ডিসেম্বর থেকে বর্ধিত হারে বেতন পাবেন পোশাক শ্রমিকরা

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:১৪ | অনলাইন সংস্করণ

পোশাক শ্রমিকরা ডিসেম্বর থেকেই বর্ধিত হারে বেতন পাবেন বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক (বিজিএমইএ) সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেছেন, ‘ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে। সরকার নতুন যে বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে, আমরা পোশাকশিল্পের সব উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নেব। শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন- নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সমিতি।

লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান বলেন, আমরা সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল আছি, বর্তমানে আন্তর্জাতিক জন্য স্থানীয় পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনেরা কতখানি কষ্টে আছেন। তাদের এই কষ্টে আমরা প্রতিটি উদ্যোক্তা সমব্যথী। একই সঙ্গে এটিও উপলব্ধি করেছি, শিল্প যতো সমস্যাতেই থাকুক না কেন, পোশাক পরিবারের সদস্য, প্রতিটি শ্রমিক ভাই-বোনদের সাধ্য অনুযায়ী ভালো রাখা আমাদের উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিক ভাই-বোনরাই আমাদের এই পোশাক শিল্পের প্রাণ। তারা ভালো থাকলে শিল্প ভালো থাকবে। আর তাই, শিল্পের আকাশে যখন অনিশ্চয়তার কালোমেঘের ঘনঘটা, তখন পোশাকখাতের শ্রমিক ভাই-বোনদের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য, পোশাকখাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড বর্তমানে ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার জন্য কাজ করছে। আমরা আশা করছি, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে এবং সরকার নতুন যে বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে, আমরা পোশাক শিল্পের সকল উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নেবো, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন। নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

ফারুক হাসান বলেন, আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, যখন ন্যূনতম মজুরি কাজ করছে, নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতনকাঠামো ঘোষিত হতে চলেছে, তখন আমাদের শান্ত ও নিরীহ শ্রমিক গোষ্ঠীকে উস্কানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। যদিও নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার আগে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই, যেখানে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কাজ করছে এবং যে বোর্ডে শ্রমিক পক্ষ ও মালিক পক্ষ প্রতিনিধি এবং নিরপেক্ষ সদস্য রয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, গত কয়েকদিন ধরে বহিরাগতদের উস্কানিতে কিছু পোশাক কারখানায় শ্রমিক ভাই-বোন কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন, কারখানা ভাংচুর করছেন, ফলশ্রুতিতে অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হচ্ছেন, কারখানা বন্ধ করে দিতে, যা একান্তভাবে অনভিপ্রেত। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো- বহিরাগতদের উস্কানিতে পোশাক কারখানার সাথে সাথে বেশ কিছু লেদার কারখানা, কেমিকেলের গোডাউন, ফ্যাব্রিক্সের গোডাউন ও দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত ৫ বছরে আমরা শ্রমিক ভাই-বোনদের সাথে নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে শিল্পের রূপান্তর ঘটিয়েছি। আমাদের পোশাক শিল্প এখন বিশ্বের রোল মডেল। আমাদের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় বর্তমানে পোশাক খাতে এলইইডি কারখানার সংখ্যা ২০৩টি। এর মধ্যে প্লাটিনাম রেটেড ৭৩টি, গোল্ড রেটেড ১১৬টি এবং ১০টি সিলভার রেটেড। বিশ্বব্যাপী সবোর্চ্চ রেটেড ১৫টির মধ্যে ১৩টি লিড গ্রিন কারখানাই বাংলাদেশে অবস্থিত। আরও ৫০০টি কারখানা সাটিফিকেশনের জন্য পাইপলাইনে রয়েছে। গত ৫ বছরে শিল্পের উপর ক্রেতাদের আস্থা অনেকখানি বেড়েছে।  

তিনি আরও বলেন, আজকের এই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে শ্রমিক ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনাদের অবদানেই শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছে। এমন কিছু করবেন না যাতে করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, ক্রেতাদের আস্থা বিনষ্ট হয়। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে করে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ক্রেতারা শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা কাম্য নয়।