ঢাকা ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আরএফইডির অভিষেক অনুষ্ঠানে সিইসি

`মিডিয়া ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করে, মিডিয়া ব্লাকআউট হলে রাষ্ট্র বিনষ্ট হবে'

`মিডিয়া ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করে, মিডিয়া ব্লাকআউট হলে রাষ্ট্র বিনষ্ট হবে'

দেশের যে কোন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ভয়ভীতির উর্ধ্বে থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়াল। তিনি বলেছেন, গণমাধ্যম সবসময়ই রাষ্ট্রক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাংবাদিকদের ভয়ভীতির উর্ধ্বে থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান তিনি।

রবিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন বিটে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি-২০২৩ এর পরিচিতি ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

সিইসি বলেন, মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে খুব একটা বেশি কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না। আমরা যদি মিডিয়াকে দেশ থেকে একেবারেই ব্লাকআউট করে দিতে পারি, তাহলে কিন্তু ডিজাস্টার হয়ে যাবে। রাষ্ট্রই বিনষ্ট হয়ে যাবে। মিডিয়া ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করে। মিডিয়া সকলকে চাপে রাখে। মিডিয়ার কারণে আমরা কিন্তু চাপে থাকি। কি বলতে কি বলে ফেলি। কোনটা বলতে হবে, কোনটি গোপন রাখতে হবে। কারণ মিডিয়া তো সব প্রচার করে দেবে। এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর থেকে মিডিয়ার ভূমিকাটা অত্যন্ত কাছ থেকে দেখার আমার সুযোগ হয়েছে। মিডিয়া আমাদের জ্ঞান, মেধা ও দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে। আমরা শুধু বই পড়েই জ্ঞান অর্জন করি তা নয় যোগ করেন তিনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, সামনে সাধারণ নির্বাচন আসছে। এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, ঐতিহাসিক কারণে। সেই নির্বাচনটা ঘনিয়ে আসছে। এখানে আপনাদের ভূমিকা যদি বস্তুনিষ্ঠ হয় তাহলে সকলের মাঝে ইতিবাচক হয়। নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মিডিয়ার কারনে তারাও সচেতন থাকেন। এমনকি যারা শক্তিমান তারাও মিডিয়ার ভূমিকাকে মূল্যায়ন করনে, যদি তারা বিবেকবান হন।

সিইসি বলেন, আপনারা বস্তনিষ্ঠভাবে সংবাদ সংগ্রহ করবেন, পরিবেশন করবেন। আমাদের মধ্যে যদি কোনো বিচ্যুতি ঘটে এবং সেটি যদি আপনাদের দৃষ্টিতে চলে আসে। সেটি কেনো প্রচার করবেন না। আমার বিচ্যুতি ঘটবে কেনো? সেগুলো আপনারা করবেন। আপনারা সেটি করেন বলেই ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য অনেকটা তৈরি হয়।

সিইসি নতুন নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে সিইসি বলেন, আপনারা দায়িত্ব পেয়েছেন, ক্ষমতা না। অনেক সময় রাজনৈতিক নেতারা বলে থাকেন যে আবার ক্ষমতায় এসে দেখিয়ে দেবো। আসলে সেটা দায়িত্ব। কোনো আইনে কিন্তু ক্ষমতার কথা লেখা নাই। আমরা দায়িত্বটাকে ক্ষমতার দৃষ্টিতে দেখতে চাই। ক্ষমতাটা উপভোগ করি। দায়িত্ব পালন করতে খুব কষ্ট লাগে।

শুভেচ্ছা নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব ইসি বিটে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকদের সহযোগিতা ও দায়বদ্ধতামূলক তথ্য পরিবেশনে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গণমাধ্যম ও গণমাধ্যকর্মীরা হলো রাষ্ট্র ও সমাজের দর্পন। নির্বাচন কেন্দ্রীক ঘটনাপ্রবাহ ছাড়া যে কোন বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনে সাংবাদিকদের সেসব বিষয় মাথায় রেখে বিভ্রান্তিমূলক কোন তথ্য পরিবেশন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। এসময় নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কমিশনের কোন ধরনের ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তা ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। একই সাথে ইসি যে কোন কার্যক্রমের গঠনমূলক সমালোচনা এবং তথ্য পরিবেশনের আগে তা যাচাই করে নিতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন।

ইসি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন আরএফইডি’র নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটিকে অভিনন্দ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সচিব মোহাম্মদ জাহাংগীর বলেন, নির্বাচন কমিশনের এবং নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোন ধরনের সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের কমিশন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। নতুন এই কমিটি এই বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠিত রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

নব নির্বাচিত কমিটির সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল ২৪ এর সিনিয়র রিপোর্টার মুকিমুল আহসান হিমেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আরএফইডি নির্বাচন ২০২৩ এর নির্বাচন কমিশনার এবং খবর সংযোগের সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, কালের কণ্ঠের সিটি এডিটর কাজী হাফিজ, আরএফইডি’র বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি ও এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি একরামুল হক সায়েম, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার কাজী জেবেল, প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রিয়াদুল করিমসহ ইসি বিটে দায়িত্বরত সিনিয়র সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত কমিটির পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান ও ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমকে বিশেষ সম্মাননা স্বারক প্রদান করা হয়।

একই সঙ্গে আরএফইডি’র নির্বাচন পরিচালনা কমিটি-২০২৩ এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার আশিষ সৈকত, শেখ নজরুল ইসলাম ও মহিউদ্দিন আলমগীরকেও শুভেচ্ছা স্বারক প্রদান করা হয়। আরএফইডি’র কার্যনির্বাহী বিদায়ী কমিটির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে ১৩ সদস্যের নতুন কমিটিকে বরণ করে নেয়া হয়। বিদায়ী কমিটির সদস্যদের নতুন কমিটির প্রীতি স্বারক প্রদান করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন বিটে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের এই সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি-২০২৩ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সাংবাদিক,নির্বাচন কমিশন,সিইসি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত