আদিলুর-এলানের কারাদণ্ড

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব তৈরির চেষ্টা

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:১৮ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মতিঝিলে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে করা মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।  

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নজরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।   

এ রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে দুই পক্ষই। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সাজা বৃদ্ধির জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে। আর আদিলুর রহমানের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, বিচারিক আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন তারা।

ঘটনা প্রবাহ : ২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে রাতে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অধিকার দাবি করেছিল, এ অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছে। তবে সরকারের ঘোষণায় বলা হয়, কেউ মারা যায়নি। 

ওই বছরের ১০ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অধিকারের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন ও ৬১ জনের নাম-ঠিকানা চেয়ে পাঠানো হয়। অধিকার সেই চিঠির জবাবে হতাহতের কোনো তালিকা না দিয়ে সরকারকে জানায়, হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে এ ঘটনা তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই কমিটির কাছে তারা তালিকা হস্তান্তর করবে। এ ঘটনায় ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ডিবির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম। তথ্য বিকৃত করে প্রচারের মামলায় অধিকারের আদিলুর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হন। পরে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ১১ আগস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দুটি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়। একই বছর মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করে আসামিপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি বোরহানউদ্দিন ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। ২০১৭ সালে বিচারপতি ইয়ায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান রাখার নিদের্শ দেন। ২০২১ সালে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হায়দারের কোর্টে মামলার বাদী সিআইডির পরিদর্শক আশরাফুল আলমের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যে দিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। 

অভিযোগপত্রে যা বলা হয়েছে: আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘেœর অপচেষ্টা চালিয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। 

অধিকারের প্রতিবেদন ও নিহতের তালিকায় নানাবিধ অসংগতি রয়েছে। জীবিত চার ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়, পাঁচজন মৃত ব্যক্তির নাম দুইবার উল্লেখ করা হয়, হার্ট অ্যাটাকে মৃত একজনকে হেফাজতের ঘটনায় মৃত হিসেবে দেখানো হয়, অন্য একটি ঘটনায় নিহত ছয় জনের নাম তালিকায় যুক্ত করা হয়, সাত ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ পরিচয় প্রদান করা হয়নি এবং ১১ জন ভুয়া ব্যক্তির নাম তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।

আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব তৈরি করেন, যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। এ ছাড়া তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালান, যা দÐবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।