সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল আকতাব গাওছে জামান আরেফ বিল্লাহ হযরত শাহসূফী আলহাজ্জ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এঁর সম্মোহনের সার্ধশত বছর ব্যাপী কর্মসূচীর সমাপনী অনুষ্ঠান ও জন্মসার্ধশত বার্ষিকী (১৫০তম) উপলক্ষ্যে এক সেমিনার আজ (৩০ ডিসেম্বর) শনিবার পাক রওজা শরীফ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আলহাজ¦ অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক (এমপি) এর সভাপতিত্বে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত আয়োজিত সেমিনারে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনিষ্টিটিউট এর পরিচালক মো: মনিরুল ইসলাম সঞ্চালনার দায়িদ্ব পালন করেন। অতিথিবৃন্দের আসন গ্রহন শেষে পবিত্র কোরআন থেকে তেলায়াত করেন হাফেজ হাবিবুর রহমান, মুর্শিদী পেশ করেন ফিরোজ আলম।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় মিশনের সাধারন সম্পাদক ড.কাজী আলী আজম বীর মুক্তিযোদ্ধা। ‘‘ সার্ধশত বর্ষের এক মহীরূহ” নামক প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রবন্ধকার অধ্যাপক গাজী আজিজুর রহমান (কালীগঞ্জ সরকারি কলেজ)। পরে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা জন্ম সার্ধশত স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে অনলাইন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন আলহাজ্জ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুলহক (এমপি)। সেমিনারের প্রধান আলোচক অধ্যপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান (ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়) বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে প্রবন্ধের ভ’য়সী প্রশংসা করেন। তিনি পীর কেবলা (র.) এর দরবার-মারকাজ থেকে ভক্ত অনুসারীদের অনেক কিছু শিক্ষার আছে বলে জানান।
তিনি বলেন, বৃটিশ শাসনামলে যখন ইংরেজি শিক্ষাকে মুসলমানরা হারাম মনে করতেন সে সময়ে তিনি শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পদে চাকুরীতে যোগদান করেন।
তিনি আরো বলেন, “ফেতনা হচ্ছে মানব হত্যার চেয়ে খারাপ”। আল্লাহতালা আমাদেরকে রাখাল করে পাঠিয়েছেন। তিনি সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাকলুকাতকে অনেক বড় করে দুনিয়ায় প্রেরন করেছেন। আমাদেরকে তা বুঝতে হবে।
সেমিনারের অন্যতম আলোচক এ এফ এম এনামুল হক (মহা পরিচালক, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনিষ্টিটিউট) তার বক্তব্যে পীর কেবলা র. এর কর্মজীবনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের বর্ননা দিয়ে বলেন, তিনি চাকুরী জীবনের অধিকাংশ সময় বরিশাল ও চট্রগ্রাম বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে মুসলিম বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে অন্যতম যুক্তিদাতা ছিলেন। তিনি মাদারজাত ওলী ছিলেন। তিনি হযরত ওয়ারেছ পাক (র.) এর নির্দেশে হযরত গফুর শাহ্ (র.) এর কাছে বায়াত গ্রহন করেন। তার জীবন ও কর্মের উপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার ও গবেষনা হচ্ছে।
সুভেচ্ছা বক্তব্যে ড. আহছানুল হাদী (ফারসি ভাসা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভাল বাসেন, তখন তিনি সে জাতির কাছে একজন ওলীকে পাঠিয়ে দেন। আমরা আল্লাহুর মহান নিয়ামত হিসাবে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) কে পেয়েছি। তিনি ধর্মের মৌলিক শিক্ষা মানুষের মাঝে জাগ্রত করে গিয়েছেন।
সুভেচ্ছা বক্তব্যে ড. মো: আনোয়ারুল ইসলাম (সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) মানব সেবার মাধ্যমে আল্লাহকে পেয়েছেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ (ভাইস চ্যান্সেলর, ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়) সেমিনারে উপস্থিত মহান ওলীর আশেক, অনুসারী, অনুরাগী, ঞ্জানী-গুণি, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনিতিবীদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও এলাকার সুধীজনদের উদ্দেশ্য করে বলেন, খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) ৯০ বছর জীবনে নিজের জন্য না হয়ে সকলের জন্য নিবেদিত ছিলেন। তিনি কাজ করেছেন নৈতিক, আলোকিত, ঞ্জানী, নীতিবান মানুষ তৈরির জন্য। যে কারণে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে, স্মরণ করা হবে কিয়ামত পর্যন্ত। আল্লাহুর ওলীদের প্রেমে যারা অবগাহিত হয় তাদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ থাকে না।
তিনি বলেন, জাগতিক জগতে যেমন প্রশাসনিক স্তর রয়েছে, তেমনি আধ্যান্তিক জগতেও প্রশাসনিক স্তর রয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পাক রওজা শরীফের খাদেম আলহাজ্জ মো: আব্দুর রাজ্জাক, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আমানুল্লাহ আল হাদী, কেন্দ্রীয় মিশনের সহ- সভাপতি আলহাজ্জ মাষ্টার সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। পরে সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে আলহাজ্জ অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক এমপি সেমিনারে আগত সকলকে মিশনের পক্ষ থেকে কৃতঞ্জতা প্রকাশ করেন, তিনি অনুষ্ঠানে প্রবন্ধকার সহ সকল অতিথিদের ঞ্জানগর্ভ আলোচনা পেশ করার জন্য ধন্যবাদ পেশ করেন। পরিশেষে মোনাজত পেশ করেন আলহাজ্জ মাও: আবু সাঈদ (নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদ)।