ঢাকা ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সচেতনতার অভাবে বাড়ছে এইডস, মরছে মানুষ

সচেতনতার অভাবে বাড়ছে এইডস, মরছে মানুষ

জনসচেতনতার অভাবে বাড়ছে এইডসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। এক বছরের ব্যবধানে ১ হাজার ২৭৬ জনের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে। একই সসময়ে এইডসে আক্রান্ত হয়ে আড়াইশ বেশি মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘জাতীয় যক্ষা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে প্রথম ১৯৮৯ সালে এইডস রোগী শনাক্ত হয়। এবারই আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ৩৪ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৯৮৪ জন। আর সাড়ে তিন দশকে মৃত্যু হয়েছে ২০৮৬ জনের। পুরুষ যৌনকর্মীদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া পুরুষ সমকামীদের মধ্যেও এই রোগ ছড়াচ্ছে। যারা ইনজেকশন ব্যবহার করে শিরায় মাদক নেন, সেসব মাদকসেবীরাও এইডসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে বাংলাদেশি ১ হাজার ১১৮ জন, বাকিরা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করা রোহিঙ্গা। বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৪২ জন রোগী ঢাকার। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৪৬, রাজশাহীতে ১৭৫, খুলনায় ১৪১, বরিশালে ৭৯, সিলেটে ৬১, ময়মনসিংহে ৪০ এবং রংপুর জেলায় ৩৪ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেছেন, বাংলাদেশ অনেক রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও এইডস নিয়ন্ত্রণে থমকে আছে। এইডস নির্মূলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় আরও বেশি জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে এই চিকিৎসক রোগটি যাতে সংক্রমিত না হয় সেজন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

স্বfস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এইডস আক্রান্তদের দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। সরকার এইডসের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ওষুধসব সব ধরনের সেবা দিচ্ছে। আমাদের এখানে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসায় রি-ইউজেবল অনেক কিছু ব্যবহার করা হয়। ওই জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে দেখা যাবে একজন নির্দোষ ব্যক্তি যিনি একটি কোলনস্কপি, এন্ডোস্কপি বা যে কোনো এক একটা পরীক্ষা করাতে এসে আক্রান্ত হয়ে গেলেন।

রোগটি বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, বিশ্বে এখন অবাধ যাতায়াত করছে। ফলে সংক্রামক রোগও দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে যায়। সেজন্য প্রত্যেক মানুষকে এইডস সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিরায় মাদক গ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, সমকামী/পুরুষ যৌনকর্মী এবং হিজড়া এই চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বেশি। সাধারণ মানুষের চেয়ে যৌনকর্মীদের এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি ২১ গুণ বেশি। বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ যৌনকর্মী আছেন। তাদের মধ্যে কিশোরীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনের সময় অনেকে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে না। যৌনকর্মীদের কনডম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

অনিরাপদ যৌন মিলনে যারা অভ্যস্ত তাদের ক্ষেত্রে এইচআইভি/এইডস হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। একাধিক যৌনসঙ্গী যাদের থাকে, তাদের সবসময় যৌন মিলনের ক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপদ রাখা সম্ভব হয় না। বাণিজ্যিক যৌন কেন্দ্রগুলোতে প্রত্যেক যৌনকর্মীকে সপ্তাহে প্রচুর খদ্দেরের মনোরঞ্জন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যৌনকর্মীরা সবসময় যৌন মিলনে নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারে না বা প্রতি ক্ষেত্রে কনডম ব্যবহার করতে পারে না। তাই যারা পেশাদার যৌনকর্মীর সাথে নিয়মিত যৌনকর্ম করে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এইচআইভি/এইডস হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী ছাড়া একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন না করাই ভালো। যদি সম্ভব না হয়, তা হলে তাদের প্রতিবার যৌন মিলনে কনডম ব্যবহার করা একান্ত উচিত।

ঢাকা শহরের মাদকসেবীদের মধ্যে একসময় এইডসের সংক্রমণ খুব বেশি দেখা দেয়। শিরায় মাদকসেবীদের ২৭ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়। তবে জাতীয় কর্মসূচি সঠিকভাবে চলছে না বলে মন্তব্য করেছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কর্মসূচি সঠিক থাকলে বা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে শিরায় মাদকসেবীদের মধ্যে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকত। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণের যে কথা শোনা যাচ্ছে, তা বড় ধরনের আশঙ্কার ইঙ্গিত দেয়।

মৃত্যুর বেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য দুইটি কারণ তুলে ধরে চিকিৎসক আহমেদুল কবীর বলেন, আগে হয়তো অজ্ঞাত রোগ হিসেবে মারা যেত। এখন এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ভালো হওয়ায় রোগী শনাক্ত বেশি হচ্ছে, এইডস আক্রান্তের মৃত্যু এইডস হিসেবেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। আরেকটা হতে পারে বাংলাদেশে যারা এইডস আক্রান্ত তাদের বয়স হয়েছে, তাদের অনেকে স্বাভাবিকভাবে মারা যাচ্ছেন। যা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সম্ভব হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত