিছুই করতে পারে না তাদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষিতেও ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি, গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হলো পৃথিবীর কোন দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়। কেউ দেয় না। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইংল্যান্ডে ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে এ ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর। আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশ আজ বাড়ালাম আর বাল্কে কিছু গ্যাসের দাম। এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলারে। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য আজ সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে। 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, আমরা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়ে দিয়েছি। যেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। তেল, চিনি, ডাল সীমিত আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে কিনতে পারে। সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। এর থেকে যারা নিম্ন আয়ের তাদের জন্য আমরা ১৫ টাকায় চাল দিচ্ছি। সেই সাথে তেল, ডাল ও চিনিও দেওয়া হচ্ছে। আর একেবারে হতদরিদ্র যারা কিছুই করতে পারে না তাদের বিনা-পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে কষ্টে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রেখে এই ব্যবস্থা করছি। কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি। 

তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের মত জায়গায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। এটা একটা উন্নত দেশের কথা বললাম। পৃথিবীর সব দেশে এই অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থায় পড়েনি।

উল্লেখ্য, সর্দি জ্বরে আক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সংসদে এম আব্দুল লতিফের মৌখিক প্রশ্নের দীর্ঘ ১৭ পৃষ্ঠার জবাব দেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে উত্তর দিতে গিয়ে তিনি কিছুটা অসুস্থ বোধ করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার অস্থির লাগছে’। বসে উত্তর দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে অনুমতি চাইলে স্পিকার তার বক্তব্যের বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য করার অনুরোধ করেন।

এর আগে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টি মুজিবুল হক পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু পাকিস্তান সফরের পর তেহরিক-ই ইনসাফ ক্ষমতাচ্যুত হয়। তিনি বাংলাদেশে আসার পরে অনেকে মনে করেছিল সরকারের কিছু একটা হবে। জানি না তিনি যাওয়ার পরে সরকারকে খুব খুশি খুশি লাগছে। আবার একটি দল মনে হয় খুবই অখুশি। আমরা জাতীয় পার্টি এটাকে ওইভাবে নিচ্ছি না। এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছি। রাজনৈতিকভাবে বর্তমান যে অবস্থাটা মানুষের মাঝে একটি গুঞ্জন আছে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কারণে কিছু একটা যেন হয়। এ ধরনের কিছু আছে কি না? এক পর্যায়ে তার বক্তব্য চলাকালেই মাইক বন্ধ হয়ে যায়।