মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩, ১৬:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় দেশে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফররত অবস্থায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইয়ালদা হাকিম।

প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলা ওই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ, বিচার বর্হিভূত হ্ত্যা, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, গণতন্ত্র এবং রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, যে বাহিনীর ওপর তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা তাদের পরামর্শেই ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাদের সব প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিল। যেভাবে তারা বাহিনীটাকে তৈরি করেছে, তারা তো সেভাবেই কাজ করছে বলে আমার বিশ্বাস। তাহলে কেন তারা এই নিষেধাজ্ঞা দিল? যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা ভুক্তভোগীদের পক্ষ না নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের পক্ষ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করেছি। সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পরিশ্রম করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতিদিন একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা সশস্ত্র ব্যক্তির হাতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্কুলের শিশুরাও নিহত হচ্ছে। আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাদের নিজেদের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া। তারা নিজেদের লোকজনের ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সরকারপ্রধান বলেন, বন্দুকযুদ্ধে যেসব হত্যার কথা তারা উল্লেখ করেছে, সেগুলো তারা প্রমাণ করতে পারেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেনি। তারা যেসব অভিযোগ করেছে, আমরা তাদের কাছে প্রমাণ চেয়েছিলাম, তারা দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা একটা খেলার মতো। এটা আমার কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। কেন তারা আমাদের দেশের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিল?

শেখ হাসিনা বলেন, আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর খুনিরা দায়মুক্তি পেয়েছিল। এমনকি আমি তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে পারিনি। সেই সময় তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বরং একজন হত্যাকারীকে তারা আশ্রয় দিয়েছে।

বাংলাদেশের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং সংবাদ মাধ্যমের ওপর চাপ তৈরি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না, তারা যেসব অভিযোগ করছে, সেগুলো খুব বেশি প্রমাণ করতে পারেনি। কিছু গ্রুপ বড় বড় সংখ্যায় অভিযোগ করেছে, কিন্তু আমরা যখন তদন্ত করেছি, তখন আমরা পাঁচ ছয়জনের (হত্যা বা গুম) ব্যাপার দেখতে পেয়েছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময়েই মানবাধিকার রক্ষা করে আসছে। মানবাধিকার মানেই শুধু শরীরের নিরাপত্তা নয়। আমার কাছে মানবাধিকার মানে হলো তাদের নিরাপত্তা, খাদ্য, শিক্ষা, ভোট, সুস্থ থাকার অধিকার। সবকিছু আমরা রক্ষা করছি।

বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন এবং ভোটাধিকারের জন্য আমি সারাজীবন ধরে সংগ্রাম করেছি, সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরাই আইন করেছি। আমরা সবসময়েই চেয়েছি যেন মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়। এখন আমাদের ভোটার লিস্ট ছবিসহ তৈরি করেছি, আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বক্সের ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই স্বচ্ছ এবং অবাধ হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা (বিএনপি জোট) শুরুতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি কী হলো? আমাদের ৩০০ আসন আছে। আপনাকে তিনশো প্রার্থী দিতে হবে। তারা মনোনয়ন দিয়েছে প্রায় ৭০০ জনকে। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা নির্বাচন থেকে সরে যায়। তাহলে তারা কীভাবে দাবি করতে পারে যে, নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ হয়নি।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানবাধিকারের কথা বিবেচনা করেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এখন যেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ওই এলাকার পরিবেশ পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। ওখানে গভীর জঙ্গল ছিল, সেটা এখন নেই। তারা এখন একে অপরের সঙ্গে মারামারি করছে। তারা মানব পাচার, মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছি, তারা যাতে এসব মানুষকে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। এটা তাদের দায়িত্ব। তারা এই বোঝা চিরদিনের জন্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। এমনিতেই আমাদের দেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের স্থানীয় মানুষজন অনেক দুঃখকষ্ট ভোগ করছে।