“দেশের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাসস্থানের জন্য বহুতল ভবন করতে হবে”

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ২০:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সারাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এতে এক কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এসব মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতে জোনগুলোর আশপাশে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।

সোমবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৩  উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন এসব কথা বলেন। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের থাকার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার তিনি অংশ নিতে পারেননি।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিয়া প্রমুখ।

স্মার্ট শহরের ভিত্তিতে স্মার্ট দেশ গড়তে হবে এমন মন্তব্য করে সচিব বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট নগরী গড়ে তুলতে হবে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণ মানেই ‘স্মার্ট হাউজিং’ নয়। স্মার্ট হাউজিং গড়তে হলে খোলা জায়গা, মাঠ-পার্ক ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, শহরের সব নাগরিক সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এটি গ্রামের জীবন ও অর্থনীতি বদলে দেওয়ার ভাবনা থেকে প্রকল্প হিসেবে হাতে নিয়েছে সরকার। স্বল্প সড়ক যোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগসহ টেলি যোগাযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মতো অনেকগুলি লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা- স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ  করতে হলে আমাদের শহরকে স্মার্ট হতে হবে। স্মার্ট ভবন এবং স্মার্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। নি¤œ, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ আয়ের মানুষের সুবিধার্ত্থে শহরের উন্নয়ন করতে হবে। কারণ একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। শহর উন্নয়নে ভূমিকম্প ও পরিবেশের বিষয়টি সামনে রাখতে হবে। ঢাকা শহরের চারপাশে ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটা মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করছে।
গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী আরো বলেন, অর্থনৈতিকভাবে শহর মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শহরে কাজের সুযোগ বেশি, আয়ের উৎস হিসেবে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। গ্রামের মানুষ শহরমুখী হয়। সুতরাং  শহরকে ‘টেকসই’ করতে হবে। শহরকে টেকসই করাই আমাদের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।   

বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষ্যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে নগর অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন নগরবিশেষজ্ঞরা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সাধারণ মানুষের সবসবাসের জন্য শহর কেন্দ্রিক চাপ কমাতে উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে বিশেষায়িত নগরায়ণ করতে হবে। তাহলে আমাদের নগর অর্থনীতি উন্নতি করবে। সবাই মিলে ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে বলে মনে করেন তারা।
বক্তারা বলেন, আমাদের আজকের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হচ্ছে। ফলে অর্থনীতিও এই দুই শহর কেন্দ্রিক। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ শহর হচ্ছে সবার মূল আকর্ষণের জায়গা। এখানে কর্মসংস্থানসহ নানান সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।  

তারা আরো বলেন, এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ঢাকা শহরের চারপাশে স্যাটেলাইট শহর তৈরি করতে হবে। সেই স্যাটেলাইট শহরগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। তাহলে মূল শহরের ওপর চাপ কমে যাবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাÐ আরো বাড়বে।  আর একটি বিষয় হলো বিশেষায়িত নগরায়ণ করতে হবে। কোন একটি কাজের জন্য কোন একটি নগরের বিশেষত থাকবে। আমাদের সে ধরনের নগর ব্যবস্থায় যেতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয় উপার্জন এই তিন টি বিষয়ের জন্য আলাদা জেলা নির্বাচন করে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে নগর অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে আমাদের নগর অর্থনীতি উন্নতি করবে একই সঙ্গে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। 

বক্তারা বলেন, শহরগুলোকে টেকসই রেজিলেন্টস হিসেবে তৈরি করতে হবে। বিল্ডিং তৈরিতে বøকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পানির ব্যবহারে আরো স্মার্ট হতে হবে। বৃষ্টির পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ভ‚মিকম্পসহনীয় বিল্ডিং তৈরি করতে হবে। সহজ কথায় একটি স্মার্ট ও স্বাস্থ্যসম্মত শহর তৈরি করতে হবে। 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সামর্থের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হলে গ্রামে বা উপজেলা পর্যায়ে কিছু আবাসিক এলাকা তৈরি করতে হবে। এতে করে প্রধানমন্ত্রীর যে প্রতিপাদ্য গ্রাম হবে শহর সেটা বাস্তবায়ন হবে। এসব আবাসিক এলাকায় হাইরেঞ্জ বিল্ডিং করে সাধারণ মানুষ সেখানে উঠবে। আমরা সবাইকে তো প্লট দিতে পারবো না। এজন্য এপার্টমেন্ট করে দিতে হবে। সেসব স্থানে বসবাসের জন্য মানুষকে উৎসাহী করতে হবে। 

তিনি বলেন, শুধু সাধারণ মানুষের বসবাসের কথা চিন্তা করলে হবে না, পরিবেশের কথা মাথায় রাখতে হবে। উন্নত স্যুয়ারেজ সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বের সবদেশেই সে রকম ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের ঢাকা, চট্টগ্রাম অনেক বড় হয়েছে। রাজউক ও গৃহায়ণ কৃর্তৃপক্ষকে অনেক চিন্তা করে হাউজিং প্রকল্প নিতে হবে। তাদের অনেক কাজ আছে। সবাই মিলে ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে।
অন্যদিকে রাজউক চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিয়া বলেন, রাজউকের কাজের গতি বাড়াতে হবে। আমাদের একটি অবস্থানে যেতে হবে। যাতে স্বাস্থ্যসম্মত একটি আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারি। বিল্ডিং এর সাথে মানুষের টিকে থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে পরিবেশের উপর। সুতরাং নগর ও নাগরিকের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে জলবায়ুকে সহায়তা করতে নতুন শহরগুলোকে বনাঞ্চল রক্ষা করতে হবে। 

বিশ্ব বসতি দিবসে এগিয়ে যেতে হবে নতুন আঙ্গিকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহর ও গ্রামের দূরত্ব কমাতে হবে। যাতে শহরের ওপর চাপ কমে। পাশাপাশি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে নগর অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। আমি রাউকের পক্ষ থেকে এবিষয়টি অঙ্গিাার করে যাচ্ছি। আগামীতে আমরা পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে পরিবেশ ঠিক রেখে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবো।
আলোচনায় অংশ নেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মানজুরুর রহমান। হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আশরাফুল আলম, আবাসন অধিদপ্তরের পরিচালক শহিদুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নগর পরিকল্পনাবিদ খুরশিদ জামিল চৌধুরী।