নৌকায় ভোট দিলে দেশে উন্নয়ন হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকায় ভোট দিলে হয় ‘উন্নয়ন’ আর বিএনপি করে ‘দুর্নীতি, মানুষ খুন’। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আবার নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা উন্নয়ন পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজ কর্ণফুলী টানেল পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরও উন্নয়ন পাবেন।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় আনোয়ারা কেইপিজেড মাঠে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনা বেলা পৌনে ১টার দিকে জনসভাস্থলে পৌঁছান। এখানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনী পর্বের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। আনোয়ারা প্রান্তে জনসভার আগে শেখ হাসিনা বোতাম টিপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এসময় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রতিরূপ (রেপ্লিকা) উপহার দেন। টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শুভেচ্ছাবার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে বার্তাটির ইংরেজি ও বাংলা ভার্সন পাঠ করে শোনানো হয়।

বঙ্গবন্ধু টানেল ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট অবমুক্ত করেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হেসেন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।

সমাবেশে শনিবার ভোর থেকেই লোকজন আসতে থাকে। সকাল ১০ টার দিকেই সমাবেশ স্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তপ্ত রোধে প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখতে ও তার বক্তব্য শুনতে সমাবেশস্থলে লাখ লাখ লোক অপেক্ষায় ছিলেন দুপুর পর্যন্ত। সমাবেশ শেষে সুশৃঙ্খলভাবে লোকজন কেইপিজেড মাঠ ত্যাগ করেন।

এর আগে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম পৌঁছে শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ফলক উন্মোচন করেন। টোল দিয়ে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে যান। তিনি নিজেই টোল পরিশোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপি সরকারের পতন ঘটাবে, নানা রকম আন্দোলনের হুমকি দেয়। একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। ওই সমস্ত ভয় ভীতি আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।

১৯৯৬ সালের আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকারের পতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন,খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল বলেই ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশের

মানুষ আন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিল, এটা তাদের মনে রাখা উচিত। এরা ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর, ওরা খুনি। বিএনপি-জামায়াত মানেই হচ্ছে খুনি, হত্যাকারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এই বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা হল বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। বিএনপির কাজ হচ্ছে মানুষ খুন করা, লুটপাট করা, দুর্নীতি করা। খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ এতিমদের না দিয়ে এক ব্যাংকে রেখে দিয়ে সেই অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তার ছেলে তারেক রহমান বিদেশে পালিয়ে আছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আর কোটি কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির সাথে জড়িত, সে কারণে সে সাজাপ্রাপ্ত। একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।

১৯৭৫ সালে বাবা-বা ভাইদের হত্যা এবং এরপর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে খুনিদের রক্ষা করে সংবিধানে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে বিচার না পাওয়া, ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তার ওপর বারবার আক্রমণের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসেছি এমন একটা সময় যখন খুনির দল পাওয়ারে, যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়। বারবার আমার ওপর আক্রমণ। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আমার উপরে গুলি হয়েছিল, ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মারা গিয়েছিল। বারবার বাধা পেয়েছি, নিজের জীবনের কোনো মায়া করিনি। একটি কথাই শুধু ভেবেছি, বাংলাদেশের মানুষ, যে মানুষের জন্য আমার বাবা সারা জীবন কষ্ট করেছেন, যে মানুষের জন্য আমার বাবা জেল-জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন, যে মানুষের জন্য আমার বাবা-মা জীবন দিয়ে গেছেন, সেই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করব।

এ দেশের কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না, ভূমিহীন থাকবে না, রোগে চিকিৎসা পাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে, প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়বে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমার একটাই কাজ দেশের মানুষের কল্যাণ করা।

গত ১৫ বছরে দেশে বিশেষ করে চট্টগ্রামে উন্নয়নের বর্ণনা তুলে ধরে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা উন্নয়ন পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজ কর্ণফুলী টানেল পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরও উন্নয়ন পাবেন। এরপর নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ভোটের প্রতিশ্রæতিও আদায় করেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

তিনি বলেন, আর কোনো চাওয়া-পাওয়া আমার নেই। শুধু আপনাদের দোয়া চাই। আপনারা দোয়া দেবেন। নৌকা মার্কার ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজকে কর্ণফুলী টানেল, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজকে উন্নয়ন। আপনারা আমাদের কাছে ওয়াদা করেন আগামী নির্বাচন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগে আপনারা সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না, হাত তুলে ওয়াদা করেন। এসময় সামেবেশ উপস্থিত নেতা-কর্মীরা সমস্বরে চিৎকার করে তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে আজকে আপনারাই আমার পরিবার, আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার সব, সেভাবেই আমি দেশ পরিচালনা করি। দোয়া করবেন, এই উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে, ওই লুটেরা, সন্ত্রাসীদের হাতে যেন দেশ না পড়ে। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না- জাতির পিতা বলেছিলেন। আমরা করি উন্নয়ন, ওরা করে ধ্বংস।

বিএনপি সম্পর্কে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন দেশের উন্নয়ন করি, ওই বিএনপি জামায়াত কী করে ? ধ্বংস করে। তাদের ইতিহাস আগুন নিয়ে জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার ইতিহাস। ওরা ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর, তারা হত্যায় বিশ্বাসী, আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশ্বাসী। এই বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার পরিবারের হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমান জড়িত। আমার বাবা-মা হত্যার করতে পারতাম না। কারণ, ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমান দিয়েছিল। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে খুনিদেরকে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল। এরা খুন করা ছাড়া আর কিছু জানে না। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে খুন করেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের সঙ্গে তারা জড়িত। গ্রেনেড হামলায় আমাকে হত্যা চেষ্টা করেছে।

‘চট্টগ্রাম সন্ত্রাসের রাজত্ব’ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা শান্তির অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছি।