ঢাকা ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তৃতীয় টার্মিনাল 

আটকে গেছে দ্বিতীয় রানওয়ের নির্মাণকাজ

আটকে গেছে দ্বিতীয় রানওয়ের নির্মাণকাজ

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষের পথে। সবঠিক থাকলে চলতি বছরের অক্টোবরে টার্মিনালটি চালু হবে। তবে, তৃতীয় টার্মিনালে আরেকটি রানওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ বা পরিকল্পনা নেওয়া হলেও আর্থিক সংকলন সম্ভব হয়নি। এতে আটকে গেছে দ্বিতীয় রানওয়ের নির্মাণকাজ।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৃতীয় টার্মিনালে একটি রানওয়ের মাধ্যমে উড়োজাহাজ ও যাত্রীদের ভালো মানের সেবা দেয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে বিকল্প রানওয়ে তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় রানওয়ে তৈরি করতে ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়েছে।

বেবিচকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ডলার সংকটে বিপাকে পড়েছে চার বিমানবন্দরের ছয় মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ। এরমধ্যে তৃতীয় টার্মিনালের দ্বিতীয় রানওয়ের নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব নয়। তবে আগেভাগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে রাখা হয়েছে। আর্থিক সংকটের সমাধান হলেই রানওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) নিয়ম অনুসারে, বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ নিরাপদে ওঠা-নামা করতে দুটি রানওয়ের মধ্যে অন্তত ৭৫০ ফুট দূরত্ব থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সেই জায়গা নেই। সেজন্য একটি রানওয়ে চালু থাকলে অপরটি বন্ধ থাকবে।

দ্বিতীয় রানওয়ে স্বাধীন রানওয়ে হবে না। এটা নির্ভরশীল রানওয়ে। একটি উড়োজাহাজ নামলে আরেকটি উড়োজাহাজ দ্রæত টেকঅফ বা ল্যান্ডিং করতে পারবে। কোনো এয়ারক্রাফটের জরুরি অবতরণ বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে একটি রানওয়ে যদি বন্ধ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে আরেকটি রানওয়ে ব্যবহার করা যাবে। মূলত বর্তমান রানওয়ের বিকল্প হিসেবে এটি প্রস্তুত থাকবে। বেবিচকের অবস্ট্রাকটাল লিমিটেশন সারফেস ম্যাপে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর, ভাসানটেক, নিকুঞ্জ, বারিধারার কিছু এলাকা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এই অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেবিচকের আয়ের বড় খাত উড়োজাহাজ বিমানবন্দর ব্যবহার। সেখানে তৃতীয় টার্মিনালনাল ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের একটি ফ্লোর স্পেস, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি আগমন ইমিগ্রেশন ও তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেছেন, তৃতীয় টার্মিনালের দ্বিতীয় রানওয়ে করতে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। আর্থিক সংকলন নিশ্চিত হলেই কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। তবে, এটি প্রথম রানওয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। প্রথম রানওয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকবে দ্বিতীয় রানওয়ে। এখানে দুটি রানওয়ে একসঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না। কারণ দুটি রানওয়ে একসঙ্গে ব্যবহার করতে হলে ১ হাজার ৩৪ মিটার দূরত্ব থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের তৃতীয় টার্মিনালের দুটি রানওয়ের দূরত্ব কাছাকাছি। সেজন্য প্রথম রানওয়ের বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ করা হবে।

তিনি বলেন, দুবাই বিমানবন্দর একটি রানওয়ে দিয়ে শুরু করেছিল। সেই রানওয়ে দিয়েই বহু বছর উড়োজাহাজ চলাচল করেছে। বিমানবন্দরে তদারকি ভালো থাকায় এটি করা সম্ভব হয়েছে। আমাদেরও তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন খাতে তদারকি ভাল হলে একটি রানওয়ে দিয়েই দেড়গুণ যাত্রী সেবা দেওয়া সম্ভব। এখানে রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

বেবিচকের চেয়ারম্যান আরও বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বর্তমানে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনালে রাজস্ব আয় আরও দ্বিগুণ করতে হবে। কিভাবে আয় বাড়ানো যায় সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে প্রথমত- যত উড়োজাহাজ আসবে ততই আয় বাড়বে, যত যাত্রী বাড়বে ততই আয়, উড়োজাহাজ ল্যাডিং-পার্কিংয়ের মাধ্যমেও আয় বাড়ানো সম্ভব। বিমানবন্দরে অবস্থিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর আয় আসবে।

বেবিচকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বাণিজ্যিকভাবে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আকাশপথে নবদিগন্তের সূচনা হবে। উড়োজাহাজ ও যাত্রী চলাচল বাড়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় কয়েক গুণ বাড়বে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৃতীয় টার্মিনাল বিশ্বমানের। এখানে যাত্রীদের জন্য সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে। ডাবল এন্ট্রি ব্রিজসহ ১২টি বোর্ডিং গেট, যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। বছরে যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ২৪ মিলিয়ন (পুরানো টার্মিনালসহ), যা এখন আট মিলিয়ন এবং বিমানবন্দরটি প্রতি বছর ৫ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডেল করতে পারে। ৩৭টি নতুন এয়ারক্রাফ্ট পার্কিং এরিয়া এবং অ্যাপ্রোন এলাকায় সংযোগকারী দুটি ট্যাক্সিওয়ে থাকছে। নতুন টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূগর্ভস্থ রেলপথ (এমআরটি-৫, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ) ও একটি ভ‚গর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এ ছাড়া আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে আন্ডারগ্রউন্ড টানেলের মাধ্যমে হজযাত্রীরা তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তৃতীয় টার্মিনালে বিদেশি উড়োজাহাজ ওঠা-নামার মাধ্যমে দেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টর বহুদূর এগিয়ে যাবে। তৃতীয় টার্মিনাল চালুর আগেই বেবিচক বিমানবন্দরে সেবার মান ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগাদা দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে এভিয়েশন শিল্পের বাজার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বর্ধিত বাজারের সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের রাজস্ব আয় আরো বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করতে হবে এবং তা নিশ্চিতে সকলকে কাজ করতে হবে। যাত্রীদের সেবার মান ও উড়োজাহাজ ওঠা-নামা বাড়ানোর লক্ষ্যে তৃতীয় টার্মিনালে আরেকটি রানওয়ে তৈরি করা হবে।

রানওয়ে,নির্মাণকাজ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত