তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনই সবার কাম্য

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ১৯:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান, জাপান, জার্মানি- সবারই আগ্রহের কেন্দ্রে যেন বাংলাদেশ। সবার চাওয়া আগামী নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়। এই চাওয়ার সাথে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাও সমান্তরাল। এমনকি সরকারও বলছে, তারাও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, চায় সব দল তাতে অংশগ্রহণ করুক। সবার চাওয়া অভিন্ন, এখন কাজ হলো সেই চাওয়ার বাস্তবায়ন। 

রাজনৈতিক দলগুলোর নিস্পৃহতার সুযোগে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে বাইরের দেশগুলোর আগ্রহ বেশি মনে হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে এমনিতেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত এক দশকের অর্থনৈতিক সাফল্যও বাংলাদেশের প্রতি অনেকের আগ্রহ বাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশকে ঘিরে এখন আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নানা মেরুকরণ চলছে।

সমস্যা হলো, বিএনপি মনে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের সবার মুখে নিরপেক্ষ নির্বাচন থাকলেও, কারও মুখেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে নেই। বাংলাদেশের মতো অন্য কোনো দেশে রাজনীতিবিদদের মধ্যে এত অবিশ্বাস, সন্দেহ নেই।

আরও একটি নির্বাচন বর্জন বা বয়কট বা প্রতিহত করার সামর্থ্য বিএনপির আছে কি না, সেই প্রশ্নটি এখন সবার মনে।  বিএনপি নামকাওয়াস্তে আন্দোলন করলেও এই আন্দোলনে যে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দাবি আদায় করা যাবে না, সেটা তারা ভালো করেই জানে। বিএনপি যেন অপেক্ষা করছে, কোনো অদৃশ্য শক্তি তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।

গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত যেমন নির্বাচন, তেমনি নির্বাচনকে ফলপ্রসু করে অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন। একটি দেশের সকল রাজনৈতিক দল যখন নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিযোগিতাপুর্ণ  আবহে নির্বাচনে অংশ নেয় তখনই তা সফল নির্বাচন বলে গণ্য হয়। 

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে এদেশের নির্বাচন নিয়ে । তবে পাঁচ সিটি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহন ও ফলাফল বর্তমান সরকারের সাফল্য হিসেবেই দেখা দিয়েছে। 

সকল দলের অংশগ্রহন নিয়ে যে শঙ্কা জাতীয়মনে হানা দিচ্ছিলো তা কেটে গেছে অনেকটাই। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাপা, ইসলামী আন্দোলন ও জাকের পার্টির স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ নির্বাচনকে প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহনযোগ্য করেছে। এমনকি বরিশালে বিএনপি’র ছায়া প্রার্থী হিসেবে ছিলেন বরিশালের প্রয়াত বিএনপিদলীয় মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান ওরফে রূপণ।

মার্কিন উপ-সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার শনিবার রাজধানীতে বাসসের কূটনৈতিক প্রতিবেদক তানজিম আনোয়ারকে বলেন, ‘নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক হবে কি না সে বিষয়ে আমরা কোন মন্তব্য করছি না। আমরা (বাংলাদেশে) নির্বাচনের পরিবেশের ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছি।’

তিনি বলেন,‘ নির্বাচনে তারা অংশ নেবে কি নেবে না রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এবং নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক হতে হবে কিনা আমরা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করছি না।’

বহিবিশ্বের বার্তা অনেকটাই স্পষ্ট এখানে। বাইরের শক্তি শুধু পর্যবেক্ষণ করবে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হচ্ছে কী না। কোনদল অংশগ্রহন করলো, না করলো এই বিষয়ে টাদের মনোযোগ অনেকটাই শিথিল।

সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন, তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বেশ পুরনো, জনগনের সাপোর্টও আছে কিছু। যদিও দলটির ভেতরে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে যে অন্তর্কোন্দলের  কথা প্রায় সবারই জানা। এমন অবস্থায়, আবারো নির্বাচন বর্জন করলে পরবর্তী সময়ে নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে  পড়ার বিষয়টি এখনই ভাবতে হবে বিএনপি’কে।