ঢাকা ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বর্ডার খুলে দিলে আলু ২০-২৫ টাকায় নামবে : ভোক্তার ডিজি

বর্ডার খুলে দিলে আলু ২০-২৫ টাকায় নামবে : ভোক্তার ডিজি

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, বর্ডার খুলে দিলে ভোক্তারা ২০-২৫ টাকার মধ্যে আলু খেতে পারবেন।

তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এখন আমরা বর্ডার খুলে দিলে কৃষক বা আলু ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পরের বছর তারা আলু উৎপাদনে উৎসাহিত হবে না। অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়।

নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে ভোক্তাদের স্বার্থ বজায় রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। আইনের দুর্বলতা ও ভোক্তাদের অসচেতনতার কারণে এসব ব্যবসায়ীকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রয়োজনে এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এ মুহূর্তে দেশে চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি। এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশের ১৭ কোটি মানুষ ভুগছে। এখানে যৌক্তিক কিছু কারণ রয়েছে। আমদানিকৃত পণ্যে ডলারের সমন্বয় করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে। যার প্রভাব সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও পড়ছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয় সেগুলোর উৎপাদন খরচ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসায়ী মহল, করপোরেট গ্রুপ বা যারা এটি নিয়ন্ত্রণ করে, তারা মাঝে মধ্যে একেকটা দ্রব্য নিয়ে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে। এর বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি।

আলুর নিয়ন্ত্রণহীন বাজার নিয়ে ভোক্তার ডিজি বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী আলুর দাম নির্ধারণ করেছেন। খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা ও হিমাগার পর্যায়ে ২৭ টাকায় বিক্রি করতে। এটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে তাদের সুপারিশ অনুসারে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ আলু দেড়-দুই মাস আগেও যখন হিমাগার থেকে ২৩-২৪ টাকায় বিক্রি হত, তখনও তাদের লাভ থাকত। এমন কোনও কারণ উদ্ভব হয়নি বা খরচ বাড়েনি যে, সেটি ৩৬-৪২ টাকা পর্যন্ত হিমাগার থেকে বিক্রি হবে। যার ফলে ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম হাফ সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে গেছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৫৫ টাকাও বিক্রি হয়েছে। এগুলো অস্বাভাবিক আচরণ।

বর্তমানে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও টাকার মান কমে যাওয়ায় দেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে এ ডিজি বলেন, এটি দেশের ১৭ কোটি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক নানা ঘটনার প্রভাব পড়ছে দেশের দ্রব্যমূল্যের ওপর। তবে এর সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা এমন কিছু পণ্য নিয়ে কারসাজি করছে, অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে, যার সঙ্গে এসব আন্তর্জাতিক ঘটনার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, এসব খাদ্যপণ্যের অধিকাংশই উৎপন্ন হয় আমাদের দেশে।

তবে দেশের নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সীমিত লোকবল দিয়ে হলেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, দেশের অনেক জায়গায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নেই। তারপরও সীমিত সামর্থ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। এর সুফলও পড়তে শুরু করেছে বাজারে। পাশাপাশি শুধু আইনের দুর্বলতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। একথা উল্লেখ করে ভোক্তা অধিকারের ডিজি বলেন, নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার ব্যাপারে ভোক্তাদের আরও সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, শুধু আইনের প্রয়োগের মাধ্যমেই জিনিসপত্রের দাম কমানো সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ভোক্তারা সচেতন হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কারসাজির অপচেষ্টা চালাতে থাকবেন।

পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব সিন্ডিকেটকারীকে দমন করতে সরকার প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করবে না বলে উল্লেখ করেন ভোক্তা অধিকারের ডিজি। এ ক্ষেত্রে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার উদাহরণটি টানেন তিনি।

সিন্ডিকেটকারীদের হুঁশিয়ার করে ভোক্তা অধিকারের ডিজি বলেন, এতে ক্ষুদ্র খামারিরা সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বৃহত্তর পর্যায়ে দেশের ভোক্তাদের স্বার্থে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে এবং সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্ডার,আলু,ডিজি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত